চাঁদপুরের কচুয়ায় যত্রতত্র ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে বেসরকারি ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে নেই স্বাস্থ্য বিভাগের সঠিক লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। নেই অনুমোদনের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র। আছে শুধু দীর্ঘদিন আগে আবেদন করার রিসিভ কপি।
অনেকেরই জানা নেই, স্বাস্থ্য বিভাগের লাইসেন্স করতে কি কি কাগজপত্র লাগে। এই পরিস্থিতিতে মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে কাক্সিক্ষত স্বাস্থ্যসেবা থেকে। অপরদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। কোনো কোনো ক্লিনিক গুলো সরকারী নির্দেশনা অমান্য করে সাধারন মানুসের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন গলা কাটা ফি।
কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকলল্পনা অফিসের তথ্যমতে, কচুয়ায় ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে ৩৬টি। বেসরকারী হাসপাতালগুলো হচ্ছে, কচুয়া টাওয়ার হসপিটাল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কচুয়া ট্রমা এন্ড জেনারেল হাসপাতাল, কচুয়া সিটি হসপিটাল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মর্ডান হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কেয়ার ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক এন্ড হসপিটাল, হাসিমপুর ফয়জুন্নেছা দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র ও হাসপাতাল, রহিমানগর বেসিক এইড এন্ড হসপিটাল, সাচার সেন্ট্রাল হসপিটাল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, রেঁনেসা মেডিকেল সেন্টার, সাচার ডায়মন্ড হসপিটাল এন্ড ল্যাব, কচুয়া শ্যামলী খান মেটারনিটি ক্লিনিক, কচুয়া মক্কা হাসপাতাল, সাচার পপুলার হাসপাতাল এন্ড ডায়াগণস্টিক সেন্টার, কচুয়া মনোয়ারা ডিজিটাল ডায়াগণস্টিক সেন্টার এন্ড হাসপাতাল, কচুয়া সিটি প্যাথ ডিজিটাল ল্যাব এন্ড ডায়াগণস্টিক সেন্টার, আব্দুল হাই ডেন্টাল কেয়ার, আব্দুল হাই ডিজিটাল মেডিকেল সেন্টার, মহিউদ্দিন ডিজিটাল মেডিকেল সেন্টার, সান ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, রহিমানগর ডক্টরস এন্ড ডায়াগণস্টিক সেন্টার, রহিমানগর নিউ মেডিলাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কচুয়া নিউ লাইফ ডায়াগপস্টিক কনসালটেশন সেন্টার, কচুয়া আনোয়ারা মেমোরিয়ার ডিজিটাল ডায়াগণস্টিক সেন্টার, কচুয়া ইসলামিয়া মেডিকেল সেন্টার, কচুয়া কাজী মেডিকেল সেন্টার, কচুয়া মা মনি প্যাথলজী, তিশা ডিজিটাল মেডিকেল সেন্টার, রহিমানগর আলিফ মেডিকেল সেন্টার, রহিমানগর ইনসাফ মেডিকেল সেন্টার, রহিমানগর চক্ষু হাসপাতাল, বিতারা ডায়মন্ড ল্যাব এন্ড ডায়াগণস্টিক সেন্টার, বাইছারা মিয়া মেডিকেল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগণস্টিক সেন্টার, মেঘাদাইর কেয়ার প্যাথলজি, পালাখাল সেবা ডায়াগণস্টিক সেন্টার, পালাখাল শাপলা ডায়াগণস্টিক সেন্টার, কলাকোপা আমেনা আবেদ ডায়াগণস্টিক সেন্টার, সাচার হলি কেয়ার ডিজিটাল মেডিকেল সেন্টার, সাচার স্বদেশ ডায়াগণস্টিক সেন্টার, সাচার সেবা ডিজিটাল ডায়াগণস্টিক, সাচার ডাঃ শহীদুল ইসলাম মেডিকেল সেন্টার, সাচার জননী ডায়াগণস্টিক সেন্টার, রহিমানগর ডায়াবেটিক সমিতি চিকি’সা কেন্দ্র, চৌমহনী আল মদিনা ডায়াগনস্টিক, নন্দনপুর ইনসাফ ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নলুয়া শহীদুল্লাহ মেডিকেল সেন্টার, সাচার শেফা হাসপাতাল ও সাচার আহসান ডায়াগনস্টিক। তমধ্যে কচুয়া শ্যামলী খান মেটারনিটি ক্লিনিক বিভিন্ন অনিয়মের কাননে বন্ধ করা হয়েছে।
বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ক্ষেত্রে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী যে কয়েকজন নিজস্ব চিকিৎসক ও ডিপ্লোমা নার্সসহ জনবল থাকার কথা তা দু-একটা বাদে কোনোটিতেই নেই। ভুয়া টেস্ট রিপোর্টে শুধু ডাক্তারের নাম ও সিল ব্যবহার করা হয়। এ কাজটি সুন্দর ভাবে সুকৌশলে ক¤িপউটার অপারেটর করে থাকে। সকল রিপোর্টের ৬০% নমুনা কম্পিউটারের ফাইল করা থাকে, প্রিন্ট করে সিল মেরে রোগীর হাতে তুলে দেয়। অনেক প্রতিষ্ঠানে সশরীরে ডাক্তার উপস্থিত থাকে না। তবে তাদের নামে চলছে চিকিৎসা বাণিজ্য। এই অবস্থায় সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকের ওপর নির্ভরশীল এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার চলছে প্রশাসনের নাকের ডগাতেই।
অধিকাংশ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেই প্যাথলজিস্ট, টেকনিশিয়ান ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। এরপরও বছরের পর বছর চলছে এসব প্রতিষ্ঠান।
অভিযোগ রয়েছে, সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে কমিশন পাচ্ছে একটি সক্রিয় দালাল চক্র। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে সকাল ৮ টা হইতে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক এর নিজস্ব প্রতিনিধি দালাল চক্রের নারী-পুরুষ এর উপচে পড়া ভিড় জমে থাকে। ডাক্তারগণ রোগীদের হাতে ব্যবস্থাপত্র দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে দালালচক্ররা টানাটানি শুরু করে। ফলে উন্নত চিকিৎসাসেবার নামে মানুষ ঠকানোর ব্যবসায় পরিণত হয়েছে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে প্রতিনিয়ত অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা।
কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাছাকাছি রয়েছে বেশ কয়েকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এদের অধিকাংশগুলোর নেই কোনো বৈধ কাগজপত্র। তারপরেও বীরদর্পে চলছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে দালালের মাধ্যমে রোগী ধরে এনে মানুষের শরীরের বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে এখানে। কাগজপত্র না থাকার কথা স্বীকার করে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের পরিচালকগণ বলেন, আমরা স্বাস্থ্য বিভাগের লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছি। শুধু আবেদন করেই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন কীভাবে? এমন প্রশ্নে তারা বলেন, এটি ভুল হয়েছে।
এ ব্যাপারে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য, পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ সোহেল রানা বলেন, কচুয়া উপজেলায় রয়েছে ৩৬টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। বেশির ভাগেরই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। ছাড়পত্র না নিয়ে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান চালানোর কোনো সুযোগ নেই। জনবল সংকটের কারণে আমরা প্রতিনিয়ত এ বিষয়ে নজরদারি করতে পারছি না। তবে দ্রুতই অবৈধভাবে চলা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত হোসেন জানান, উপজেলার সবকয়টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। যাদের লাইসেন্স নবায়ন নেই বা লাইসেন্স নেই, তাদের যথা শিগগিরই লাইসেন্স নবায়ন ও লাইসেন্স করতে বলা হয়েছে। তারা নির্দেশনা না মানলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কচুয়া প্রতিনিধি, ৮ জুলাই ২০২৫