‘মনে হয় প্রতিটি নিঃশ্বাসে শরীরে থাকা হাজারো স্প্লিন্টার যন্ত্রণা দিচ্ছে। এখনো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে হয়। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে এ যন্ত্রণায় আমার জীবন কাটছে।
দুঃসহ এ যন্ত্রণা প্রতিদিনই আমাকে ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার কথা মনে করিয়ে দেয়।’
সাংবাদিককে কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য নাসিমা ফেরদৌসী।
দুঃসহ সেইদিনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘সারাদেশে জঙ্গি হামলা ও গোপালগঞ্জে পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে সেই সময়ের মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আইভী রহমানের পাশেই ছিলাম। (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তত্কালীন বিরোধী দলীয় নেতা আওয়ামী লীগ সভাপতি) শেখ হাসিনার বক্তব্য শেষ হওয়ার আগেই গ্রেনেড হামলা শুরু হয়। মাত্র এক থেকে দেড় মিনিটে সেখানে ১১টি শক্তিশালী গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।’
এ নারকীয় হামলায় আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হই আমিসহ কমপক্ষে ৫০০ জন।
গ্রেনেড বিস্ফোরণের সময় মনে হচ্ছিল, যেন চারদিকে আগুনের ফুলকি। এরই মধ্যে আমি টের পেয়ে যাই, আমার শরীর জ্বলে-পুড়ে যাচ্ছে। এক পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। শরীর থেকে ঝরছে রক্ত। চারদিকে তাকিয়ে দেখি, সবারই একই অবস্থা। এরপর জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি। এ অবস্থায় মৃত ভেবে আমাকে তোলা হয়েছিল লাশের ট্রাকে। কিন্তু নড়েচড়ে ওঠার পরে পুলিশ আমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। ফেলে রাখা হয়, হাসপাতালের করিডোরে। একজন মানুষ এসে আমার কাছে আত্মীয়-স্বজনের মোবাইল নম্বর চাইলেন। ছেলের মোবাইল নম্বর দেওয়ার পরে তার সঙ্গে যোগোযোগ করলেন। এরপর আর কিছুই মনে নেই আমার, বলে যান নাসিমা।
তিনি আরও বলেন, ‘দুই পা অচল হওয়ায় চার বছর শয্যাশায়ী ছিলাম। চার মাস সারা শরীরে স্পঞ্জ লাগানো ছিল। এরপর হুইল চেয়ার, স্ট্রেচার এবং ওয়াকারের মাধ্যমে হাঁটা শেখানো হয়। লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটতে হয়। এতো যন্ত্রণা, এতো কষ্ট, হাঁটতে কষ্ট, শুতে কষ্ট, এতো অশান্তির মধ্যেও সান্ত্বনা খুঁজে পাই- মারা গেলে পৃথিবীর আলো-বাতাস আর দেখতে পেতাম না। মাঝে মধ্যে আহত অবস্থার ছবি দেখে অবাক ও অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি। গ্রেনেড হামলাকারীদের বিচার দেখে যেতে পারলে মরেও শান্তি পেতাম।’
একজন সংসদ সদস্য হিসেবে নারী উন্নয়নে কীভাবে ভূমিকা রাখছেন জানতে চাইলে নাসিমা ফেরদৌসী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী একজন নারী, আমিও নারী। নারীরা যাতে নির্যাতিত না হয়, সেজন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে সব সময় নারীদের পাশে আছি, থাকবো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তাদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের অধিকার রক্ষা, দুস্থ নারীদের সহযোগিতা করার লক্ষ্যে কাজ করছি।’
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বাদুরতলা গ্রামে নাসিমার জন্ম। সেখানেই কাটে শৈশব আর কৈশোর। মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারিবারিকভাবেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়েছেন তিনি। ১৯৭৯ সালে মহিলা আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে দলীয় কাজ শুরু করেন।
১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর তিনি রাজনীতিতে আরো সক্রিয় হন। এরপর জায়গা করে নেন কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে। রাজপথে লড়াকু সৈনিক হিসেবে আন্দোলন করে মহিলা আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর (উত্তর) শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। (উৎস- বাংলানিউজ)
নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১২:৩৭ পিএম, ২১ আগস্ট ২০১৬, রোববার
ডিএইচ