উজানের ঢলে তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজান নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় লালমনিরহাট জেলায় ৫টি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনিত হয়েছে।
এতে জেলার প্রায় চার লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানিবন্দি পরিবারগুলো চরম দুর্ভোগে পড়েছে। অসহায় পরিবারগুলোর মাঝে দেখা দিয়েছে তীব্র খাবার সঙ্কট।
রোববার (১৩ আগস্ট বিকেলে তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সকালে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ব্যারাজটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ৪৪টি গেট খুলে দেয়া হয়। তিস্তার পানি কমছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানালেও এখনও অনেক এলাকা জলমগ্ন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা পাড়ে মাইকিং করে লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে যাওয়ার জন্য বার বার মাইকিং করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
হাতীবান্ধা উপজেলায় পনিবন্দি পরিবারগুলো মহাসড়কে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি এবং গোখাদ্য সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে। বন্যাকবলিত এলাকায় এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছায়নি।
উপজেলা ফকিরপাড়া ইউনিয়নের রমনীগঞ্জ গ্রামের সফির আলী (৫০) বলেন, আমরা তিন দিন ধরে পানিবন্দি। এখনও কোনো ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা পাইনি। স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে মহাসড়কে তাবু টাঙিয়ে কোনো মতে না খেয়ে বেঁচে আছি।
এদিকে, লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় রেলপথ ভেঙে যাওয়ার কারণে রোববার সকাল থেকে লালমনিরহাট-বুড়িমারী রুটে রেল যোগোযোগ বন্ধ রয়েছে।
এছাড়া লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। পানির প্রবল বেগে ঝুঁকিতে রয়েছে মহাসড়কের একটি ব্রিজ। হাতীবান্ধা ফিলিং স্টেশন সংলগ্ন মহসড়কের ওই ব্রিজটি যেকোন মুহূর্তে ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।
এর মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে অসংখ্য মানুষের ঘরবাড়ি। ঝুঁকিতে রয়েছে আদিতমারী উপজেলা সলেডি স্পার-২ বাঁধটিও। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ মানবেতর জীবন-যাপন করছে। বন্যার্তদের ত্রাণ সহায়তা দিতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন কাজ করলেও ভারি বর্ষণ আর পানির কারণে তা বিঘ্নিত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
গত কয়েকদিন ধরে প্রবল বর্ষণ আর উজানের ঢলে শনিবার গভীর রাতে তিস্তা ব্যারাজের বা দিকের ‘ফ্লাড বাইস’ সড়কটি উপচে উজানে পানি আসতে থাকে।
ফলে পানি এসে হাতীবান্ধা রেল স্টেশনের অদূরে আঘাত হানলে লালমনিরহাট-বুড়িমারী রেলপথের প্রায় ১০ ফিট জায়গা ভেঙে যায়।
ফলে ওই পানি হাতীবান্ধা শহরে ঢুকে পড়েছে। এতে করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, থানা চত্বরের পাশাপাশি স্কুল কলেজে উঠেছে বন্যার পানি।
উপজেলার পারুলিয়া এলাকায় লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের ওপর দিয়ে পানি উপচে পড়েছে। সড়ক রক্ষায় বালুর বস্তা ফেলাতে দেখা গেছে। স্থানীয়রা তাদের গবাদিপশু নিরাপদস্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন।
অপরদিকে পানির তোড়ে রেলপথের নিচের অংশ ভেঙে যাওয়ায় রোববার সকাল থেকে বুড়িমারী রেলওয়ে স্টেশন থেকে পার্বতীপুরগামী কমিউটার এক্সপ্রেস ট্রেনটি আটকা পড়ে আছে। এছাড়া সান্তাহার থেকে ছেড়ে আসা বুড়িমারীগামী ট্রেনটিরও সিডিউল বাতিল করা হয়েছে।
রেলপথ ভেঙে যাওয়ায় সব ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। ফলে বুড়িমারী-লালমনিরহাট-রংপুর-সান্তাহার-ঢাকা রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার নাজমুল ইসলাম বলেন, বন্যায় লালমনিরহাট-বুড়িমারী স্থলবন্দর রেলওয়ে রুটের ৭৮ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে তিনটি স্থানে ভেঙে গেছে। ফলে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক সফিউল আরিফ বলেন, জেলার ৩৫টি ইউনিয়নে প্রায় ৯৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি আছে বলে আমরা ধরণা করছি। এসব পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণের কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ ২ : ০৯ এএম, ১৪ আগস্ট ২০১৭, সোমবার
এইউ