কোরবানি দিতে গিয়ে আহত ৩ শতাধিক

রাজধানীতে পশু কোরবানি দিতে এবং মাংস কাটতে গিয়ে তিন শতাধিক মানুষ আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। কোরবানির সময় পশুর লাথি-শিংয়ের আঘাত এবং অসাবধানতাবশত দা, চাকু, ছুরির আঘাতে তারা আহত হন। এদের মধ্যে ২০ জনের অবস্থা গুরুতর।

১০ জুলাই রোববার রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী বাবু। ঢাকার বাসাবোতে নিজ বাড়িতে কোরবানির মাংস কাটতে গিয়ে বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলে গুরুতরভাবে কেটে গেছে। পরে মুগদা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে যান। সেখান থেকে দুপুরে শ্যামলীর অর্থোপেডিক হাসপাতালে পাঠানো হয়।

বাবুর সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। তিনি জানান, কোরবানির গরু কাটার সময় ছুরি ছিটকে গিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুলের অনেকটা অংশ কেটে গেছে। প্রাথমিকভাবে ব্যান্ডেজ করে দেওয়া হয়েছে। অর্থোপেডিক হাসপাতালে ইমার্জেন্সি ওটি থেকে সেলাই করে দেওয়া হয়েছে। আগামী তিন মাস বিশ্রামে থাকতে বলেছেন চিকিৎসক।

গুলশানে এক বাড়ির কেয়ারটেকার নূর। কোরবানির মাংস কাটতে গিয়ে বাম হাতের রগ কেটে গেছে। পরে ইবনে সিনা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অর্থপেডিক হাসপাতালে পাঠানো হয়। এখানে চিকিৎসক দেখার পরে তার হাতে অস্ত্রোপচার হবে বলে জানান। সে কারণে তিনি অপারেশন থিয়েটারের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন।

জাগো নিউজকে নূর বলেন, প্রতিবছর বাড়ির মালিকের গরু কোরবানির সময় মাংস কাটাকাটি করি, কখনো হাত-পা কাটেনি। এবার হঠাৎ করে বাম হাতের রগের অনেকটা অংশ কেটে গেছে। চিকিৎসক বলেছেন অপারেশন করতে হবে। সে কারণে অপেক্ষা করছি।

রাজধানীর শ্যামলী অর্থোপেডিক হাসপাতালের নার্স সুপারভাইজার সাবিত্রী রানী চক্রবর্তী বলেন, পশু কোরবানি ও পরে মাংস কাটতে গিয়ে সকাল আটটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত আহত হওয়া দুই শতাধিক রোগী হাসপাতালে আসেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশ রোগী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে যান। ৬০ জনের ছোটখাটো ও বড় অপারেশন করা হয়। ২০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

তিনি জানান, অন্যান্য বছরের চাইতে এবার গরু কাটাকাটি করতে গিয়ে আহতদের সংখ্যা অনেক বেশি। রোববার রাত ১২টা পর্যন্ত এ ধরনের রোগী আসতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে জরুরি বিভাগের সিনিয়র ডাক্তার তপন কুমার পাল বলেন, কোরবানির পশু কাটতে গিয়ে হাত পা কেটে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিপুল পরিমাণে রোগী হাসপাতালে আসেন। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত এ ধরনের রোগীর চাপ ছিল বেশি। এদের কাউকে কাউকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হলেও যাদের আঘাতের পরিমাণ বেশি তাদের অপারেশন করতে হয়েছে।

তিদি জানান, গ্রাম থেকে আসা অপেশাদার কসাইয়ের পাশাপাশি অসাবধানতা কিংবা অসচেতনতার কারণে কোরবানি দিতে গিয়ে আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আর তাতে কারও হাত, কারও পা অথবা শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে গেছে। এগুলোর পাশাপাশি কোরবানি দিতে গিয়ে গরুর শিংয়ের আঘাতে আহত হয়েছেন অনেকেই।

এদিকে, একই কারণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন ৯৬ জন। তাদের সবাইকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা,মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ জেলা থেকে তাদেরকে চিকিৎসার জন্য ঢামেকে নিয়ে আসা হয়েছে। এদের মধ্যে রাজধানীরবংশাল, ওয়ারী, লালবাগ, পোস্তগোলা, কামরাঙ্গীরচর, রামপুরা, মতিঝিল, খিলগাঁও, হাজারীবাগ, চানখাঁরপুল, চকবাজার এলাকা থেকে বেশি আহত রোগী আসেন।

ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া জানান, আহতদের সবাইকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ গুরুতর আহত না হওয়ার কারণে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি।

বার্তা কক্ষ, ১০ জুলাই ২০২২

Share