ব্যাংক খাতে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। যা গত মার্চে ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা।
সে হিসাবে তিন মাসেই বেড়েছে ১১ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। এর সঙ্গে পুরোনো কিছু মিলে এপ্রিল-জুন পর্যন্ত নতুন করে ঋণখেলাপি হয়েছে ১৫ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে নগদ আদায় হয়েছে মাত্র তিন হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা যা মোট খেলাপির ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন,‘ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তি বা তিরস্কার নেই। উলটো খেলাপিদের পুরস্কৃত করা হয়। সে সুযোগে সস্তায় ঋণ নিয়ে কেউ পাচার করেন। আবার কেউ খাটান পুঁজিবাজারে। কেউ এক খাতে ঋণ নিয়ে অন্য খাতে ব্যবহার করেন। এটা ব্যাংক খাতের জন্য অশনি সংকেত। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড.এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন,‘ ঋণখেলাপিদের একের পর এক ছাড় বা সুবিধা দিলে টাকা ফেরত দেবে না। আরও সুবিধার অপেক্ষায় থাকবে। এটা খুব স্বাভাবিক নিয়ম। কারণ তারা জানে টাকা ফেরত না দিলেও চলবে। তা না হলে এখন তো করোনার প্রভাব আগের মতো নেই। তবুও টাকা দিচ্ছে না কেন? এটাই প্রমাণ করে বারবার সুযোগ-সুবিধা পেলে কেউ টাকা ফেরত দিতে চাইবে না। কারণ ঋণখেলাপিদের কোনো ধরনের শাস্তি বা জরিমানা কিছুই গুনতে হয় না। উলটো পেয়ে যাচ্ছে পুরস্কার। ফলে খেলাপি ঋণ বাড়ছে ।’
জ্যেষ্ঠ ব্যাংকার মোহাম্মদ নূরুল আমিন বলেন, তিন মাসে ১৫ হাজার কোটি টাকার নতুন খেলাপি। বিপরীতে নগদ আদায় মাত্র তিন হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা। এটা ভালো লক্ষণ নয়। মূলত সস্তায় ঋণ পেয়ে কেউ বিদেশে পাচার করেছেন বা এক কাজে ঋণ নিয়ে অন্য কাজ করেছেন। ঋণ ফেরত না দিয়েও বারবার সুবিধা ভোগ করেছেন। তাছাড়া কে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত খেলাপি সে সংজ্ঞা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। এভাবে চলতে থাকলে সেপ্টেম্বর এবং ডিসেম্বর প্রান্তিকে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা। ওই সময় পর্যন্ত বিতরণ করা ঋণস্থিতির যা ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ তিন হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। গত ৬ মাসে বেড়েছে ২১ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। এর বাইরে অবলোপন করা খেলাপি ঋণ রয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকার মতো। মামলাসহ বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা করেও এসব খেলাপি ঋণ আশানুরূপভাবে আদায় করতে পারছে না ব্যাংকগুলো।
ব্যাংকাররা জানান, খেলাপি ঋণ কম দেখানোর উপায় হিসাবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন ছাড় দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশেষ করে করোনার প্রভাব শুরুর পর ২০২০ সালে কেউ কোনো টাকা না দিলেও তাকে খেলাপি করা হয়নি। ২০২১ সালে একজন উদ্যোক্তার যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করার কথা, কেউ ১৫ শতাংশ দিলে তাকে আর খেলাপি করা হয়নি। এর আগে ২০১৯ সালে বিশেষ ব্যবস্থায় মাত্র ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে ১০ বছরের জন্য বিপুল পরিমাণের ঋণ পুনঃতফশিল করা হয়।
এরও আগে ৫০০ কোটি টাকার বড় অঙ্কের ঋণ পুনর্গঠন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিশেষ বিবেচনায় পুনঃতফশিলসহ বিভিন্ন শিথিলতা দেওয়া হয়। বারবার এরকম শিথিলতার কারণে উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ ঋণ পরিশোধের চেয়ে সুবিধা নেওয়ার পেছনে ছুটছেন বেশি। আর এসব ছাড়ের কারণে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের আসল চিত্র প্রতিফলিত হচ্ছে না।
২২ সেপ্টেম্বর ২০২২
এজি
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur