চাঁদপুর

কোমলমতি শিশুদের ওপর হামলার ঘটনা দেশের ইতিহাসে ঘটেনি

সন্ত্রাসীদের কোনো দলীয় পরিচয় নেই : প্রচলিত আইনে তাদের বিচার করা হবে : পুলিশ সুপার

জিসান আহমেদ নান্নু, কচুয়া :

চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার ভূইয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপর যুবলীগ নামধারী কর্মীদের হামলার ঘটনায় গতকাল সোমবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মোঃ আবদুর সবুর মন্ডল ও পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে উপস্থিত এলাকা বাসীর উদ্দেশ্যে জেলা প্রশাসক আবদুর সবুর মন্ডল বলেছেন, এ ধরনের ন্যাক্কার জনক ঘটনা বাংলাদেশে এই প্রথম। কোমলমতি শিশুদের উপর যারা হামলা চালিয়েছে তারা মানুষ নয়। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের সাথে আপোষ নয় বরং সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। শিশুরা কোমল, তাদের মন খুবই নরম, পিতা মাতার মত শিক্ষকদের উপর হামলা হলে তারা প্রতিবাদ করবেই এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিক্ষোভ মিছিলের মতো বিপদজনক কাজে না যাওয়ার ব্যাপারে শিক্ষকদের ভূমিকা রাখতে হবে। আজকের এ ঘটনাটি শুধু এ এলাকায় নয়, সারাদেশে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। আমি চাঁদপুরের পুলিশ সুপার ও কচুয়া থানার ওসিকে দ্রুত আসামী গ্রেফতার করায় তাদের অভিনন্দন জানান।

এদিকে একই সমাবেশে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার বলেছেন, সন্ত্রাসীদের কোন দল নেই। তার কোন দলের তা জানতেও চাইনি। তাদের প্রচলিত আইনে বিচার করা হবে। এমনকি সন্ত্রাসীদের যারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে। তিনি শিক্ষক ও ছাত্রীদের উপর হামলাকারী মূল হোতা মনির হোসেন ও লিটন ঢাকা পালিয়ে যাওয়ার সময় মতলব থেকে আটক করা হয়েছে বলে উপস্থিত সকলকে জানান। উপস্থিত গ্রামবাসী এ কথা শুনে পুলিশ সুপারকে হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানান।

এসময় আরো বক্তব্য রাখেন এএসপি সার্কেল আঃ হানিফ, কচুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সোহরাব হোসেনে চৌধুরী সোহাগ, হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুর্শিদুল ইসলাম, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ও ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি আঃ মবিন মিয়া, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক নাজমুল আলম স্বপন, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ইমাম হোসেন, সাধারন সম্পাদক ওমর ফারুক, সাবেক সাধারন সম্পাদক গাজী আহাদ, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দুলাল চন্দ্র সরকার ও সহকারী শিক্ষক ফজলুর রহমান প্রমুখ।

পুলিশ সূত্রে জানাগেছে- কচুয়ার ভূইয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের ২ শিক্ষক ও প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থীর উপর হামলায় দায়ের কৃত মামলায় এজাহার নামীয় ৪ জনসহ ১০জনকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মোজাম্মেল হোসেন, পপি আক্তার, ওয়াজী উল্যাহ, সবুজ ও আলাউদ্দিন কে আদালতে সোপর্দ করা হয়। এছাড়া নুরজাহান বেগম, শাবনুর, এমরান হোসেন নামের ৩জন থানায় পুলিশি হেফাজতে রয়েছে। অপরদিকে মূল আসামি সবাই ধরা না পড়ায় ভয় ও আতঙ্কে রয়েছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এদিকে জানাগেছে- সোমবার একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি দেখেই ঘটনার মূল দু’আসামি যুবলীগকর্মী মনির ও লিটনকে সনাক্ত করে আটক করা হয়।

পুলিশ আরো জানায়, এজাহার নামীয় আসামী যুবলীগ নামধারী কর্মী মনির, ফারুক ও লিটন ঘটনার পর পরই এলাকা থেকে পালিয়ে যায়। আত্মগোপনে থেকে গতকাল সোমবার দুপুরে মনির ও লিটন ‘আবে ঝম ঝম’ লঞ্চ যোগে ঢাকায় পালিয়ে যাচ্ছিল। খবর পেয়ে কচুয়া ও মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর ফাঁড়ি পুলিশ পথিমধ্যে মেঘনা নদীর মোহনপুর এলাকায় লঞ্চ থামিয়ে তাদেরকে আটক করতে সক্ষম হয়।

কচুয়া থানার ওসি মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল জানান, ইতোমধ্যে ১০জনকে পুলিশ আটক করেছে। এদের মধ্যে ৫ জনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। বাকিরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে রয়েছে।

এদিকে সোমবার সকালে কচুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সুত্রে জানা গেছে, ওই হামলায় গুরুতর আহতদের মধ্যে এখনো ৪জন কচুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও ৫জন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকিরা রাতেই চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছে।

প্রসঙ্গত, ১৫ আগস্টের অনুষ্ঠান উপলক্ষে উপ-বৃত্তির টাকা থেকে চাঁদা না দেয়ার জের ধরে কচুয়ার ভুইয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপর গত রোববার হামলা করে স্থানীয় যুবলীগ কর্মী ফারুক, লিটন ও মনিরসহ চাঁদা বঞ্চিত যুবলীগ কর্মীরা। তাদের হামলায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৪০ জন আহত হয়। ওই দিন রাতেই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দুলাল চন্দ্র সরকার বাদী হয়ে ৮জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ২০ জনকে আসামি করে কচুয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

Share