কোমর অথবা মাজা ব্যাথার চিকিৎসা

শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ জীবনের কোন না কোন সময়ে মাজা ব্যথায় ভুগেন।

আর ৫০ ভাগ একের অধিকবার মাজা ব্যথায় ভুগেন। কোমর বা মাজা ব্যথার কোন সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না শতকরা ৮৫ ভাগ মানুষের ক্ষেত্রে।

কোমর ব্যথার কারণে কর্মজীবী মানুষ প্রায়ই কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন। হাসপাতাল বা ডাক্তার চেম্বারে লোকদের যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো মাজা ব্যথা।

উপযুক্ত চিকিৎসা পেলে ৯০% রোগী দুই মাসের মধ্যেই সুস্থ হয়ে ওঠবেন। স্বল্প মেয়াদি ব্যথা এক মাসের কম সময় থাকে।

যে ব্যথা এক মাসের অধিক থাকে তাকে দীর্ঘ মেয়াদি বা ক্রোনিক ব্যথা বলে।

মাজা ব্যথার কারণ সমূহ :

১. পেশি, হাড়, জোড়া, লিগামেন্ট, ডিস্ক (দুই কশেরুকার মাঝখানে থাকে) ও স্নায়ুর রোগ বা ইনজুরি।

২. বুক, পেট ও তল পেটের মধ্যকার বিভিন্ন অঙ্গের সমস্যার জন্য মাজা ব্যথা হয়। একে রেফার্ড পেইন বলে।

৩. হারনিয়াটেড ডিস্ক নার্ভকে ইরিটেশন করে। ২০ বছরের উর্ধ্বে এক-তৃতীয়াংশ লোকের হারনিয়াটেড ডিস্ক থাকে। ৩% লোকের নার্ভ ইরিটেশনের জন্য ব্যথা হয়।

৪. পেশাগত কারণে দীর্ঘক্ষণ বসার ভঙ্গিমা ঠিকমত না হলে।

৫. ছাত্রছাত্রীর চেয়ারে বসার ভঙ্গিমা ঠিকমত না হলে।

৬. ড্রাইভিং করার সময় সঠিকভাবে না বসলে।

৭. ওপর হয়ে শুয়ে বই পড়লে।

৮. স্পোনডাইলোসিস।

৯. স্পোনডাইলাইটিস।

১০. স্পোনডাইলিসথেসিস।

১১. স্পাইনাল ক্যানাল সরু হওয়া।

১২. হাড় ও তরুণাস্থির প্রদাহ এবং ক্ষয়।

১৩. হাড়ের ক্ষয় ও ভঙ্গুরতা।

১৪. হাড় নরম ও বাঁকা হওয়া।

১৫. আর্থ্রাইটিস।

১৬. ফাইব্রোমায়ালজিয়া।

১৭. হঠাৎ করে হাঁচি, কাশি দিয়েছেন বা প্রস্রাব-পায়খানার জন্য স্ট্রেইন করেছেন।

১৮. সামনে ঝুঁকে বা পার্শ্বে কাত হয়ে কিছু তুলতে চেষ্টা করেছেন।

১৯. হাড়ের ইনফেকশন।

২০. ডিস্কাইটিস (ডিস্কের প্রদাহ)।

২১. হাড় ও স্নায়ুর টিউমার।

২২. যে কোন কারণে অতিরিক্ত চিন্তাগ্রস্ত হলে কোমর ব্যথা হয়।

উপসর্গ বা কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন:

সব সময় ধরে বা জমে (স্টিফনেস) আছে- এই ধরনের ব্যথা । ভারী ওজন তোলা বা অতিরিক্ত কাজের পর তীক্ষè ব্যথা। ক্রোনিক বা দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা হলে। অনেকক্ষণ বসা বা দাঁড়ানো অবস্থায় ব্যথা হলে। কোমর থেকে নিতম্ব, উরু, লেগ ও পায়ের আঙ্গুল পর্যন্ত ব্যথা বিস্তৃত হলে। লেগ বা পায়ে দুর্বলতা বা অবশ অবশ ভাব এবং টিংগিং সেনসেশন হলে। কোমর ব্যথা কয়েকদিনের মধ্যে না সারলে।

