রাজনীতি

খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরে কি পেলো নেতাকর্মীরা?

লন্ডন সফর থেকে ফিরলেই পাল্টে যাবে বিএনপি-বলেছিলেন নেতারা। আন্দোলনে ব্যর্থতার কারণে হতাশ কর্মীদের মনেও তৈরি হয়েছিল আশার সঞ্চার। কিন্তু কিছুই হলো না। খালেদা ফিরলেন, কিন্তু নেতা-কর্মীরা পেলেন না বলার মতো কোন নির্দেশনা। ফলে আবারও হতাশার বৃত্তে কর্মী সমর্থকরা।

বিএনপি চেয়ারপারসনের সফরে কোন প্রাপ্তিই নেই এটা অবশ্য মানতে নারাজ বিএনপির বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ।

তিনি বলেন, ‘দিক নির্দেশনা তো আছেই। কিন্তু বিএনপি উদ্যোগ নিলে সরকারের মাথা খারাপ হয়ে যায়। এ কারণে সরকারের কৌশলের উল্টো কৌশল করতে হবে। আর মাঝখানে প্রায় একমাস কেটে গেল পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে। সামনে আবার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন হবে। আশা করি, ফাঁকে ফাঁকে বাকি কাজও শেষ হবে’।

খালেদার লন্ডন সফর শেষে কী পেল বিএনপি এমন এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রত্যাশা ছিল অনেক। প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়তো হয়নি। তবে বিলম্বে হলেও বিএনপি তার অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌছবে।লন্ডন সফর শেষে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলো।নেতাকর্মীরা কিছুটা গা-ঝাড়া দিয়ে উঠেছে।কিছু দিন আগে বিএনপ একটি সমাবেশ করলো।আগামীতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হবে এবং সেখানেও বিএনপি অংশ নেবে।

গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২১ নভেম্বর দুই মাস ১০ দিন চিকিৎসার জন্য লন্ডন ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তবে ওই সফর শুধু চিকিৎসা আর পারিবারিক মিলনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। খালেদার সফরে বিএনপির আগামী দিনের পথচলার কর্মকৌশল ঠিক করার মিশনও ছিল!

কারণ ওই সফরের সার্বিক বিষয় নিয়ে সরব ছিল সরকার। আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। সাধারণ মানুষেরও আগ্রহের কমতি ছিল না। সবার মনে প্রশ্ন ছিল- কী বার্তা নিয়ে ফিরবেন খালেদা জিয়া।

ওই সময় যেসব বিষয় বেশি আলোচিত ছিল তা হলো-আগামী দিনগুলোতে বিএনপির রাজনৈতিক কৌশল কী হবে, মানবতাবিরোধী অপরাধে অধিকাংশ শীর্ষ নেতা অভিযুক্ত হওয়ায় দেশি-বিদেশি চাপে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ত্যাগের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেবে। দল পুনর্গঠনেই কি নতুন কোনো চমক থাকছে, আগামীতে দল পরিচালনায় দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভূমিকাই কী হবে, কাউন্সিল কবে হবে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভারমুক্ত হবেন কি না।

যদিও ওই সফর নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে ঘটা করে কিছু বলা হয়নি। তবে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাওয়া বিএনপি নেতাদের দাবি ছিল- তারেক রহমানের সঙ্গে উপরোক্ত বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। দেশে ফিরে এসব সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নে নেতাদের নিয়ে কাজ করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

এছাড়াও খালেদা জিয়া ২০ দলের বাইরের রাজনৈতিক জোটগুলোকে নিয়ে ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের’ ডাক দেবেন এমনটাও বলা হয়েছিল। কিন্তু ঐক্য না হলেও ইসলামী ঐক্যজোটের বড় অংশের জোট ছাড়ার ঘোষণায় তার নিজের জোটেই ভাঙন ধরেছে। আরও কেউ কেউ বিএনপি ছাড়বেন এমন গুঞ্জনও আছে।

এছাড়া আলোচনায় ছিল- দেশে ফিরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বাইরেও বুদ্ধিজীবী, নানা শ্রেণি-পেশার নেতাদের সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনা শুরু করবেন খালেদা জিয়া। যাতে পরবর্তিতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে এসব পেশাজীবীদের পাশে পাওয়া যায়।

কিন্তু দেখা গেছে, আগের মতোই বিএনপিমনা কারো কারো সঙ্গে খালেদা জিয়া মতবিনিময় করেছেন।

