‘খালাম্মা, আপনার ছেলের আত্মত্যাগের জন্য আমরা গর্বিত। আপনার স্বামী দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন। ছেলে দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন। এ ত্যাগের মহিমা আমরা তুলে ধরবো’।
শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলায় নিহত পুলিশ কনস্টেবল জহিরুল ইসলামের মাকে উদ্দেশ্যে মযমনসিংহের এসপি সৈয়দ নুরুল ইসলাম কথোগুলো বলেন।
পুলিশে চাকরির মাত্র ৫ বছরের মাথায় জীবনের ইতি টানতে হয়েছে কনস্টেবল জহিরুল ইসলাম তপুকে। কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গিদের প্রতিরোধ করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন তিনি।
পরিবারের ছোট ছেলেকে হারিয়ে নীরবে অশ্রু ফেলছেন বয়োবৃদ্ধা মা জোবেদা খাতুন (৬৫)।
জঙ্গিদের হাতে জহিরুল প্রাণ দিয়েছিলেন ঈদের দিন গত ০৭ জুলাই। রোববার (০৭ আগস্ট) সকালে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ নুরুল ইসলাম ছুটে যান দেশের জন্য আত্মত্যাগকারী এ পুলিশ সদস্যের বাড়িতে।
এবার আর নীরবে নয়, সবার সামনেই হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলেন জহিরুলের মমতাময়ী মা জোবেদা। অঝোরে কাঁদলেন বড় বোন দিলারা বেগমও (৪৫)।
‘খালাম্মা, আপনার ছেলের আত্মত্যাগের জন্য আমরা গর্বিত। আপনার স্বামী দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন। ছেলে দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন। এ ত্যাগের মহিমা আমরা তুলে ধরবো’।
পুলিশ সুপার জোবেদা খাতুনের হাতে ধরে আরও বললেন, ‘খালাম্মা আপনি কাঁদবেন না। আপনার ছেলে দেশের জন্য লড়াই করে জীবন দিয়েছেন। এ আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না। জঙ্গিদের শেকড় আমরা উৎপাটন করেই ছাড়বো’।
এরপর তিনি জহিরুলের মায়ের হাতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকার অনুদান তুলে দেন।
ময়মনসিংহ জেলা সদর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে ফুলবাড়িয়া উপজেলার দেওখোলা ইউনিয়নের দশমাইল ইছাইল ভাটিপাড়া গ্রামে নিহত পুলিশ কনস্টেবল জহিরুলের বাড়ি। বাড়ির সড়কের পাশেই বীর মু্ক্তিযোদ্ধা বাবা আব্দুল মজিদের কবরের সঙ্গেই হয়েছে তার শেষ শয্যা।
ভাটিপাড়ার এ সড়কটি মাটির। কয়েকদিনের মধ্যেই এখানে হতে যাচ্ছে পাকা সড়ক। আর এটি পাকা সড়কে রূপ নেওয়ার পরই পুলিশ কনস্টেবল জহিরুলের নামে নামকরণ করা হবে- এমন ঘোষণাও দিলেন এসপি নুরুল ইসলাম।
পুলিশ পরিবারের সন্তান ছিলেন জহিরুল। তার বাবা আব্দুল মজিদ পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করেছেন। বড় বোন ফাতেমা খাতুনও রয়েছেন পুলিশে।
বাবা আর বোনের পথেই হেঁটেছিলেন জহিরুল। দেশপ্রেমের চেতনা বুকে নিয়েই যোগ দিয়েছিলেন পুলিশে। জীবন দিয়ে সেই দৃষ্টান্তও রেখে গেছেন।
এসপি সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের জন্য, সন্ত্রাস নির্মূল এবং মানুষের নিরাপত্তার জন্য আত্মত্যাগ করেছেন জহিরুল’।
‘বাংলাদেশ পুলিশ এতে গর্বিত। জহিরুলের সম্মান, স্মৃতি ও মর্যাদা ধরে রাখার জন্য আমরা পদক্ষেপ নেবো’।
গুলশানে বর্বরোচিত জঙ্গি হামলায় নিহত পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার রবিউল ইসলাম ও ওসি সালাহউদ্দিন এবং শোলাকিয়ায় নিহত পুলিশ কনস্টেবল জহিরুল ও আনসারুলের আত্মত্যাগকে অম্লান করে রাখতে স্মৃতিফলক ও ভবনের নামকরণের চেষ্টা চলছে’- জানান এসপি।
দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়েই জঙ্গিদের প্রতিরোধ করা হবে জানিয়ে এসপি বলেন, এদের শেকড় মূলোৎপাটন করা হবে। ময়মনসিংহ থেকে জঙ্গিবাদ মূলোৎপাটন করাই হবে আমার প্রথম কাজ’।
ছেলের আত্নত্যাগে গর্বিত মা জোবেদা খাতুন (৬৫) বাংলানিউজকে বলেন, ‘নিজের জীবন দিয়ে আমার ছেলে লাখ লাখ মানুষের জীবন রক্ষা করেছে। আমার ছেলে তপু আমার অহংকার’।
‘আমার বড় ছেলের জন্য সরকার একটি চাকরির ব্যবস্থা করলে উপকৃত হতাম’।
এ সময় ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) নূরে আলম, আওয়ামী লীগ নেতা ইমদাদুল হক সেলিম, ফুলবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিফাত খান রাজিব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পরে এসপি সৈয়দ নুরুল ইসলাম নিহত পুলিশ কনস্টেবল জহিরুলের কবর জিয়ারত করেন। (উৎস-বাংলানিউজ)
নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১২:৩০ পিএম, ২১ আগস্ট ২০১৬, রোববার
ডিএইচ