মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ক্যান্সারের রোগী মায়ের করোনা পরীক্ষা করাতে গিয়ে হাসপাতালটির আনসার সদস্যদের হাতে মার খেয়েছেন ছেলে। এ সময় আনসার সদস্যদের এই অন্যায়ের ছবি ধারণ করতে গিয়ে তাদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন দুই ফটো সাংবাদিক।
৩ জুলাই শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় এই ঘটনা ঘটে। মারধরের শিকার ছেলের নাম শাওন হোসেন। তারা মুগদার দক্ষিণ মান্ডা এলাকার বাসিন্দা। আর লাঞ্ছিত হওয়া দুই ফটো সাংবাদিক হলেন- দৈনিক দেশ রূপান্তরের রুবেল রশীদ ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের জয়িতা রায়।
ভুক্তভোগী শাওন গণমাধ্যমকে বলেন, আমার মা ক্যান্সারের রোগী। কেমোথেরাপি দিতে হলে তার করোনা পরীক্ষা করা হবে। সেজন্য শুক্রবার মাকে নিয়ে তিনি মুগদা জেনারেল হাসপাতালে যান করোনা পরীক্ষা করাতে। সেখানে ভোর পাঁচটা থেকে লাইনে দাঁড়ান শাওনের মা। ক্রমিক অনুযায়ী নম্বর পড়ে ৩৬-এ।
মুগদা হাসপাতালের করোনা পরীক্ষার টোকেন দেয়ার বিষয়টি তদারকিতে থাকা হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার অনিমেষ গণমাধ্যমকে জানান, তিনি করোনা পরীক্ষার জন্য ১০০টি টোকেন দেন। এরমধ্যে ৫০টি বুথের জন্য ও ৫০টি হাসপাতালের জন্য।
জানা গেছে, সে অনুযায়ী, আজই (শুক্রবার) শাওনের মায়ের করোনা পরীক্ষা করানোর কথা। যেহেতু তিনি ৩৬ নম্বরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু লাইনে থেকে পাঁচ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও তার ডাক আসেনি। এক পর্যায়ে তাকে আনসার সদস্য এসে বলেন আজ আর পরীক্ষা হবে না।
জিজ্ঞাসা করলে বলেন, ৪০ জনের পরীক্ষা হয়ে গেছে। তখন শাওন বলেন, আমরা তো ৩৬ নম্বরে, আমরা এখনও পরীক্ষার অনুমতি পেলাম না, তাহলে ৪০ জনের পরীক্ষা কীভাবে হয়ে গেল। এ নিয়ে শাওন ও আনসার সদস্যদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়।
একপর্যায়ে আনসার সদস্যরা তার কলার ধরে হাসপাতালের ক্যাম্পে নিয়ে যান। এই ঘটনার ছবি তুলতে গেলে আনসার সদস্যরা দুই ফটো সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করেন। এ সময় দেশ রূপান্তরের রুবেল রশীদের ক্যামেরার লেন্সের ফিল্টার ভেঙে ফেলেন আনসার সদস্যরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে ৯টায় করোনা পরীক্ষার জন্য টোকেন দেয়া শুরু করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। লাইনে অপেক্ষমাণ ব্যক্তিদের সুশৃঙ্খলভাবে টোকেন দেয়ার জন্য নিয়োজিত করা হয় আনসার সদস্যদের। কিন্তু তারা সেটি না করে হাসপাতালের ফটকে বসেন।
ভুক্তভোগী শাওন বলেন, একজন করে শুরু হয় টোকেন দেয়া। পাঁচ ঘণ্টা পার হওয়ার পর যখন ৩৩তম ব্যক্তি যান এরপরই টোকেন দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। বলা হয় আজ আর পরীক্ষা করা হবে না। অথচ নিয়মানুযায়ী অন্তত ৪০ জনকে তাদের টোকেন দেয়ার কথা। আমার মা দাঁড়িয়ে ছিলেন ৩৬ নম্বরে। টোকেন না দেয়ার কারণ জানতে চাইলে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে আমার কলার ধরে ক্যাম্পে নিয়ে লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়। পরে রশি নিয়ে আসা হয় আমাকে বেঁধে রাখার জন্য। মুগদা থানা থেকে পুলিশ এসে তারাও আমাকে দায়ী করে আমার নাম ও ঠিকানা লিখে নিয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা না বলতে আমাকে শাসানো হয়।
আনসারদের হাতে লাঞ্ছিত ফটো সাংবাদিক রুবেল রশীদ যুগান্তরকে ঘটনার সত্যতা যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, শাওনকে কলার ধরে নিয়ে যাচ্ছিলেন আনসার সদস্যরা। সেই ছবি তুলতে গেলে প্রথমে বাংলাদেশ প্রতিদিনের জয়িতাকে লাঞ্ছিত করেন আনসার সদস্য আফসারুল আমিন। পরে এক আনসার সদস্য তাকেও (রুবেল রশীদ) মারতে উদ্যত হন। এ সময় একটি চড় ক্যামেরায় লাগলে লেন্সের ফিল্টার ভেঙে যায়। এ সময় আনসার সদস্যরা খুব বাজে আচরণ করে হুমকি-ধামকি দেন।
এ ঘটনায় মুগদা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন বলে জানান ফটো সাংবাদিক রুবেল রশীদ।
বার্তা কক্ষ, ৩ জুলাই ২০২০