Home / কৃষি ও গবাদি / চাঁদপুরে বিশ্ব খাদ্য দিবসে ইঁদুর নিধন অভিযান উদ্বোধন
AGRI

চাঁদপুরে বিশ্ব খাদ্য দিবসে ইঁদুর নিধন অভিযান উদ্বোধন

চাঁদপুরের চাঁদপুরে বিশ্ব খাদ্য দিবসের আলোচনা ও ইঁদুর নিধন অভিযান উদ্বোধন হয়েছে।  ১৬ অক্টোবর শনিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে খাদ্য দিবসের আলোচনা ও এ অভিযান উদ্বোধন করা হয় ।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,  অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (আইসিটি ও শিক্ষা) রাশেদা বেগম। সভায় সভাপতিত্ব করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো.জালাল উদ্দিন।

 

প্রধান অতিথি বলেন ‘ আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষ্যৎ;ভালো উৎপাদনে ভালো পুষ্টি আর ভালো পরিবেশই উন্নত ’- বিশ্ব খাদ্য দিবস এবং ‘জাতীয় সম্পদ রক্ষার্থে- ইঁদুর মারি এক   সাথে’ -এ প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান ২০২১‘র উদ্বোধন কালে বলেন,‘ইঁদুর একটি সামাজিক সমস্যা সৃষ্টিকারী প্রাণী। তাই এটাকে দমন করা প্রয়োজন। খাদ্য উৎপাদনে কৃষির অবদান অনেক।    এ দেশে একসময় খাদ্য উৎপাদন কম ছিল। বর্তমানে এর উৎপাদন বাড়ছে। এ বাড়ার পেছনে আমাদের কৃষকদের অবদান সবচেয়ে বেশি । ’

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বলেন ,‘ ইঁদুরের নামের মধ্যেই এর বিশেষত্ব রয়েছে । আন্তর্জাতিকভাবেও ইঁদুরকে নিয়ে ভাবনার বিষয় রয়েছে । তাই একে সবসময়ই দমন করার কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে্।’

এ ছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ,বিঅরডিবির উপ-পরিচালক মোকাম্মেল হোসেন ভূঁইয়া, জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো.মুরাদ হাসান, হাজিগঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম ,মতলব দক্ষিণের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা নিজামউদ্দিন, সদর উপজেলার কৃষি অফিসার আবদুল ও কৃষকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আব্দুল লতিফ ।

‘আমাদের কর্ম আমাদের ভবিষ্যৎ;ভালো উৎপাদনে ভালো পুষ্টি আর ভালো পরিবেশেই উন্নত জীবন- এ প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে বক্তাগণ আলোচনায় বলেন ,‘ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কৃষিনীতির ফলে দেশে পর্যায়ক্রমে কৃষি বিপ্লবের সূচনা হয়েছে। সে থেকেই আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়ছে। বঙ্গবন্ধুর দিকনির্দেশনা ও বর্তমান প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শে দেশের কৃষির উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে্।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর আমলে প্রায় ১০ লাখ সার্টিফিকেট মামলা নিষ্পত্তি করেন। ১২ লাখ কৃষককে প্রণোদনা,১০০ কোটি টাকা কৃষি উন্নয়নে বরাদ্দ এবং সমবায়সহ কৃষি উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে নির্দেশনা দেন বলে বক্তাগণ উল্লেখ করেন ।

তারা আরও বলেন, ‘স্বাধীনতা-উত্তর এ দেশের খাদ্য উৎপাদন ছিল ১ কোটি্ । আর বর্তমানে সাড়ে ৪ কোটি মে.টন। আমাদের দেশে প্রায় ৪৫৮ লাখ মে.টন খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে । আমাদের কৃষকরা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। দেশের খাদ্য ও কৃষি বিভাগ একযোগে কাজ করছে। খাদ্য নিরাপত্তায় কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।’

বর্তমানে প্রতিটি ইউনিয়নে ১০০টি বাড়িতে পুষ্টি বাগান গড়ে তোলার কাজ চলছে বলে জানান।

এ ছাড়াও ইঁদুর ইতর প্রাণী। প্রায ৬০ প্রকার রোগসহ মহামারীর সৃষ্টিকারী এ প্রাণীটি কৃষক ও কৃষি খাতের শত্র । তাই ইঁদুর নিধনে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে ।

অনুষ্ঠানে  ডিজিটাল কন্টেন্ট উপস্থাপনা করেন অতিরিক্ত উপ-পরিচালক ড.আনিসুর রহমান ও অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মতলব উত্তরের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা পাবেল খান পাপ্পু ।

এতে জেলার সকল কৃষি কর্মকর্তাগণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাগন ও সকল উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা , কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ও মাঠ পর্যায়ের ব্লক সুপারভাইজারগনসহ বিভিন্ন উপজেলার কৃষকগণ উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। এ দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি কৃষি। আমাদের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৮০ ভাগ এর ৬০ ভাগ জনশক্তি কৃষিতে নিয়োজিত। বর্তমান সরকার কৃষক ও কৃষি বান্ধব সরকার।

কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের একটি বিরাট অংশ ইঁদুর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যে পরিমাণ খাবার খায় তার চেয়ে বেশি নষ্ট করে। আমাদের বাসা বাড়ির আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি, কাপড়-চোপড়, বিছানাপত্র ও কাগজ ইত্যাদি কাটাকুটি করে। এরা আমাদের প্রচুর ক্ষতি করে। ইঁদুর বছরে প্রায় সাত লাখ মে. টন খাদ্য নষ্ট করে থাকে ।

ইঁদুর স্তন্যপায়ী প্রাণী। ক্ষতিকর স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে ইঁদুর মানুষের প্রধান শত্রু। গ্রামীণ মানুষের জীবন ও জীবিকার উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে।

এছাড়াও রেললাইন, জাহাজ, অফিস-আদালত,মাতৃসদন,সেচ-নালায় ইঁদুরের বিচরণ রয়েছে। মানুষ ও পশুপাখির মধ্যে জন্ডিস, টাইফয়েড,চর্মরোগসহ ৬০ প্রকার রোগ জীবাণুর বাহক ও বিস্তারকারী।

বাংলাদেশে আমন ধানের মেীসুমে শতকরা ৫ থেকে ৭ ভাগ,গম ৪ থেকে ৫ ভাগ,গোল আলু ৫-৭ ভাগ,৬ থেকে ৭ ভাগ আনারস নষ্ট করে। গুদামজাত শস্যের বছরে ৭ লাখ মে.টন দানাদার খাদ্যশস্য নষ্ট করে।

ইঁদুরের জীবনচক্রে সম্পর্কে জানা যায়-ইঁদুর স্তন্যপায়ী ও সর্বভুক নিশাচর প্রাণী। ইঁদুর ফসলের জন্য ক্ষতিকর স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে মানুষের প্রধান শত্রু। বাংলাদেশে এগারো প্রজাতির ইঁদুর রয়েছে। এদের সঠিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারা আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশ ১৯৮৩ সাল থেকে ইঁদুর নিধন অভিযান পরিচালনা করে আসছে। ১১ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত এ অভিযান অব্যাহত খাকবে ।

 

আবদুল গনি , ১৬ অক্টোবর ২০২১