রাতে বেশি ব্যথা হলে বা ব্যথার জন্য ঘুম ভেঙে গেলে। হাঁচি, কাশি দিলে বা সামনে ঝুঁকলে ব্যথা বেড়ে যায়। প্রস্রাব বা পায়খানার নিয়ন্ত্রণ না থাকলে। কোমর ব্যথার সাথে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া থাকলে বা দুর্গন্ধ প্রস্রাব হলে।

ব্যথার সাথে জ্বর, ঘাম, শীত শীত ভাব বা শরীর কাঁপানো ইত্যাদি থাকলে। শোয়া অবস্থায় বা শোয়া থেকে ওঠার সময় ব্যথা হলে। পায়ের গোড়ালি বা পায়ের পাতা দিয়ে হাঁটতে অসুবিধা হয়। অনেকক্ষণ সোজা হয়ে দাঁড়ানো বা হাঁটা যায় না।

অন্য কোন অস্বাভাবিক সমস্যা দেখা দিলে। ল্যাবরেটরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা কোমর ব্যথার চিকিৎসা প্রদানের পূর্বে কারণ নির্ণয় করার জন্য প্রয়োজনীয় ল্যাবরেটরি পরীক্ষা করতে হবে। রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা। প্রস্রাব পরীক্ষা। এক্স-রে। আলট্রাসনোগ্রাফি। এম আর আই। সি টি স্ক্যান। করণীয় বা চিকিৎসা কোমর ব্যথার চিকিৎসার কারণ সমূহের ওপর নির্ভর করে।

চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হলো

(১) ব্যথা নিরাময় করা

(২) কোমরের মুভমেন্ট স্বাভাবিক করা। পূর্ণ বিশ্রাম দুই বা তিন দিন।

দীর্ঘদিন বিশ্রাম নিলে ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যায়। তীব্র ব্যথা কমে গেলেও ওজন তোলা, মোচড়াঁনো (টুইসটিং) পজিশন ও অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম বন্ধ করতে হবে। এন্টিইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ সেবন। গরম সেঁক যেমন গরম প্যাড, গরম পানির বোতল ও গরম পানির গোসল।

ব্যায়াম-পেশি নমনীয় ও শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়াম করতে হবে। ফিজিক্যাল থেরাপি-একোয়া থেরাপি, আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি ও ইলেকট্রিকেল স্টিমুলেশন। পেলভিক ট্র্যাকশন। কোমরে বেল্ট (ল্যাম্বার কোরসেট) ব্যবহার করা।

ইনজেকশনে নিরাময় পদ্ধতি ইপিডুরাল স্টেরয়েড ইনজেকশন। ফ্যাসেট জয়েন্ট ইনজেকশন। স্যাকরো-আইলিয়াক জয়েন্ট ইনজেকশন।

কেমিকেল ডিস্কোলাইসিস। সার্জিকেল চিকিৎসা কনজারভেটিভ বা মেডিকেল চিকিৎসায় ভালো না হলে, ব্যথা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকলে, স্নায়ু সমস্যা দেখা দিলে এবং প্রস্রাব বা পায়খানার নিয়ন্ত্রণ না থাকলে দ্রুত সার্জিকেল চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।

বিভিন্ন ধরনের সার্জিকেল চিকিৎসা কারণসমূহের ওপর নির্ভর করে।

ডাঃ জি এম জাহাঙ্গীর হোসেন
কনসালটেন্ট- হাড়, জোড়া, ট্রমা ও আর্থ্রোস্কোপিক সার্জারি
ডিজিল্যাব মেডিকেল সার্ভিসেস,
মিরপুর (ইনডোর স্টেডিয়ামের সামনে),
ঢাকা। ফোন : ০১৭৪৬৬০০৫৮২

Share