চাঁদপুর

কয়েক সপ্তাহের ব্যাবধানে চাঁদপুরে ১০ শিশু ধর্ষিত

গত কয়েক সপ্তাহর ব্যবদানে চাঁদপুরের বিভিন্নস্থানে ১০ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এদের অনেককেই পুলিশ গ্রেফতার করে আইনের হাতে সোপর্দ করছে।

চাঁদপুর পুলিশ সুপার শামসুন্নাহারসহ সুধীজনরা মনে করছেন সামাজিক ও পারিবারিক অসেচতনার অভাবেই এইসব শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে।

গত ৭ মার্চ মঙ্গলবার দিনেরবেলা চাঁদপুরের বিভিন্নস্থানে বিভিন্ন বয়সের ৪ শিশু ধর্ষিত হয়ে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে এসে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

গত ৫ মার্চ রোববার রাতে মতলব উত্তর উপজেলার নিশ্চিতপুর গ্রামে ধর্ষণ হওয়া ২য় শ্রেণির ছাত্রীকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে দেখতে যান পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার।

এসময় তিনি সাংবাদিকদের প্রিশ্নের জবাবে বলেন বর্তমানে সামাজিক ও পারিবারিক সচেতনতার অভাবের কারণেই এমন শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। দেখা যায় অনেক পরিবারের লোকজন সম্পর্কের কারণে যুবক কিংবা কিশোরদের তাদের ঘরে স্থান দেন। এ সুবাদে অপরাধীরা ওইসব পরিবারের সরলতার সুযোগ নিয়ে শিশুদের সাথে অসামাজিক কাজ করে থাকেন। এছাড়াও শিশুদের সাথে এমন আপত্তিকর কাজ করতে তাদের সহজ উপায় হলো শিশুদের বয়স কম হওয়ায় তাদেরকে নিয়ে খেলাধুলা করলে অথবা ঘুরে বেড়ালে লোকজন তেমন সন্দেহ করেনি। আর এ কারনে তারা অপরাধটি করতে সহজ হয়ে উঠে। তাই আগামীতে এমন ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য দরকার সামাজিক ও পারিবারিক জনসচেতনতা।

তিনি আরো বলেন যেসব অপরাধীরা এসব নির্মম ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের মধ্যে যারা এখনো পলাতক রয়েছে তাদেরকে খুব দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করা হবে। এ ব্যাপারে কোন ছাড় নেই।

গত মাসে চাঁদপুর জেলার বিভিন্নস্থানে ৬ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এসব শিশুদের বয়স ৫ থেকে ১২ বছর বয়সী। এসব ধর্ষণের ঘটনায় দু’উপজেলায় দু’অভিযুক্তকে আটক করা হয়েছে। আর বাকিরা পলাতক ও মামলা চলমান রয়েছে।

গত ৯ ফ্রেব্রুয়ারি থেকে ২৫ ফ্রেব্রুয়ারি শনিবার পর্যন্ত চাঁদপুর জেলা শহরের হাজীগঞ্জ উপজেলা, ফরিদগঞ্জ, কচুয়া, চাঁদপুর সদর উপজেলার বালিয়া পূর্ব শ্রীরামদী, রঘুনাথপুর।

এরমধ্যে গত ১০ ফ্রেব্রুয়ারি শুক্রবার সন্ধ্যায় চাঁদপুর হাজীগঞ্জ উপজেলার ২ নং বাকিলা ইউনিয়নের উত্তর শ্রীপুর গ্রামের মিজি বাড়ির দুবাই প্রবাসী হারুন মিজির পুত্র সালাউদ্দিন মিজি (১৯) নামে যুবকের হাতে ৫ বছর বয়সী এক শিশু ধর্ষিত হয়।

আর এ ঘটনাটি ঘটে ওই গ্রামের খালেক শেখের বাড়িতে।

শিশুর মাতা খাদিজা বেগম জানান শুক্রবার সন্ধ্যায় সালাউদ্দিন মিজি তার শিশু সন্তান বৃষ্টিকে চিপস কিনে দেয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে নিয়ে যান। তার ১ ঘন্টা পর সালাউদ্দিন তাকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে যান। গোপনাঙ্গ থেকে রক্ত বের হতে দেখে ধর্ষনের বিষয়টি বুঝতে পারেন।

ঘটনারদিন স্থানীয়রা অপরাধীকে আটকিয়ে রাখেন। পরে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ ওই এলাকা থেকে সালাউদ্দিনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

গত ১৫ ফ্রেব্রুয়ারি বুধবার সন্ধ্যয় কচুয়া উপজেলার ভূঁইয়ারা গ্রামের মেহের আলী জমাদার বাড়ির আবুল কাশেম জমাদারের ছেলে ইব্রহিম জমাদারের হাতে ৭ বছর বয়সী তয় শ্রেণির এক ছাত্রী ধর্ষিত হয়। এ ঘটনায় ধর্ষনকারী মোঃ ইব্রহিম (১৪) কে আটক করে কচুয়া থানা পুলিশ।

ধর্ষিত শিশুকে চাঁপুর সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্যে ভর্তি করালে তাকে হাসপাতালে দেখতে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান।

ওই ছাত্রীর পিতা জানান তার কন্যা ওই গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩য় শ্রেণিতে পড়ে। বুধবার সন্ধ্যায় একই বাড়ির আবুল কাশেমের ছেলে ইব্রাহিম তার শিশু মেয়েকে খেলার ছলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে বাড়ির পার্শ্ববতী বাগানে নিয়ে ধর্ষণ করে। শিশুটির শরীরের আলামত দেখে ধর্ষণের বিষয়টি বুঝতে পেরে প্রথমে স্থানীয় মেম্বারকে জানিয়ে পরবর্তীতে কচুয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়।

৯ ফ্রেব্রুয়ারি পুরাণবাজার পূর্ব শ্রীরামদী গ্রামের ফরহাদ বেপারীর পুত্র রায়হান বেপারীর হাতে ১২ বছর বয়সী এক শিশু ধর্ষিত হয়। তার পরিবার জানায় ওইদিন রাতে শিশুটি দোকান থেকে সদাই কিনে যাওয়ার পথে রায়হান তার মুখ চাপা দিয়ে কাদির গাজীর মসজিদের গলিতে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। পরে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করা হয় বলে জানা গেছে।

২৪ ফ্রেব্রুয়ারি শুক্রবার ফরিদগঞ্জ উপজেলার চরকুমারী গ্রামে সৈয়দ আহমেদ (৫৫) নামের এক বৃদ্ধের হাতে ধর্ষণের শিকার হন ১২ বছর বয়সী এক শিশু। তার পরিবার সূত্রে জানা যায় ওইদিন দুপুরে শিশুটি বাড়ির পাশ থেকে ছাগল আনতে গেলে বৃদ্ধ সৈয়দ আহমেদ তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। পরিবারের লোকজন তাকে চিকিৎসার জন্য চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসে। এবং ঘটনার পর পরই অভিযুক্ত বৃদ্ধ পলাতক রয়েছে বলে জানাযায়।

এবং ২৫ ফ্রেব্রুয়ারি সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের মধ্য বালিয়া গ্রামের ২ নং ওয়ার্ডে শুক্কুর খান (৩৫) নামের ব্যাক্তির হাতে ধর্ষিত হয় ১৪ বছর বয়সী ৭ম শ্রেণির স্কুল ছাত্রী।

তার বাবা মা জানায় ঘটনার দিন রাতে তারা কেউ বাড়িতে না থাকায় শুক্কুর খান গভীর রাতে তাদের ঘরের বেড়া ভেঙ্গে প্রবেশ করে ওই ছাত্রীর মুখ চেপে ধরে ধর্ষণ করে। এই ঘটনায় তারা চাঁদপুর মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করলে অভিযুক্ত শুক্কুর খান পলাতক রয়েছে বলে তারা জানান।

এছাড়াও ২০ ফ্রেব্রুয়ারি চাঁদপুর সদর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে ১৪ বছর বয়সী ও ২২ ফ্রেব্রুয়ারি ফরিদগঞ্জ উপজেলার বাকরা গ্রামে ৫ বছর বয়সী দু’শিশু ধর্ষণের শিকার হয়ে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিয়েছে বলে জানা গেছে।

এসব তথ্য চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের রেজিস্ট্রি খাতা ও বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা গেছে।

প্রতিবেদক- কবির হোসেন মিজি
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৩: ১৩ এএম, ০৮ মার্চ ২০১৭, বুধবার
ডিএইচ

Share