Home / জাতীয় / রাজনীতি / কে এই সেলিনা হায়াৎ আইভি?
কে এই সেলিনা হায়াৎ আইভি?

কে এই সেলিনা হায়াৎ আইভি?

ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য এশিয়ান’র চোখে এশিয়ার ক্ষমতাধর মেয়রদের মধ্যে অন্যতম।
তার বাবা আলী আহমেদ চুনকা ছিলেন নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি, স্বাধীনতার পর যিনি জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থেকে দু’দুবার (১৯৭৪ ও ১৯৭৭) নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের জন্য নিবেদিতপ্রাণ পরিবারে বড় হয়ে তিনিও নিজেকে নিবেদিত করেন এ দলের তরে।

সেজন্য স্কলারশিপ পেয়ে রাশিয়ার একটি মেডিকেল ইনস্টিটিউট থেকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে ডিগ্রি লাভের পর সেখানে স্থায়ী হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও সব ছেড়ে-ছুড়ে দেশে ফিরে আসেন। দলের হয়ে নেমে যান দেশসেবার রাজনীতিতে। তার এ আত্মনিবেদনের পুরস্কার দু’দুবার নারায়ণগঞ্জ শহরের মেয়র পদে (একবার পৌরসভা ও একবার সিটি করপোরেশন) লড়াইয়ে জয়।

এই তিনি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য এশিয়ান’র চোখে এশিয়ার ক্ষমতাধর মেয়রদের মধ্যে অন্যতম। জনপ্রিয় ও ক্ষমতাধর আইভী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচনে মেয়র পদে আবারও লড়ছেন।

ডাক্তার আইভী ১৯৬৬ সালের ৬ই জুন নারায়ণগঞ্জের একটি রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মাতা “মমতাজ বেগম” ও পিতা সাবেক পৌর চেয়ারম্যান “আলী আহাম্মদ চুনকা”।

চুনকা পরিবারের পাঁচ সন্তানের মধ্যে ডা. আইভী হলেন প্রথম সন্তান। তিনি দেওভোগ আখড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে শিক্ষা জীবন শুরু করেন।

পরবর্তীতে তিনি নারায়ণগঞ্জ প্রিপারেটরী স্কুলে ভর্তি হন এবং ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। অতঃপর তিনি মর্গ্যান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

১৯৭৯ সালে ট্যালেন্টপুলে জুনিয়র স্কলারশিপ পান এবং ১৯৮২ সালে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় স্টারমার্কসহ উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি ১৯৮৫ সালে রাশিয়ান সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে শিক্ষা গ্রহণের জন্য ওডেসা পিরাগোব মেডিক্যাল ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন এবং ১৯৯২ সালে কৃতিত্বের সাথে মেডিসিন ডাক্তার ডিগ্রি লাভ করেন।

পরবর্তীতে ১৯৯২-৯৩ সালে ঢাকা মিডফোর্ট হাসপাতালে ইন্টার্নি সম্পন্ন করেন। ডা. আইভী তাঁর সুদীর্ঘ শিক্ষা জীবনের পর ১৯৯৩-৯৪ সালে মিডফোর্ট হাসপাতালে এবং ১৯৯৪-৯৫ সালে নারায়ণগঞ্জ ২০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে অনারারি চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন।

তিনি স্কুল ও কলেজ জীবন হতে বাবার সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতেন। ১৯৯৩ সালে তিনি নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদিকা ছিলেন।

২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাঁর সক্রিয় রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাত ঘটে। তিনি ১৬ জানুয়ারি ২০০৩ তারিখে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম মহিলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ২৭.০৬.২০১১ পর্যন্ত তিনি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

বর্তমানে তিনি নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বে আছেন। তিনি আলী আহাম্মদ চুনকা ফাউন্ডেশন এবং নারায়ণগঞ্জ হার্ট ফাউন্ডেশন-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং তিনি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)-এর নারায়ণগঞ্জ জেলার আহ্বায়কের দায়িত্বে আছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত আছেন।

তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র এবং বাংলাদেশের প্রথম মহিলা যিনি কোনো সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

গতবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়েও কেবল জনপ্রিয়তার ভিতে নারায়ণগঞ্জ নগরের সর্বোচ্চ অধিকর্তার মুকুট জয় করে নিয়েছিলেন, দলের অভ্যন্তরীণ সব কোন্দলকে ডিঙিয়েই।

এবারের নির্বাচনে তিনি দলের মনোনয়নও পেয়ে গেছেন। একইসঙ্গে নিদর্শন দেখা যাচ্ছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনেরও। সেজন্য আসন্ন ২২ ডিসেম্বরের নির্বাচনে দেশের প্রথম নারী মেয়র (সিটি করপোরেশনে) আইভী আবারও জিততে চলেছেন বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। জনপ্রিয়তার পাশাপাশি দলের মনোনয়নপ্রাপ্তি ও স্থানীয়ভাবে বিরাজমান কোন্দল নিরসন আইভীর বিজয়ের পথকে সুগম করেছে বলে মনে করছেন দলটির নীতি নির্ধারকরা।

