‘চাঁদপুর সিটি অব হিলশা’ বা ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ কিংবা ‘ব্রান্ডিং জেলা চাঁদপুর’-এর দুয়ারে কড়া নাড়ছে দুরন্ত এক অপার সম্ভবনার দুয়ার।
এই সুখবার্তা হলো; এককালের প্রাচীন বাণিজ্যিক জেলা, চাঁদপুর হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের অন্যতম সোনার শহর।
এমনটি জানিয়েছেন চাঁদপুরের সুযোগ্য জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল। স্বপ্ন বিলাসী চাঁদপুরবাসী এরইমধ্যে যাকে ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
গত ১৪ এপ্রিল ১লা বৈশাখ শুক্রবার চাঁদপুর প্রেসক্লাব ঘাটে ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে অনুষ্ঠিত বর্ষবরণ আয়োজনের উদ্বোধনকালে তিনি জেলাবাসীল উদ্দেশ্যে এই বার্তা পৌঁছে দেন।
নববর্ষের প্রথম দিনের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাবর্ষের গত এক বছরে চাঁদপুরের জন্য অনেকগুলো খুশির খবর ছিলো। গত বছর প্রধানমন্ত্রী চাঁদপুরে অনেকগুলো প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছেন। যার মধ্যে অন্যাতম হলো, ১টি মেডিকেল কলেজ, ১টি পুর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, ১টি হাইটেক পার্ক, প্রথম ব্রান্ডিং জেলা, ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর এর লোগো, মতল দক্ষিণে ৩৯৯৯.৬০ একর ভূমির ১টি ইকোনমিক জোন। এছাড়াও হাইমচরে ৪৭০০ একর ভূমির আরো একটি ইকোনমিক জোট অনুমোধনের অপেক্ষায় রয়েছে।
এতে করে চাঁদপুর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। আমরা চাঁদপুরকে ১ নম্বর অর্থনৈতিক অঞ্চল করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এর জন্য যতোটুকু জমির প্রয়োজন ততটুকু আমরা দিতে পারিনি। আমরা যেখানে মাত্র ১০ হাজার একরের মতো ভূমি দিয়েছি সেখানে চট্টগ্রাম দিয়েছে ৩০ হাজার একর ভূমি। এজন্য চট্টগ্রামের পর দেশের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে চাঁদপুর।
তিনি আরো জানান, চাঁদপুর শহরের বড় রেল স্টেশন এলাকার ত্রিনদীর মোহনায় (মোলহেড) পর্যটন এলাকা করার কাজ শুরু হয়েছে। অচিরেই এর কাজ সম্পন্ন হবে। এটি সমাপ্ত হলে এই স্থানটি দেখার জন্য দেশী-বিদেশি পর্যটকরা চাঁদপুরে ছুটে আসবে। এছাড়া ব্রান্ডিং জেলা হিসেবে শহরের ডাকাতিয়া নদীর দুইপাড় প্রায় ৫ ফুট উঁচু করে পাকা করে দেয়া হবে। যাতে করে নদীর দু’পাড়ে বসে দর্শনার্থীরা শান্ত ডাকাতিয়ার সৌন্দর্য দেখতে পারে। এর এই পাড়ে আগামীতে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হবে। এটির জন্য হয়তো বা এবছর সময় লাগবে। আরো বহু স্বপ্ন আমরা দেখেছি তা বাস্তবায়নে আপনাদের সহযোগিতা আমি চাই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনলাইনে ভূমি ব্যবস্থাপনায় সেবাদানে আমরাই প্রথম জেলা, বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বে চাঁদপুর প্রথম ব্রান্ডিং জেলা, বাংলাদেশের কোনো জেলায় এক বছরে এতোগুলো প্রকল্পের অনুমোধন সরকার দেয়নি।
জেলা প্রশাসক আরো জানান, গত বছর ইলিশের ক্ষেত্রে আমরা এতো বেশী কাজ করেছি যে এজন্য ইলিশের উৎপাদন বেড়ে গেছে। যার ফলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবছর ইলিশ রক্ষায় পান্তা ইলিশ খেতে বারণ করেছেন। এবার ইলিশ রক্ষায় আমরা কঠোর অবস্থানে থাকায় নদীতে জাটকা ইলিশে ভরপুর। আমরা আশা করছি আগামী বছর গোটা দেশ এবং গোটা বিশ্বের যারা বাঙালী রয়েছে তারা প্রত্যেকে ইলিশ খেতে পারবে। চাঁদপুর হবে সোনার শহর করার জন্য বিগত ১ বছরের যা অর্জন তা আগামী বছরে যাতে চলমান রাখতে পারি এজন্য সকলেল সহযোগিতা কামনা করি।
প্রসঙ্গত, এক সময়ের ‘গেটওয়ে টু ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’ নামে পরিচিত প্রাচীণ বানিজ্যিক শহর চাঁদপুর সারা বিশ্বে পাটের জন্য বিখ্যাত ছিলো। কালের পরিক্রমায় বিশ্ব এখন চাঁদপুরকে ‘সিটি অব হিলশা’ নামে চিনে।
বর্তমান জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল চাঁদপুরে যোগদানে পর থেকে চাঁদপুরের পর্যটন ও বানিজিক্য সম্ভবনাকে কাজে লাগাবে ব্যাপক কমসূচি হাতে নেন। স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সহযোগিতায় তিনি এরইমধ্যে প্রধামন্ত্রীর কাছ থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের অনুমোধন লাভ করেন। জেলার বুদ্ধিজীবীমহল মনে করেন জেলা প্রশাসকের এই স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন হলে সত্যিকার অথ্যেই চাঁদপুর হবে বাংলাদেশের সোনার শহর। আর এতে করে সিকিকোটি মানুষের জেলা চাঁদপুরে একদিকে যেমনি ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে ঠিক তেমনি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নও সাধিত হবে। আর চাঁদপুর হবে বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন শহর।
প্রতিবেদক- আশিক বিন রহিম
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১: ১৩ পিএম, ১৬ এপ্রিল ২০১৭, রোববার
ডিএইচ