জনস্বাস্থ্য গবেষক,যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ডায়রিয়া প্রতিরোধে খাবার স্যালাইন উদ্ভাবনের অন্যতম গবেষক ড.রিচার্ড অ্যালান ক্যাশ মারা গেছেন। ড.ক্যাশ ১৯৪১ সালের ৯ জুন জন্মগ্রহণ করেন। জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হলেও ড.রিচার্ড ক্যাশ বাংলাদেশকে তাঁর দ্বিতীয় বাড়ি বলে মনে করতেন। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন শহরে ২২ অক্টোবর তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে ব্র্যাক।তিনি ছিলেন বাংলাদেশের মানুষের অকৃতিমবন্ধু । মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
এতে বলা হয়,জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হলেও ড.রিচার্ড ক্যাশ বাংলাদেশকে তার দ্বিতীয় বাড়ি (সেকেন্ড হোম) বলে মনে করতেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ ও ব্র্যাকের অকৃত্রিম বন্ধু এবং সুদীর্ঘ সময়ের সহযাত্রী। বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিস্তৃত গবেষণা ও প্রভূত অর্জনের পেছনে তার অসামান্য অবদান রয়েছে।
এদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধের পক্ষে বিদেশে জনমত তৈরি,অর্থ সংগ্রহ এবং স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি আদায়ের ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তাকে ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ প্রদান করা হয়।
সত্তরের দশকে যখন এদেশে প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন শিশু পাঁচ বছর বয়স পেরোনোর আগেই প্রাণঘাতী ডায়রিয়া রোগে মারা যেত, সে সময় তিনি সহ-গবেষক হিসেবে খাবার স্যালাইন ফর্মুলার চূড়ান্ত রূপ দেন। তাদের এ যুগান্তকারী উদ্ভাবন ডায়রিয়া থেকে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর লাখো মানুষের জীবন রক্ষায় সহায়ক হয়েছে।
ড.রিচার্ড ক্যাশ ১৯৬৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি মেডিক্যাল স্কুল থেকে শিক্ষাজীবন শেষ করে চিকিৎসক হিসেবে ঢাকার কলেরা রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে বর্তমান আইসিডিডিআর,বি যোগ দেন। এখানেই তিনি অন্য গবেষকদের সঙ্গে মিলে ডায়রিয়াজনিত রোগ সারানোর ক্ষেত্রে খাওয়ার স্যালাইনের কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা করেন।
১৯৬৮ সালে তারা চাঁদপুরের মতলব হাসপাতালে এ চিকিৎসার প্রয়োগ নিয়ে বিস্তৃতভাবে কাজ করেন। আশির দশকে বাংলাদেশে ডায়রিয়ার এ চিকিৎসা সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য ব্র্যাকের নেতৃত্বে সারা দেশে ‘ওটেপ’ (ওরাল থেরাপি এক্সটেনশন প্রোগ্রাম) কর্মসূচি শুরু হয়।
এ কর্মসূচির আওতায় ব্র্যাক বাড়ি বাড়ি গিয়ে এক কোটি ২৫ লাখ মাকে হাতেকলমে খাবার স্যালাইন তৈরির শিক্ষা দেয়। এর ফলে বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুর হার অর্ধেকে নেমে আসে।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ ড.রিচার্ড ক্যাশের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন,‘জনস্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের জন্য রিচার্ড ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। বিশেষত যেখানে সুযোগ-সুবিধা সীমিত, সেখানে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে একাগ্রচিত্তে,অক্লান্তভাবে কাজ করে গেছেন তিনি।
তার দেখানো পথ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্য খাতের পেশাজীবীদের অনুপ্রাণিত করবে;আমাদের স্মরণ করিয়ে দেবে, খুব সহজ এবং ব্যয় সাশ্রয়ী সমাধানও সারা বিশ্বের স্বাস্থ্যখাতে বিরাট পরিবর্তন আনতে পারে। তার মৃত্যুতে আমি ব্যক্তিগতভাবে একজন মেন্টর ও একজন বন্ধুকে হারিয়েছি, যার পরামর্শ, প্রজ্ঞা ও তীক্ষ্ণ রসবোধ আমি খুব মিস করব।’
ড.রিচার্ড ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির জেমস পি.গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ, দিল্লির পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়াসহ সারাবিশ্বে জনস্বাস্থ্যের বেশকিছু স্কুলে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৬ সালে ব্র্যাক ইউএসএ অফিস প্রতিষ্ঠায় তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল এবং বিগত প্রায় দু দশক ধরে তিনি ছিলেন ব্র্যাক ইউএসএ বোর্ডের সদস্য।
জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী অবদানের জন্য ড.রিচার্ড ক্যাশ পেয়েছেন অনেক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। যার মধ্যে রয়েছে ২০০৬ সালের ‘প্রিন্স মাহিদল পুরস্কার’,যেটি বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে একটি শীর্ষস্থানীয় স্বীকৃতি। ২০১১ সালে পেয়েছেন ‘ফ্রাইজ প্রাইজ ফর ইম্প্রুভিং হেলথ’।
হার্ভার্ড টি এইচ চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথের একজন শিক্ষক হিসেবে ৪০ বছরেরও বেশি সময়ের অ্যাকাডেমিক ক্যারিয়ারে তিনি জনস্বাস্থ্য বিষয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষিত করেছেন। তথ্যসূত্র : বাসস
সম্পাদনায় : আবদুল গনি,
২৫ অক্টোবর ২০২৪
এজি