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের জন্য অন্যতম নিবেদিতপ্রাণ ‘চুনকা পরিবার’র বড় মেয়ে আইভীর গতবারের নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সেখান দলের আরেক আস্থাভাজন ‘ওসমান পরিবার’র সন্তান স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। তবে, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন শামীম, আর আইভী লড়েছিলেন ‘সম্মিলিত নাগরিক পরিষদ’র মনোনয়ন নিয়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে জিতে গিয়েছিলেন আইভী।

এবারও নির্বাচন ঘনিয়ে আসতেই মেয়র পদে তাদের দু’জনের নামই আলোচনায় আসছিলো। সব আলোচনার অবসান ঘটিয়ে আওয়ামী লীগ থেকে এবার মনোনয়ন দেওয়া হয় আইভীকে। তার নাম ঘোষণার পর স্বভাবতই আলোচনায় আসে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বিষয়টি। কিন্তু ২২ নভেম্বর দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দু’জনকে ডেকে ‍সাফ জানিয়ে দেন, ‘দল করতে হলে দলের সিদ্ধান্ত মানতে হবে, আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে বিজয়ী করতে হবে।’

শেখ হাসিনার সেই নির্দেশের পর থেকেই স্থানীয় রাজনীতিতে কোন্দলের জমাট বরফ গলতে থাকে। নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আইভীর পক্ষেই কাজ করতে তাদের ঐক্যের কথা বলতে থাকেন। সবশেষ শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) সংবাদ সম্মেলন করে ঐক্যের কথা বলেন শামীম ওসমানও। তিনি নৌকার কারুকাজের দু’টি শাড়িও উপহার দেন আইভীকে।

এই সংবাদ সম্মেলন ও শাড়ি উপহারেই কোন্দলের নিরসন দেখছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা স্বস্তি প্রকাশ করে বলছেন, এই ঘটনার মধ্য দিয়ে শামীম ওসমান ও আইভীর মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বের অবসান ঘটেছে, যা নির্বাচনে আইভীর পক্ষে বড় ধরনের ইতিবাচক ফল দেবে।

সংবাদ সম্মেলনে শামীম ওসমান বলেন, “আইভীর প্রতি আমার আর কোনো রাগ, অভিমান নাই, কোনো বিরোধ নাই। আইভী আমার ছোট বোন। আমি নির্বাচনী প্রচারে নামতে পারবো না, তাই নৌকা মার্কা দিয়ে দু’টি শাড়ি আইভীর জন্য বানিয়েছি। আমার ছোট বোন এটি পরে বিভিন্ন এলাকায় প্রচারে যাবে, তখন তার মনে পড়বে, বড় ভাই শামীম ওসমান সঙ্গে না থাকলেও তার দোয়া সঙ্গে আছে। আমার বোন যদি ডাকে, নেত্রী যদি নির্দেশ দেন, তাহলে আমি পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করে নৌকার পক্ষে কাজ করবো।”

শাড়ি উপহার পাওয়ার পর আইভীও খুশি হন এবং শামীম ওসমানকে ধন্যবাদ দেন। তিনি বলেন, “শাড়ি পেয়েছি। এ উপহারের জন্য বড় ভাই শামীম ওসমানকে ধন্যবাদ।”

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, দু’জনের এ উপহার বিনিময় ও ধন্যবাদ জ্ঞাপনে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী আরও উজ্জীবিত হয়েছেন এবং দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জোরালোভাবে কাজ করতে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন।

নীতিনির্ধারক ওই নেতারা জানান, নাসিকের গত নির্বাচনে দল থেকে দু’জন মেয়র প্রার্থী হওয়ায় স্থানীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকরা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যান। এবারের নির্বাচনে কেবল আইভীই প্রার্থী। তাছাড়া হচ্ছে দলীয় নির্বাচন। যেহেতু দ্বন্দ্বও কেটে গেছে এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও ঐক্যবদ্ধ, সেহেতু জনপ্রিয়তার পাশাপাশি এই মনোনয়ন-ঐক্যে দাঁড়িয়ে আইভীই হয়ে যাবেন এবারের মেয়র।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, সেখানে আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। সকলেই এখন ঐক্যবদ্ধভাবে দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে কাজ করছে। এতে দলের প্রার্থীর বিজয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছে।

নিউজ ডেস্ক ।। আপডটে, বাংলাদশে সময় ৭ : ০০ এএম, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬ মঙ্গলবার
এইউ

Leave a Reply