Home / জাতীয় / ক্ষমতায় থেকেও চ্যালেঞ্জের মুখে আওয়ামী লীগ

ক্ষমতায় থেকেও চ্যালেঞ্জের মুখে আওয়ামী লীগ

শাহজাহান শাওন :

পরপর দু’বার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় থেকেও বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠার ৬৬ বছরে পা রাখলেও রাজনীতির অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ এবং বিদেশি চাপের কারণে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সংগঠনটিকে।

বিশেষ করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটকে বাইরে রেখে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ বিতর্কিত হওয়ার পাশাপাশি নিজেরাই নিজেদের চ্যালেঞ্জ বাড়িয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। ওই নির্বাচনের ঘটনায় অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক মহলের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে আওয়ামী লীগ।

সংগঠনের ইতিহাস, ঐতিহ্যের দিকে তাকালে রাজনৈতিক নীতি-আদর্শের প্রশ্নে আওয়ামী লীগের বর্তমান কর্মকাণ্ড হতাশার জন্ম দিয়েছে বলে জানালেন, ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ তার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছে। আর এতে করেই দলটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।’

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠার পর ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬২’র ছাত্র আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭০’র যুগান্তকারী নির্বাচন আর ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা আন্দোলন সবখানেই আওয়ামী লীগের ছিল সরব উপস্থিতি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগই মহান মুক্তিযুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। মুক্তিযুদ্ধ-আওয়ামী লীগ-বঙ্গবন্ধু এক অবিভাজ্য সত্তা।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রথম কাউন্সিলে সভাপতি হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হলে দলটিতে বিপর্যয় নেমে আসে।

১৯৭৬ সালে ঘরোয়া রাজনীতি চালু হলে আওয়ামী লীগ ফের শক্তি অর্জন করতে থাকে। দেশে ফেরার আগেই ১৯৮১ সালে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ১৯৮৩ সালে আবারো আঘাত আসে দলটির ওপর। তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে দলের একটি অংশ দলত্যাগ করে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে বাকশাল গঠন করে। এ সময় সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৯৮৭ সালের কাউন্সিলে শেখ হাসিনা সভাপতি ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

এরপর ২০০৮ সালে বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠাতা নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ২৪ জুলাই আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে সভাপতি পদে বহাল রেখে নতুন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয় সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে। সেই কমিটিই এখন পর্যন্ত বহাল রয়েছে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে গণতান্ত্রিক ধারায় রাজনীতি করে আসলেও সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে দলটি। বিশেষ করে ২০১৪ সালের জাতীয় ও উপজেলা নির্বাচনে দলটি নানা সমালোচনার মুখে পড়ে। সম্প্রতি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও ব্যাপক কারচুপির আশ্রয় নেয় আওয়ামী লীগ, এমনটিই প্রকাশ পেয়েছে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমগুলোতে।

ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর ভর করে রাজনীতি করলেও ধর্মীয় সংগঠনগুলোর সঙ্গে জোট করে আওয়ামী লীগ বিতর্কের জন্ম দিতে থাকে। হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদের প্রতিষ্ঠা দেয়া ‘রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম’ আওয়ামী লীগও বহাল রেখেছে পঞ্চদশ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে। ’৭২-এর সংবিধানে ফেরার কথা বললেও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেই রাজনীতি করছে আওয়ামী লীগ।

শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়ন, প্রযুক্তির ব্যবহার, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, যুদ্ধাপরাধের বিচারের মতো ঘটনায় দৃশ্যত সফল হলেও বিডিআর হত্যাকাণ্ড, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, গুম, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, বিরোধীদের দমনপীড়ন, অনিয়ম-দুর্নীতি সরকারে অর্জনগুলো ম্লান করে দেয়।

অনেকেই মনে করেন, সরকার এবং দল এখন একাকার। আর এ কারণেই জনআস্থায় ধ্বস নেমেছে আওয়ামী লীগের। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে সাংগঠনিক কাঠামো থাকলেও এই মুহূর্তে জনসমর্থন ফিরিয়ে আনাই হচ্ছে আওয়ামী লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগের অবদান অপরিসীম। দলটির দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে। তবে দলটি আদর্শ থেকে বিচ্যুতও হয়েছে বারবার। এখন তেমন কোনো আদর্শ আছে বলে মনে হয় না। দলের মধ্যে গণতন্ত্র নেই, নির্বাচন নেই, নেতাদের সঙ্গে কর্মীদের যোগাযোগ নেই। সরকারের সঙ্গে একেবারে মিশে গিয়েই আওয়ামী লীগ তার সর্বনাশ করেছে।’

তিনি বলেন, ‘২০০৭ সালে আওয়ামী লীগ কট্টরপন্থি ইসলামী দল খেলাফত মজলিশের সঙ্গে ৫ দফা চুক্তি করেছিল, যা কোনোভাবেই দলের আদর্শের সঙ্গে যায় না। ধর্মকে আশ্রয় করে আওয়ামী লীগের এই রাজনীতি আমাদের হতাশ করেছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ার দোষ আওয়ামী লীগকে না দিলেও ওই নির্বাচনের বিতর্ককে তো অস্বীকার করা যায় না। দেশের বাইরে থেকে সরকারকে নানা চাপ সইতে হচ্ছে, যা দল হিসেবে আওয়ামী লীগকেও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।’

আপডেট:   বাংলাদেশ সময়  ০৫:৫৩ অপরাহ্ন, ২২ জুন ২০১৫, সোমবার

চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/ এমআরআর/২০১৫

চাঁদপুর টাইমস ডট কম-এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না