কক্সবাজারে মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সারাদিন ধরে ভারী বর্ষণে মানুষের জীবনযাত্রা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির পাশাপাশি পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলে দুপুর থেকে পানির তোড়ে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সড়কের দু’পাশের কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এছাড়া বুধবার ভোররাত থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ভারী বর্ষণে পাহাড় থেকে নামা ঢলে প্লাবিত হয়েছে জেলা শহরসহ নিম্নাঞ্চল।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়েছে। ভোর রাতের ৫ ঘন্টার বৃষ্টিতেই বেশি পানি জমেছে বলে ধারণা তাদের। একই সঙ্গে সাগরে জারি করা হয়েছে ৩ নম্বর নৌ-হুশিয়ারি সংকেত। এ কারণে বৃষ্টিপাত আরো কয়েকদিন স্থায়ী হতে পারে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস।
বর্ষণের তোড়ে ডজনের অধিক মুচি দোকানসহ ধসে পড়েছে শহরের ঐতিহ্যবাহী লালদিঘীর পশ্চিম পাড়। তিন থেকে পাঁচ ফুট উঁচুতে প্রবাহিত ড্রেনের পানি বসতবাড়িতে ঢুকে বিপর্যস্ত করেছে জনজীবন। কাদায় চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে অনেক সড়ক উপ-সড়ক। বৃষ্টির পানিতে আটকা পড়েছে কর্মমুখি মানুষ।
এমনটি জানিয়েছেন শহরের রুমালিয়ারছরার বাসিন্দা নুরুল আজিম কনক, বাহারছরার দেলোয়ার হোসেনসহ বেশ কয়েকজন পেশাজীবী।
শহরের পৌর এলাকার নূরপাড়া, পেশকারপাড়া, বাজারঘাটা, হোটেল-মোটেল জোন, টেকপাড়া, পিটিআই স্কুল রোড়, সদর উপজেলা গেইটসহ অনেক এলাকায় পানিতে তলিয়ে গেছে সড়ক-উপসড়ক। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায় এসব এলাকার অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল।
এতে আটকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বন্ধ হয়ে যায় বেশির ভাগ যান বাহন চলাচল। খবর পেয়ে বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে বের হন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদ। তার সঙ্গে যোগ দেন কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী। তারা বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের চেষ্টা চালান।
হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়া পানিতে শহরের বড় বাজারের তরকারি ও মাছ ভেসে গেছে বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। এছাড়া বেশ কয়েকটি চিংড়ি ঘেরও পানিতে তলিয়ে মাছ ভেসে গেছে।
পানির তোড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক। সড়কের দু’পাশের কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। একই অবস্থা চকরিয়া, পেকুয়া, ঈদগাঁও, ঈদগড়, রামু, ডুলাহাজারা, খুটাখালীসহ বেশির ভাগ নিম্নাঞ্চলেও।
এতে দুর্ভোগে পড়েছেন নিচু এলাকার মানুষ। উপকুলীয় অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে প্রবাহিত হচ্ছে সাগরের পানিও। এমনটি জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন।
তিনি বলেন, খবর পেয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের পৃথক পৃথক এলাকা পরিদর্শনে পাঠানো হয়েছে। বড় ধরনের দুর্ভোগ থেকে সাধারণ মানুষকে পরিত্রাণ দিতে তাদেরকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী বলেন, ভারী বর্ষণে মাতামুহুরী নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় পৌরসভার নিমাঞ্চল প্লাবিত হয়। বুধবার ভোর থেকে উপজেলা ও পৌরসভা এলাকার গ্রামীন জনবসতি, সড়ক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদরাসা হাঁটু সমান পানিতে তলিয়ে গেছে।
মহেশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান হোছাইন ইব্রাহিম জানান, বুধবার সকালে উপজেলা হাসপাতালের প্রবেশ মুখে বৃষ্টি ও বাতাসের তোড়ে গাছপালা উপড়ে গেছে। এতে হাসাপাতালে আসা সেবার্থী ও চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা ভোগান্তিতে পড়েন। তবে এতে কোন জানমালের ক্ষতি হয়নি। এটি দ্রুত সরানোর চেষ্টা চলছে।
কক্সবাজার সদরের উপকূলীয় পোকখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক আহমদ জানান, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানির ঢুকে বিশাল এলাকা প্রতিদিন প্লাবিত করছে। এর সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে দুয়েকদিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হওয়ায় বর্ষণের পানি। বাড়ন্ত পানি নিম্ন এলাকার বাড়ি ঘরে প্রবেশ করছে।
এদিকে ভারী বৃষ্টিতে পাহাড় ধ্স বা যেকোন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে স্থানীয়দের রক্ষার্থে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিংসহ সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কাজী আবদুর রহমান।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.সবিবুর রহমান বলেন, ভেঙে যাওয়া ও বিলীন হওয়া বেড়িবাঁধ মেরামতের বরাদ্দ অনুমোদনে তোড়জোড় চলছে। তা পাওয়া গেলে দ্রুত মেরামত কাজে হাত দেয়া হবে।
নিউজ ডেস্ক ।। আপডটে, বাংলাদশে সময় ১০:৪৫ পিএম, ১২ অক্টোবর ২০১৬, বুধবার
এইউ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur