স্কুলছাত্র আজিমকে হত্যার দায় স্বীকার জবানবন্দিতে রনি আক্তার বলেছেন, আজিমকে প্রথমে বালিশ দিয়ে নাক চেপে অজ্ঞান করি। এরপর বঁটি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করি। হত্যার পর বঁটিটি চাদর দিয়ে মুছে নিজের বাসায় নিয়ে যাই। সাবান দিয়ে জামা-কাপড় পরিস্কারের পাশাপাশি সাবান দিয়ে গোসলও করি। এরপর নিজ বাসায় স্বাভাবিকভাবে অবস্থান করি।
চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ থানার শেরশাহ এলাকায় শিশু আজিমকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে এভাবে জবানবন্দি দেন একমাত্র অভিযুক্ত রনি আক্তার (২২)।
বুধবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম ফরিদ আলমের আদালতে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৬৪ ধারায় এ জবানবন্দি প্রদান করেন তিনি। রনি আক্তারের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির মাধ্যমে বায়েজিদ থানা পুলিশ হত্যাকাণ্ডের পর খুনিকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি খুনের রহস্যও উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী মুত্তাকি ইবনু মিনান সাংবাদিকদের জানান, খুনের দায় স্বীকার করে রনি আক্তার বিকেল ৫টার পর মহানগর হাকিম ফরিদ আলমের খাস খামরায় প্রবেশ করে জবানবন্দি প্রদান করে।
সন্ধ্যা ৭টায় সেখান থেকে বের হলে আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। মঙ্গলবার গ্রেপ্তারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসমাবাদে খুনের দায় স্বীকার করার পর বুধবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন অভিযুক্ত নারী রনি আক্তার।
মহানগর হাকিম ফরিদ আলমের আদালতে জবানবন্দিতে তিনি বলেন, আমি রনি আক্তার (২২)। পোশাক শ্রমিক রিপন মিয়ার স্ত্রী। মৌলাভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ থানার ত্রিপুরা বাড়ির আহমদ ছবার মেয়ে। আমি স্বামীর সাথে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার বাংলাবাজারের গুলশান আবাসিক এলাকার দিদার কলোনির তৃতীয় তলায় ১৯ নম্বর কক্ষে ছেলে মিনহাজসহ ৩ হাজার ৪০০ টাকায় ভাড়ায় থাকি। আমার স্বামী রিপন মিয়া অক্সিজেন এলাকার কেডিএস গার্মেন্টে চাকরি করেন। জবানবন্দিতে রনি আক্তার বলেন, প্রতিদিনের মত সকাল ৮টার মধ্যে কলোনির সবাই যার যার মত চাকরি বা কাজে চলে যায়।
আমি দুপুর ও সন্ধ্যার আগে বাসায় একা থাকি। আজিমের বাবা-মাসহ তাদের পরিবারের লোকজন কলোনির বাইরে গেলে তাদের বাসার চাবি আমার কাছে রেখে যেতেন। তিনি বলেন, প্রায় ১৫/২০দিন আগে আজিমদের ঘরের শোকেচের ওপর থেকে তাদের ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন নিয়ে নিই। এরপর মোবাইলটি বন্ধ রাখলেও মাঝেমধ্যে সেটি চালু করি। একটি ছেলে আমার সাথে ওই মোবাইলে ফোন করে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। একদিন আমার মোবাইলে রিং বাজলে সেটি আজিমের বাবা টের পায়। তারা আমার বাসায় গিয়ে মোবাইলটি নিয়ে আসে। মোবাইল চুরির অপরাধে কলোনিতে আমার বিচায় হয়। বিচারে আমাকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তবে আমি তিন হাজার টাকা দিয়ে পরিশোধ করি। রনি আক্তার বলেন, এরপর থেকে আমাকে আর বাসার চাবি দিত না। তারা আমার সাথে কোনো সম্পর্ক রাখেনি। এরপরও আজিম বাইরের ছেলেদের নিয়ে আমাকে মোবাইল চোর বলে ক্ষেপাইত। আমার ছেলেকে সে চোরের ছেলে বলে ডাকতো। আমি এর প্রতিশোধ নিতে গত ৩ জানুয়ারি অজিমকে খুন করার পরিকল্পনা করি। সেই পরিকল্পনা মাফিক গত ৫ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আজিমকে তাদের বাসায় একা পেয়ে তাদের বাসায় ঢুকি।
এসময় আমার বোন শারমিনকে দিয়ে আমার ছেলে মিনহাজকে কলোনির বাইরে ঘুরতে পাঠাই। তিনি বলেন, আজিম যখন স্কুলের ব্যাগ নিয়ে স্কুলে রওনা হচ্ছিল তখন তাকে একটি কলম দিতে বলি। আজিম বলে, সে আমাকে কলম দেবে না। এরপর আমি তার সাথে ঝগড়া বাধাই এবং ধাক্কা দিই। এসময় আজিম আমাকে সিলবারের ছোট কলস দিয়ে আঘাত করতে চাইলে আমি সেটি দিয়ে তাকে আঘাত করি। আঘাতের পর সে অজ্ঞান হয়ে চৌকিতে কাত হয়ে পড়ে। এতে পুরো কলসির পানি পুরো বাসায় হয়ে যায়। রনি আক্তার বলেন, আমি কালো একটি ওড়না দিয়ে তার হাত বাঁধি, তার জিন্সের প্যান্ট দিয়ে পা বাঁধি। এরপর তার গায়ের ওপর উঠে বালিশ দিয়ে তার নাক-মুখ চেপে ধরি। এসময় আজিম একেবারে চুপচাপ হয়ে গেলে তাদের চৌকির নিচ থেকে বঁটি নিয়ে তাকে জবাই করি। সে ছটপট করলে তাকে বঁটি দিয়ে মুখে, পিটে মাথায় আঘাত করি। এরপর মৃত্যু নিশ্চিত হলে বিছানার চাদর দিয়ে বঁটির রক্ত মুছি। রনি আক্তার বলেন, পরে আমি বাসায় এসে রক্তমাখা ওড়না, সেলোয়ার ও জামা সাবান দিয়ে পরিস্কার করি।
নিজেও সাবান দিয়ে গোসল করি। জামা-কাপড় বাসার সামনের দড়িতে শুকাতে দিয়ে বাসায় অবস্থান করি। আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে আমার ছেলে মিনহাজকে নিয়ে আমার বোন শারমিন বাসায় আসে। খুনের বিয়ষটি জানাজানি হলেও আমি স্বাভাবিক থাকি। পরে পুলিশ আমাকে আটক করলে আমি হত্যার দায় স্বীকার করি। গত মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে বায়েজিদ থানার বাংলাবাজারে গুলশান আবাসিক এলাকার দিদার কলোনিতে নিজের বাসার ভেতরে খুন করা হয় আজিম হোসেনকে (১২)। আজিম স্থানীয় শেরশাহ স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র ছিল। তার বাবা তরকারি বিক্রেতা, মা একজন পোশাককর্মী।
নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০১:১৫ পিএম, ০৭ জানুয়ারি ২০১৬, বৃহস্পতিবার
এমআরআর