এক মাসে দশ কেজি ওজন কমানো, এক সপ্তাহে ত্বক ফর্সা করা, ১৫ দিনে চুল লম্বা করা- এসব কথা তো শুনেছেন অনেকেই। কিন্তু নিজেকে সুস্থ করার দিকে মনোযোগ দেন কয়জন মানুষ বলুন তো? বর্তমানে গবেষকরা সুস্বাস্থ্যের বিষয়ে অনেক কিছুই জানেন।
বিজ্ঞানসম্মত উপায়েই এক মাসে জীবনে এমন কিছু পরিবর্তন আনা যায়, যাতে আপনি আগের তুলনায় অনেক সুস্থ হয়ে যাবেন। না, অসুস্থ মানুষ এক ধাক্কায় একদম সুস্থ হয়ে যাবেন না বটে। কিন্তু নিজেকে নিয়ে আপনি অনেক ভালো বোধ করবেন।
১) সবচেয়ে সহজ কাজ
সুস্থ বোধ করার সবচেয়ে সহজ সরল কাজটি হলো ব্যায়াম করা। মাত্র এক মিনিটের ব্যায়ামেও আপনার শরীর অনেকটা উপকার পাবে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে দুই থেকে চার সপ্তাহের মাঝেই আপনি পরিবর্তন বুঝতে পারবেন। কী ধরনের ব্যায়াম করছেন তা মুখ্য নয়। নিয়মিত তা করতে থাকলেই হৃৎপিণ্ড, পেশী ও মস্তিষ্ক সুস্থ হয়ে উঠবে।
২) নোনতা, প্রক্রিয়াজাত খাবার বাদ দিন
শরীর অসুস্থ করে দেয় অতিরিক্ত লবণ। আমরা ইদানিং অনেক প্রক্রিয়াজাত ফাস্টফুড খাই যার মাঝে প্রচুর লবণ থাকে। দীর্ঘদিন এমন খাবার খেতে থাকলে শরীর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লবণে থাকা সোডিয়ামের ক্ষতি কমাতে খেতে পারেন কলা ও অ্যাভোকাডো। এছাড়া প্রক্রিয়াজাত খাবার বাদ দিতে পারলেই আপনি উপকৃত হবেন।
৩) ফাইবার খান
ফাইবারযুক্ত খাবার আপনাকে অনেক বেশি সময় ধরে শক্তি দেয়। চিনি বা অন্যান্য শর্করা তা দেয় না। এছাটা আপনার পেট বেশি সময় ভরা রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সবল রাখতেও ফাইবার কাজ করে। এর জন্য খেতে পারেন হোল গ্রেইন, ফল, বাদাম এবং সবজি।
৪) সাত-আট ঘণ্টার নির্ঝঞ্ঝাট ঘুম
ঘুম কম হলে সহজেই দুর্ঘটনা ঘটে, মানুষ অসুস্থ হয়ে যায় এবং হৃৎপিণ্ডের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এছাড়া এ থেকে ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ে। বেশ কিছুদিন একটানা কম ঘুমালে ওজন বাড়তে পারে। এসব সমস্যা এড়াতে অন্তত আট ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন।
৫) পানি ও কফি পান
প্রাপ্তবয়স্ক একজন মানুষের শরীরের ৬০ শতাংশই পানি। এ কারণে নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান খুবই প্রয়োজনীয়। যথেষ্ট পানি পান করলে ওজন কমানো সহজ হয়। এর পাশাপাশি কফিও পান করতে পারেন। কফি হৃদরোগ, টাইপ টু ডায়াবেটিস এবং কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
৬) ত্বকের যত্নে
ত্বকের যত্নে তিনটি কাজ জরুরী। ময়েশ্চারাইজিং, প্রটেক্টিং এবং এক্সফলিয়েটিং। প্রথমত, নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করে ত্বককে সুরক্ষা দিতে হবে। এর পাশাপাশি এক্সফলিয়েটিং বা স্ক্রাব ব্যবহার করে ত্বক পরিষ্কার করতে হবে। স্ক্রাব ব্যবহারের পর অবশ্যই ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। এর পাশাপাশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সিরামও ব্যবহার করতে পারেন। তবে যাই করেন না কেন, তার উপকার পেতে মাসখানেক লেগে যেতে পারে।
৭) শুধু শরীর নয়, মনকেও ভালো রাখুন
খোলামেলা জায়গায় প্রতি সপ্তাহে দুইবার ৫০ মিনিট করে ব্যায়ামের ফলে মন-মেজাজে দৃশ্যমান উন্নতি হয় বলে দেখা গেছে। এতে মানুষ আগের তুলনায় আশাবাদী হয়ে ওঠেন, দুশ্চিন্তা কম করেন এবং নিজের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসি হন।
৮) ধ্যান করতে পারেন
ধ্যান বা মেডিটেশন নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। তবে তা নিঃসন্দেহে দুশ্চিন্তা কমায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং স্ট্রেস কমায়। সুতরাং শরীর ও মন সুস্থ রাখতে ধ্যান করে দেখতে পারেন আপনিও।
৯) অল্প একটু ঘুম
দুপুরের দিকে অল্প একটু ঘুমিয়ে নিলে অনেকেরই কাজে দক্ষতা বেড়ে যায়। এই ঘুম হতে পারে ২০ মিনিট লম্বা, তার বেশি নয়।
১০) নিজের সাথে বিশ্বস্ত থাকুন
অনেকেই ভাবেন, সবসময় সুখী থাকতে হবে। তারা নিজের রাগ, দুঃখ এবং শোক চেপে রাখেন। তা নিজের কাছেও স্বীকার করতে চান না। এতে কিন্তু ক্ষতিই হয় বেশি। নিজের অনুভূতির ব্যাপারে বিশ্বস্ত থাকলে তা আপনার উপকারেই আসবে।
১১) নিজের সুস্বাস্থ্য কল্পনা করুন
ভাবুন, আপনি কি নিজেকে আরও ফিট দেখতে চান? আরও সুখী দেখতে চান? তার জন্য আপনার কী কাজ করতে হবে? এ বিষয়টি নিয়ে কল্পনা করলে বাস্তব জীবনে তা করাটা আপনার জন্য সহজ হয়ে আসবে।
১২) সম্পর্ক ভালো রাখুন
আপনি নিজের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নতির চেষ্টা করলেও পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক খারাপ হলে কোনো উপায়ই কাজে আসবে না। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য মানুষের প্রিয়জন দরকার হয়। এছাড়া সম্পর্ক ভালো থাকলে ধন-সম্পদের চেয়েও তা বেশি সুখী করতে পারে আপনাকে।
এই অভ্যাসগুলো গড়ে তুলতে পারেন নিজেকে সুখী করে তোলার জন্য। তবে এসব অভ্যাস ধরে রাখাটা জরুরী। অনেকেই বলেন, অভ্যাস গড়ে তুলতে ২১ দিন অনুশীলন করতে হয়। তা ঠিক নয়। এর জন্য দুই সপ্তাহ থেকে শুরু করে কয়েক মাস পর্যন্ত লাগতে পারে। তাই ধৈর্য ধরুন এবং নিজের সুস্থতার জন্য চেষ্টা করতে থাকুন।