আর অন্য সময়ের মতো এবারও খালেদা জিয়া সরকারকে সংলাপে সবার আহ্বান জানাবেন এমন খবরও ছিল। খবর অনুযায়ী আহ্বান জানালেও সরকার আগের মতোই তা প্রত্যাখ্যান করেছে।

নেতাকর্মীদের ধারণা ছিল- দেশে ফিরে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনেও নতুন নেতৃত্ব আনার ঘোষণা দেবেন খালেদা জিয়া। লন্ডনে এক সংবর্ধনায় খালেদা জিয়ার বক্তব্যেও এমন গুঞ্জনের ইঙ্গিত মিলেছিল।

হ-য-ব-র-ল পুনর্গঠন

খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার পর প্রায় দুইমাস হতে চলছে। অথচ যে মিশন নিয়ে তিনি দেশে ফিরেছেন বলে জানানো হয়েছিল খবরের বাস্তবায়ন নেই বললেই চলে। যদিও এরমধ্যে সম্প্রতি পৌরসভা নির্বাচনের কারণে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর দিয়ে বেশ ধকল গেছে।

গত বছরের ৯ আগস্ট কেন্দ্র থেকে জেলা নেতাদের কাছে কমিটি পুনর্গঠনের তাগিদ দিয়ে চিঠি দেয়া হয়। এরপর পাঁচমাস পার হয়ে গেলেও ৭৫টি সাংগঠনিক জেলা কমিটির মধ্যে পুনর্গঠিত হয়েছে মাত্র ছয়টি। জেলাগুলো হচ্ছে- নীলফামারী, সৈয়দপুর, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাঙামাটি ও কুড়িগ্রাম।

চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশনা, কেন্দ্র থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট নেতাদের বারবার তাগাদা সত্ত্বেও সক্রিয় হচ্ছেন না বেশির ভাগ জেলা কমিটি। আর জেলা কমিটির নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিচ্ছে উপজেলা ও পৌর কমিটি। সবার অজুহাত একটিই, সরকারি দল ও প্রশাসনের প্রতিবন্ধকতা।

অনেকের আবার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কমিটি অনুমোদনে ধীরগতির অভিযোগও আছে।সবকিছু মিলিয়ে হ-য-ব-র-ল তৈরি হয়েছে।

খবর নেই অঙ্গ সংগঠন কমিটির

দলের চেয়ারপারসন দেশে ফিরবেন, নতুন কমিটি দেবেন এমন প্রত্যাশা ছিল ছাত্রদল, যুবদলের নেতাকর্মীদের। পদপ্রত্যাশীদের সঙ্গে তাদের সমর্থকরাও ছিলেন উজ্জীবিত। কিন্তু দুইমাসেরও বেশি সময় চলে গেছে অথচ ছাত্রদলের আংশিক কমিটিই পূরণ হয়নি।

গুঞ্জন ছিল- ১জানুয়ারি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করাসহ বেশ কিছু সাংগঠনিক কমিটির ঘোষণা আসবে। তা থেকেও ২০ দিন চলে গেছে অথচ এখনো কোনো লক্ষণও নেই।

যদিও শোনা যাচ্ছে, কারাবন্দি সংগঠনের সভাপতি রাজিব আহসান মুক্তি পেলেই কমিটি ঘোষণা হবে।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় এক সহ-সভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সাংবাদিকদের মতো আমাদেরও প্রশ্ন কবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে। আর ছোট ভাইদের কাছেও উত্তর দিতে দিতে বিতৃষ্ণা চলে এসেছে। দলের উচিত নেতাকর্মীদের প্রত্যাশার মূল্যায়ন করা।’

ছাত্রদলের এমন অবস্থা হলেও অন্য সংগঠনগুলোর কমিটির চিন্তা আছে কি না তা নিয়ে সবাই অন্ধকারে। যদিও ইতোমধ্যে যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল নিজে থেকেই পদ থেকে সরে যাওয়ার কথা বলেছেন।

এছাড়া দুই বছর হতে চললেও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির ভবিষ্যত কী হবে তা কারো জানা নেই। (ঢাকা টাইমস)

নিউজ ডেস্ক ।।আপডেট : ৩:০৭ এএম, ২২জানুয়ারি ২০১৬, শুক্রবার
ডিএইচ

Share