কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার নগরপাড় গ্রামের গাবাদীপশু খামারি ফরিদ মিয়া চার বছর ধরে প্রতিপালন করছেন ‘রাজাবাবু’ নামে সাদা-কালো রংঙের আকর্ষণীয় একটি ষাঁড়। বেশ মোটাতাজা হয়েছে রাজাবাবু। সাত ফুট লম্বা ৩০ মণ ওজনের রাজাবাবুকে কোরবানীর হাটে বিক্রির জন্যে প্রস্তুত করেছেন খামারি ফরিদ মিয়া। দাম হাঁকা হয়েছে ৮ লাখ টাকা। আরও কয়েকটি ষাঁড় রয়েছে ফরিদ মিয়ার খামারে। শুধু একটি রাজাবাবু আর একজন ফরিদ মিয়া নয়, ঈদকে সামনে রেখে কুমিল্লা জেলা জুড়ে অন্ততঃ আড়াইল লাখ গাবাদী পশু প্রস্তুত করেছেন কয়েক হাজার খামারী। চলমান লকডাউনের কারণে এসব গাবাদী পশু নিয়ে চরম উদি¦গ্ন খামারীরা।
করোনাকে কেন্দ্র করে চলমান লকডাউনের কারনে বিভিন্ন বাণিজ্যিক কেন্দ্রের মতো বন্ধ রয়েছে কুমিল্লার পশুর হাটগুলোও। কুরবানীর ঈদকে সামনে রেখে অন্যান্য বছর এমন সময় কুমিল্লায় সিটি কর্পোরেশনসহ জেলার ১৭টি উপজেলায় বেশ জমজমাট হয়ে উঠতো পশুর হাটগুলো। এবছর ঈদ ঘনিয়ে এলেও এখন পর্যন্ত সেরকম কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে জেলা প্রাণীসম্পদ বিভাগের সহযোগিতায় কুমিল্লা জেলা প্রশাসন ‘অনলাইন পশুর হাট’ নামে একটি এ্যাপস চালু করলেও এতে তেমন সাড়া মিলছেনা। পশু কেনা-বেচায় হাটের বিকল্প হিসেবে আস্থা রাখতে পারছেন না বিক্রেতারা। ফলে গবাদীপশু বিক্রি এবং যথাযথ মূল্য নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। এ নিয়ে বেশ উৎকন্ঠায় দিন কাটাছে খামারিদের।
করোনা সংক্রমণ রোধে গেলো বছর কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে পশু কেনা বেচার সুবিধার্থে হাটের বিকল্প হিসেবে ভার্চুয়াল হাট চালু করে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন। এবারের কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখেও চলছে লকডাউন। বন্ধ রয়েছে পশুর হাটগুলো। করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে এবছরও ভার্চুয়াল হাটকেই প্রাধান্য দিচ্ছে জেলা প্রশাসন ও জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ। এমনটাই জানালেন,জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ নজরুল ইসলাম।
এদিকে অনেক খামারী জেলা প্রশাসনের এ্যাপস সেবাটির সাথে যুক্ত না হওয়ায় এখনও তেমন সাড়া মিলছেনা ভার্চুয়াল পশুর হটে। অন্যদিকে কোরবানির ঈদের আর মাত্র দুই সপ্তাহ বাকি থাকলেও এখনো পশুর হট গুলো বন্ধ থাকায় খামারিরা গাবাদি পশু বিক্রি এবং যথাযথ মূল্য পাবে কি না এ নিয়ে বেশ চিন্তিত। প্রতিবছর ঈদকে সামনে রেখে কুমিল্লার হাটগুলোতে অবাদেই ভারত এবং মিয়ানমারের পশু চলে আসে। এতে দেশীয় পশুর দাম কমে যায়। সবমিলিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন খামারিরা।
ভার্চুয়াল হাটে ইতিমধ্যেই উল্লেখযোগ্য হারে পশুর নিবন্ধন হয়েছে। এই এ্যাপসে নিবন্ধিত পশু সম্পর্কিত সব ধরণের ডাটা সংরক্ষন রয়েছে। শীঘ্রই এটির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ পশুর তথ্য জানা এবং পছন্দের পশুটি কেনা যাবে। এমনটাই জানালেন জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা।
জেলা প্রাণীসম্পদ বিভাগ জানিয়েছে এবছর কোরবানীতে জেলায় ২ লাখ ৩৭ হাজার পশুর চাহিদার বিপরিতে স্থানীয় ভাবেই জোগান আছে প্রায় ২ লাখ ৩৮ হাজার গবাদী পশু। ঈদকে সামনে রেখে জেলায় ৩৮টি স্থায়ী হাটের পাশাপাশি কোরবানী উপলক্ষে ৩৪০টির মতো অস্থায়ী হাট এখন জেলা প্রশাসনের অনুমতি অপেক্ষায়।
প্রতিবেদক: জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল, ১১ জুলাই ২০২১