যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব
ঈদুল আজহার দিন প্রয়োজনীয় খরচ ব্যতীত সাড়ে সাত তোলা সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা কিংবা সমপরিমাণ সম্পদ যার কাছে থাকবে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব।
কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য নেসাব পরিমাণ মাল পূর্ণ এক বছর থাকা জরুরি নয়, কোরবানির শেষদিন সূর্যাস্তে পূর্বেও কেউ যদি নেসাব পরিমাণের মালিক হয় তাহলে তার ওপরও কোরবানি ওয়াজিব।
জীবিকা নির্বাহের জন্য যে পরিমাণ জমি ও ফসলের দরকার তা থেকে অতিরিক্ত জমি ও ফসলের মূল্য অথবা যে কোনো একটির মূল্য নেসাব পরিমাণ হলেও কোরবানি করা ওয়াজিব।
একই পরিবারের সব সদস্য পৃথক পৃথকভাবে নেসাবের মালিক হলে সবার ওপর আলাদাভাবে কোরবানি ওয়াজিব।
কোনো উদ্দেশ্যে কোরবানির মান্নত করলে সে উদ্দেশে পূর্ণ হলেও কোরবানি করা ওয়াজিব। অতএব প্রত্যেক স্বাধীন, ধনী, প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্ক নর-নারীর ওপর কোরবানি ওয়াজিব।
কোরবানির পশু ও তার বয়স
ইসলামী শরিয়তে গরু-মহিষ, ভেড়া, ছাগল, দুম্বা, উট কোরবানি করাকে বৈধতা দান করা হয়েছে। তবে ছাগল, ভেড়া, দুম্বা এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে আদায় করা চলবে কিন্তু গরু, মহিষ, উট সাত ব্যক্তি শরীক হতে পারবে।
শর্ত একটাই শরীকদার সবার নিয়ত বিশুদ্ধ থাকতে হবে। এদের মধ্যে একজনেরও যদি লোক দেখানো বা গোশত খাওয়া উদ্দেশ্য হয় তাহলে কারো কোরবানি কবুল হবে না।
ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, এক বছর বয়সী হওয়া আবশ্যক। তবে যদি ছয় মাসের দুম্বা এবং ভেড়া এরূপ মোটা তাজা হয় যে, দেখতে এক বছরের মতো মনে হয় তাহলে ওই ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কোরবানি করা যাবে।
আর ছাগল যত বড়ই হোক না কেন এক বছর পরিপূর্ণ হওয়া জরুরি, একদিন কম হলেও কোরবানি জায়েজ হবে না। গাভী, মহিষ দু’বছর পূর্ণ হওয়া জরুরি।
উট পাঁচ বছরের হওয়া জরুরি, একদিন কম হলেও কোরবানি হবে না। কোরবানির জন্য মোটা, তরতাজা, সুস্থ পশু হওয়া জরুরি। আতুর, লেংড়া, কানা, কানকাটা, লেজকাটা, দুর্বল পশু দিয়ে কোরবানি বিশুদ্ধ হবে না।
কোরবানির দিন
তিনদিনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কোরবানির দিন হল দশ, এগারো ও বারো জিলহজ। এ তিনদিনের মধ্যে যে কোনো দিন কোরবানি করা জায়েজ আছে। তবে উত্তম দিন হচ্ছে প্রথমদিন অর্থাৎ দশ জিলহজ। কোনো কারণ ছাড়া বিলম্ব না করা ভালো।
কোরবানির সময়
জিলহজের দশম দিন ঈদের নামাজ পড়ার পর থেকে জিলহজের বারো তাবিখ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত কোরবানি করা যাবে। তবে ঈদের নামাজের পূর্বে কোরবানি করা যাবে না। ঈদের নামাজ পড়ে এসে কোরবানি করতে হবে।
যদি শহরের একাধিক স্থানে ঈদের নামাজ হয় তাহলে যে কোনো এক স্থানে নামাজ আদায় হয়ে গেলে সব স্থানেই কোরবানি করা জায়েজ হবে।
জবেহ
কোরবানিদাতা সে নিজেও জবেহ করতে পারবে এবং কোনো আলেম তথা অভিজ্ঞ কাউকে দিয়ে কোরবানি করাতে পারবে। তবে উত্তম হচ্ছে নিজের কোরবানি নিজে করা।
মুখ দিয়ে উচ্চারণ করে নিয়ত করা জরুরি নয় বরং অন্তরের নিয়তই যথেষ্ট। জবেহ করার সময় অবশ্য অল্লাহর নাম নিতে হবে।
কোরবানির গোশত
কোরবানির গোশত নিজে খাবে এবং গরিব-মিসকিনগণকে খাওয়াবে। উত্তম পন্থা হচ্ছে গোশতকে তিনভাগে ভাগ করা, একভাগ গরিব-মিসকিনকে দান করা। একভাগ আত্মীয়-স্বজনকে দেয়া এবং এক অংশ নিজ পরিবারের জন্য রাখা।
পশুর চামড়া
কোরবানির পশুর চামড়া নিজে ব্যবহার করতে পারবেন এবং অন্যকে হাদিয়াও দিতে পারবেন। আবার মাদ্রাসার লিল্লাহ ফান্ডেও দান করা যাবে।
কিন্তু কোরবানির চামড়া বিক্রি করে কোনো মাদ্রাসার শিক্ষক, মসজিদের ইমামের ভাতা দেয়া যাবে না। বিক্রি করলে চামড়ার টাকা একমাত্র গরিব-মিসকিনকেই দান করতে হবে। সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে মাদ্রাসার গরিব ফান্ডে দান করা।
কোরবানি যেহেতু একটি উত্তম ইবাদত। এ ইবাদতটিও একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হওয়া চাই। কারণ আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন, ‘নিশ্চই আমার নিকট কোরবানির পশুর গোশত ও রক্ত কিছুই কবুল হয় না, তবে আমার নিকট পৌঁছে একমাত্র তাকওয়া। (সূরা হজ : ৩৭)।
(তথ্য সুত্র: আহসানুল ফাতাওয়া ৭/৫১০, তিরমিজি ১/১২০, ইমদাদুল ফাতায়া ২/১৬৬, মুয়াত্তা মালেক ১৮৮)
লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট ও অধ্যক্ষ, শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল, মৌলভীবাজার