খালেদা জিয়াকে হত্যার দায় থেকে হাসিনা মুক্তি পাবেন না
প্রয়াত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নানা কায়দায় নিপীড়ন ও মিথ্যা অভিযোগে কারাবন্দি রাখার বিষয় তুলে ধরে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, খালেদা জিয়ার এ মৃত্যুর দায় থেকে ফ্যাসিবাদী হাসিনা কখনোই মুক্তি পেতে পারে না।
বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে খালেদা জিয়ার জানাজার আগে তার জীবনকর্ম তুলে ধরে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে নজরুল ইসলাম এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, দেশনেত্রীর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা, সাংগঠনিক সক্ষমতা এবং দেশের স্বার্থে অনমনীয়তা তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে তাকে ব্যক্তি-শত্রু হিসেবে গণ্য করা শুরু করে। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা, হুসেইন মুহম্মাদ এরশাদ, এমনকি তথাকথিত এক-এগারোর সরকারের সময়েও দেশনেত্রীকে কারারুদ্ধ করা হয়।
‘ফ্যাসিবাদী হাসিনা স্রেফ ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য দেশনেত্রীকে তার শহীদ স্বামীর স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি থেকে উৎখাত করে এবং মিথ্যা অভিযোগে ১৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে। তবুও আধিপত্যবাদী অপরাজনীতির সঙ্গে তিনি আপস করেননি। আপস করেননি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কিংবা ভোটাধিকারের প্রশ্নে। ফলে তিনি হয়ে উঠেছিলেন ফ্যাসিস্ট শাসনবিরোধী লড়াইয়ের অনন্ত অনুপ্রেরণা।’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, আজ দেশনেত্রী সব অভিযোগ থেকে মুক্ত অবস্থায়, লক্ষ কোটি মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছেন। অন্যদিকে শেখ হাসিনাকে রান্না করা খাবার ফেলে ১৫ বছরের আবাস থেকে জনরোষের মুখে পালিয়ে যেতে বাধ্য হতে হয়েছে। তার মাথার ওপর এখন ঝুলছে মৃত্যুদণ্ড। এরশাদকে ভোগ করতে হয়েছে দীর্ঘ কারাবাস এবং এক-এগারোর সরকারের প্রধান ব্যক্তিরাও দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছে।
‘মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার দুই শিশুপুত্রসহ ১৯৭১ সালের ২ জুলাই থেকে বিজয় অর্জিত হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে বন্দী অবস্থায় কাটিয়েছেন। স্বামী স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর ও ফোর্সেস কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন, আর তার ফলস্বরূপ তিনি তার দুই শিশু পুত্রসহ ছিলেন পাকিস্তানিদের হাতে বন্দী। মহান মুক্তিযুদ্ধে এই পরিবারের অবদান এক অনন্য দৃষ্টান্ত।’
নজরুল ইসলাম তার লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, ফ্যাসিবাদী হাসিনার ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার শিকার হয়ে মিথ্যা মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে দুই বছরেরও বেশি সময় অন্ধকার কারাগারে আবদ্ধ থাকার সময় উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে দেশনেত্রী দারুণভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সমগ্র দেশবাসী সাক্ষী হলো- পায়ে হেঁটে যিনি কারাগারে প্রবেশ করেছিলেন; নির্জন কারাগার থেকে তিনি বের হলেন চরম অসুস্থতা নিয়ে।
দেশ-বিদেশের চিকিৎসকদের মতে– পরবর্তীতে গৃহবন্দীত্বের চার বছর তাঁকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ না দেওয়ার কারণেই তার অসুস্থতা বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলশ্রুতিতে অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মানতেই হলো এই অপরাজেয় নেত্রীর। তাই এই মৃত্যুর দায় থেকে ফ্যাসিবাদী হাসিনা কখনো মুক্তি পেতে পারে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, দল মত নির্বিশেষে, সমগ্র দেশবাসীর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও দোয়া নিয়ে তিনি বিদায় নিয়েছেন, পেছনে রেখে গেলেন এক মহীয়সী নারী, এক সংগ্রামী রাজনীতিবিদ এবং এক দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রনায়কের অনন্য কর্মজীবনের উদাহরণ। যা এক অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে ভবিষ্যত প্রজন্মের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের জন্য।
“দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলতেন, ‘দেশের বাইরে আমার কোনো ঠিকানা নেই; বাংলাদেশই হলো আমার ঠিকানা। এই দেশ, এই দেশের মাটি ও মানুষই আমার সব কিছু।’ চিরচেনা এই দেশের মাটিতেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। আজ এই দেশের মাটিতেই, তার শহীদ স্বামীর পাশে তিনি শায়িত হবেন চিরদিনের জন্য।”
খালেদা জিয়ার স্মৃতিচারণ করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, “তিনি বলতেন, ‘বিদেশে আমাদের বন্ধু আছে, কোনো প্রভু নেই’। এই বক্তব্যের মাধ্যমে তার পররাষ্ট্রনীতি ও সার্বভৌমত্ব বিষয়ে দৃঢ় অবস্থানের কথা তুলে ধরেন তিনি।”
খালেদা জিয়ার শাসনামলে গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়ন ও কল্যাণমূলক কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “জনগণের কল্যাণে একের পর এক যুগান্তকারী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন দেশনেত্রী। তার সেই পরিকল্পনা ও নীতির ফলেই বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘ইমার্জিং টাইগার’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।”
বক্তব্যে নজরুল ইসলাম খান খালেদা জিয়ার জন্ম, পারিবারিক পটভূমি, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া এবং পরবর্তী সময়ে রাজনীতিতে উঠে আসার বিভিন্ন দিকও তুলে ধরেন।
নজরুল ইসলাম বলেন, ইনশাআল্লাহ আমরা জনাব তারেক রহমানের নেতৃত্বে এগিয়ে যাবো— দেশনেত্রীর মতই দেশের শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে–জনগণের কল্যাণের লক্ষ্যে স্থির থেকে। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন ।
পরে লাখো জনতার অংশগ্রহণে খালেদা জিয়ার জানাজা সম্পন্ন হয়। এরপর তাকে স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে দাফন করা হয়।
চাঁদপুর টাইমস ডেস্ক/
৩১ ডিসেম্বর ২০২৫