‘খালেদার গুলশান কার্যালয় সরিয়ে বিএনপিকে স্তব্ধ করা যাবে না’

‘খালেদার কার্যালয় সরিয়ে দিয়ে বিএনপিকে স্তব্ধ করা যাবে না। তখন ঢাকাসহ সারা দেশের ঘরে ঘরে দেশনেত্রীর কার্যালয় তৈরি হবে।’ গুলশান থেকে বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয় সরানোর সরকারি উদ্যোগের সমালোচনা করে ২০ জুলাই বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় জাতীয়তাবাদী যুবদল আয়োজিত মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস এসব কথা বলেন।

তিনি সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘দেশবাসীকে এমন কোনো গ্যারান্টি কি দেয়া হবে যে, গুলশান থেকে বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয় সরিয়ে দিলে দেশে আর কোনো ঘটনা (সন্ত্রাসী হামলা) ঘটবে না, কিংবা ক্রসফায়ারেও কেউ খুন হবে না?’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এবং যুগ্ম-মহাসচিব ও যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের ছেলে আরাফাত আব্দুল্লাহ অন্তরের সুস্থতা কামনায় এ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

প্রসঙ্গত, গুলশানের রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে কূটনৈতিক এলাকা থেকে রাজনৈতিক দলের কার্যালয় সরিয়ে দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে সরকার। একইসঙ্গে কূটনৈতিক এলাকায় সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি, সমাবেশ-মিছিল ও ঘেরাও কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর সরকারকে এ বিষয়ে সুপারিশ করেছে। এসব সুপারিশের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য গত সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে।

এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে গুলশান থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় এবং বনানী থেকে এইচএম এরশাদের জাতীয় পার্টির কার্যালয় সরাতে হবে।

অনুষ্ঠানে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘গুলশান ও শোলাকিয়ায় সম্প্রতি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। গুলশানের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয় ওখান থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য চিঠি দিয়েছে। আমি কিছুক্ষণ আগে শুনলাম, এখনো টেলিভিশনে দেখিনি। যদি তাই হয়, তাহলে আমার প্রশ্ন- কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় যে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটলো, তার পরিপ্রেক্ষিতে ওখান থেকে কি বিএনপির অফিস সরিয়ে দেয়া হবে? কিংবা সারাদেশে বিএনপির যে অফিসগুলো আছে, সবগুলোই কি সরিয়ে দেয়া হবে?’

তিনি দাবি করে বলেন, ‘সারা দেশে বিএনপির প্রতিটি কার্যালয়ই হলো দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়। সেটা কোথাও আবাসিক এলাকাতে, আবার কোথাও বাণিজ্যিক এলাকায়। কোনো রাজনৈতিক দলের অফিস কোন এলাকায় থাকবে, সরকার থেকে এমন কোনো দিক-নির্দেশনা কখনো দেয়া হয় নাই। সংসদ থেকেও এমন কোনো আইন পাস হয় নাই।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘গুলশান এলাকায় বেগম খালেদা জিয়া অফিস করেন, এ কথা তো মুখে মুখে ছড়িয়েছে। আমরা সেখানে যাই। তবে যদি কার্যালয় উঠিয়ে দেয়া হয়, তাহলে আমরা দেশনেত্রীর বাড়িতেই যাবো। এটিই হলো স্বাভাবিক। আমরা কি বেগম খালেদা জিয়ার ড্রইং রুমে গিয়ে মিটিং করতে পারি না?’

আব্বাস দাবি করে বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক নেতার বাসভবনে তার অফিস থাকবে, রাজনৈতিক কার্যালয় থাকবে, এটি তো হতে পারে না।’

সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে আব্বাস বলেন, ‘দেশবাসীকে এমন কোনো গ্যারান্টি কি দেয়া হবে যে, গুলশান থেকে বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয় সরিয়ে দিলে দেশে আর কোনো ঘটনা (সন্ত্রাসী হামলা) ঘটবে না, এমনকি ক্রসফায়ারেও কেউ খুন হবে না? গুলশান থেকে দেশনেত্রীর কার্যালয় সরানোর পরেও যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে, তাহলে এর দায়িত্ব কে নেবে?’

মোনাজাতপূর্ব সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ। আলোচনা শেষে রিজভী ও অন্তরের সুস্থতায় কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের সভাপতি হাফেজ আব্দুল মালেক। মোনাজাতে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানেরও সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করা হয়।

এতে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, যুবদলের সহ-সভাপতি আব্দুল খালেক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ক ম মোজাম্মেল হক, যুগ্ম-সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, উত্তরের সহ-সভাপতি কফিল উদ্দিন ভুইয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য গিয়াস উদ্দিন মামুন; ছাত্রদলের সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান, দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী প্রমুখ।

নিউজ ডেস্কঃ

Share