ক্রমেই ফাঁকা হচ্ছে সিরিয়া

চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০১:৪৯ অপরাহ্ন, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫, মঙ্গলবার

সিরিয়া থেকে দলে দলে মানুষ ইউরোপ যাচ্ছে। সিরীয় শরণার্থীদের এই ঢল অভূতপূর্ব। অবস্থাদৃষ্টে তা অপ্রতিরোধ্যও। দেশটিতে চার বছর ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে। যুদ্ধের কারণেই দেশ ছাড়ছে সেখানকার মানুষ। অন্তহীন যুদ্ধে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে সিরিয়া।

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ইউরোপে আশ্রয় চাওয়া শরণার্থীদের অর্ধেকই সিরীয়। গত বছরের তুলনায় এই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ।

বর্তমানে ইউরোপে স্মরণকালের ভয়াবহতম যে শরণার্থী-সংকট চলছে, এতে সিরীয় অভিবাসন-প্রত্যাশী ও শরণার্থীর ভূমিকাই জোরালো। ইউরোপগামী এই বিপুল শরণার্থীর আশ্রয় দেওয়া-না দেওয়া নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তথা ইইউভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে টানাপোড়েন কম হয়নি। কোনো দেশ শরণার্থীদের স্বাগত জানিয়ে বাহবা পেয়েছে। কোনো দেশ সমালোচিত হয়েছে শরণার্থীদের সীমান্ত আটকে। শরণার্থী-সংকটের সমাধানের প্রশ্নে ইইউ দ্বিধাবিভক্ত। এক লাখ ২০ হাজার শরণার্থীকে নির্দিষ্ট সংখ্যা বা কোটা অনুযায়ী আশ্রয় দেওয়া নিয়ে ইইউ দেশগুলোর মধ্যে এখনো মতভেদ রয়েছে।

এমন টালমাটাল পরিস্থিতিতেও ইউরোপমুখী সিরীয় শরণার্থীদের ঢল থামছে না। এখনো আরও কত সিরীয় যে ইউরোপে আসার পথে রয়েছে বা ভবিষ্যতে আসতে পারে, তা সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তবে বাস্তবতা হলো—ঢল প্রবহমান, সংখ্যা বাড়ছে।
সিরিয়ার প্রায় প্রতিটি প্রান্ত থেকে মানুষ দেশান্তরী হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ইউরোপে পাড়ি জমানো ৩০ বছর বয়সী সিরীয় নাগরিক মোহাম্মদের ভাষ্য, তাঁর চেনা সবাই দেশ ছাড়ছে। সিরিয়া ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।

সিরিয়ায় চলমান গৃহযুদ্ধে প্রতিদিন বেসামরিক মানুষ হতাহত হচ্ছে। বাঁচার তাগিদে তারা দেশ ছাড়ছে। ছবি: এএফপিমোহাম্মদের মতো সিরিয়ার আরও অনেকেই নিরুপায় হয়ে দুর্গম পথে ইউরোপের দিকে পা বাড়িয়েছেন। তাঁরা বুঝে গেছেন, এই যুদ্ধের শেষ নেই। দেশে নেই তাঁদের কোনো ভবিষ্যৎ। বাঁচতে হলে তাঁদের দেশ ছাড়তে হবে। আর তাই সব বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে, মৃত্যুকে হাতে নিয়ে তাঁরা ছুটছে। তাঁদের ভাবনা, হয়তো ইউরোপে আশ্রয় মিলবে। সেখানে পাওয়া যাবে জীবনের নিরাপত্তা। মিলবে অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তি।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, সিরিয়ার ক্ষেত্রে এমনটা হওয়াই অনিবার্য ছিল। একটা নিরন্তর, নির্মম যুদ্ধ শেষ হওয়ার অপেক্ষায় থেকে থেকে দেশটির মানুষ ক্লান্ত, বিপর্যস্ত হয়ে অবশেষ বাঁচার তাগিদে দেশছাড়া হতে বাধ্য হয়েছে।
চার বছরের যুদ্ধে সিরিয়া বিধ্বস্ত। সেখানে নিরাপদ জীবন অকল্পনীয়। মৌলিক চাহিদার প্রশ্ন অনেক আগেই শিকেয় উঠেছে।
সিরিয়ার শহর, বন্দর, গ্রামে সরকার ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে অবিরাম লড়াই চলছে। রাসায়নিক ও ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে। আকাশ থেকে বৃষ্টির মতো পড়ছে বোমা। ক্ষমতার এই লড়াইয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রাণ যাচ্ছে বেসামরিক মানুষের। মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘতর হচ্ছে।
সিরিয়ায় এর মধ্যে আবার আছে ভয়ংকর জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) লাগাতার তৎপরতা। সিরিয়ার একটা বড় অংশ তারা দখল করে নিয়েছে। দখলকৃত অংশে তারা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। আইএস দমনে সিরিয়া সরকার এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এতে কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। এমন এক দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে দেশছাড়ার বাইরে সিরীয়দের সামনে আর কী উপায় থাকতে পারে?

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সাবেক কর্মকর্তা আটলান্টিক কাউন্সিলের ফ্রেড হফের ভাষ্য, সিরিয়ার সর্বত্র এখন নিরাশা। সিরীয় নাগরিকদের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই। বিপুলসংখ্যক সিরীয় তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেন ইউরোপ যাচ্ছে, তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন বা বিস্ময় থাকার কথা নয়।—দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট অবলম্বনে

চাঁদপুর টাইমস-ডিএইচ/২০১৫।

Share