সিলেটের কলেজছাত্রী খাদিজা বেগম হত্যাচেষ্টা মামলায় একমাত্র আসামি বদরুল আলমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে বদরুলকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে তাঁকে দুই মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৮ মার্চ) দুপুরে সিলেটের মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আকবর হোসেন মৃধা এই রায় ঘোষণা করেন।
রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন বদরুল। পরে তাঁকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
রায়ে আদালত বলেন, প্রেমের বিষয়টি প্রমাণিত হয়নি। মানুষের মধ্যে প্রেম-ভালোবাসা থাকতেই পারে। কিন্তু তার জন্য এ ধরনের নৃশংসতা, নিষ্ঠুরতা ও ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড কাম্য হতে পারে না।
আদালত বলেন, আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। দেশের জন্য নারীদের অবদান উল্লেখ করার মতো। আজকের এই রায় নারীদের সুরক্ষায় একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
মামলার বাদী খাদিজার চাচা আবদুল কুদ্দুস বলেন, রায়ে তাঁরা সন্তুষ্ট। সবার প্রতি তাঁরা কৃতজ্ঞ। ভবিষ্যতে এই রায় যাতে বহাল থাকে, সেই প্রত্যাশা তাঁর।
আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, ‘আমরা অপরাধীর অপরাধ প্রমাণ করতে পেরেছি। অপরাধীর সর্বোচ্চ সাজা হয়েছে। আজ একটি বিশেষ দিন। এই দিনে এমন রায় নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে ভূমিকা রাখবে।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরী বলেন, তাঁর মক্কেল ন্যায়বিচার পাননি। তাঁরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।
রায় ঘোষণার পর বদরুলকে আদালত থেকে কারাগারে নেওয়ার জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। প্রিজন ভ্যানে ওঠার সময় বদরুল সবার উদ্দেশে জোর গলায় বলেন, তাঁর কিছু হবে না।
গত রোববার মহানগর দায়রা জজ আদালতে এই মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হয়। পরে বিচারক রায় ঘোষণার জন্য ৮ মার্চ তারিখ ধার্য করেন।
মামলাটি ১ মার্চ সিলেটের মুখ্য মহানগর বিচারিক হাকিম আদালত থেকে মহানগর দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তরিত হয়। এর আগে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি মামলার ৩৭ জন সাক্ষীর মধ্যে সবশেষ সাক্ষী হিসেবে খাদিজার সাক্ষ্য নেওয়া হয়।
গত বছরের ৩ অক্টোবর সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র বদরুল। ঘটনার পরপরই জনতা ধাওয়া দিয়ে ছাত্রলীগ নেতা বদরুলকে আটক করে পুলিশে দেয়।
সংকটাপন্ন অবস্থায় খাদিজাকে প্রথমে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও পরে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর খাদিজার অবস্থার উন্নতি হলে গত ২৮ নভেম্বর তাঁকে সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) ভর্তি করা হয়।
সিআরপিতে চিকিৎসা শেষে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সিলেটে নিজ বাড়িতে ফেরেন খাদিজা।
আদালত সূত্র জানায়, খাদিজার ওপর হামলার ঘটনায় তাঁর চাচা আবদুল কুদ্দুস বাদী হয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে বদরুলকে একমাত্র আসামি করে শাহপরান থানায় মামলা করেন।
গত ৫ অক্টোবর বদরুল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
গত ৮ নভেম্বর আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ১৫ নভেম্বর আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। ২৯ নভেম্বর বদরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলার বিচার শুরু হয়। আজ আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণা করা হলো।
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৩: ১৩ এএম, ০৮ মার্চ ২০১৭, বুধবার
ডিএইচ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur