আজকের বিশ্বে প্রভাবশালী মুসলিম নেতাদের মধ্যে শীর্ষে মি. এরদোগান। ২০১৭ সালে তার সরব উপস্থিতি ছিল পুরো বিশ্বজুড়ে। সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ইস্যুগুলোতে নিজেকে জানান দিয়েছেন একজন বলিষ্ঠ অগ্রগামী নেতা হিসেবে।
ফিলিস্তিন সমস্যা, কাতার অবোরোধ, সৌদি-ইসরায়েল ঘনিষ্ঠতা, জেরুজালেম প্রসঙ্গ, ইয়েমেনে সৌদি হামলা, ইরান-রাশিয়া মিত্রতা, আমেরিকা-ন্যাটো-তুরস্ক বৈপরিত্য, রোহিঙ্গা ইস্যু-এসব কিছুতেই তিনি প্রকাশ্যে তুরস্কের অবস্থানকে হাইলাইট করে সারা ফেলেছেন।
সুনাম কুড়িয়েছেন। বাড়িয়ে দিয়েছেন সাহায্যের হাত। তার দেশ বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ মানবিক সাহায্যদাতা। সেই তুরস্ককে আবারো অটোম্যান শক্তিতে বলীয়ান করার মানসে উজ্জিবিত এরদোগানকে নিয়েই টেলিগ্রাফে প্রকাশিত রাজিই আকক-এর নিবন্ধ
এটি মোটেও অতিকথন হবে না যদি বলা হয় রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান বর্তমান দুনিয়ার একজন প্রধানতম রাষ্ট্রনেতা। সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্ক সর্ম্পকে যেকোন রকমের আলাপ-আলোচনাতেই জনাব এরদোগানের নাম নেয়াটা অপরিহার্য হয়ে পরেছে; বিশেষ করে তার ব্যক্তিত্বের দ্যুতি যে ভাবে বাড়ছে, তাতে এই আলাপ-আলোচনা মোটেও বিস্ময়কর নয়।
তাঁর উপর যে দেশের জনগনের একটা বিরাট অংশ এখনো কামাল আতার্তুকের মত নেতার মতার্দশের অনুসারি, ধর্মনিরপেক্ষতা এখনো রাজনৈতিক সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ সেখানে একজন ইসলামপন্থী মতার্দশের রাজনৈতিক নেতা এবং দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ব্যাপক প্রভাব বিস্তারকারী ব্যক্তিত্ব হিসেবে এতউঁচু জনপ্রিয়তা অর্জন সহজ কোন ব্যাপার নয়। সামগ্রীক ভাবে রাজনৈতিক ও চলমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে তিনি যে ভাবে তার লক্ষ্যে অটল রয়েছেন, সেটি তুরস্ক সহ সমগ্র বিশ্বের মনোযোগ আর্কশন করার মত বিষয়।
তুরস্ককে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে, অর্থনৈতিক ভাবে মজবুত ভিত্তির উপরে দাড় করাতে ৬১ বছর বয়সি এই রাষ্ট্রপতির অসামন্য অবাদন রয়েছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে সুদৃঢ় ও সংহত করার সাথে সাথে তুর্কি সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক ক্ষমতায় হস্তক্ষেপের যে দীর্ঘ ঐতিহাসিক ধারা অব্যাহত ছিল, সেটিকে রাজনৈতিক ক্ষমতা চর্চার মধ্যে দিয়ে মোকাবেলা করার মত উদাহরণও তৈরি করেছেন তিনি।
অন্তত এইক্ষেত্রে তার দল তুরস্কের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ কান্ডারি হয়ে চিহ্নিত হবে। কেনান এটা সকালেই জানেন যে তুরস্কের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সেনাবাহিনী অসীম ক্ষমতা ধারণ করত, অন্তত গত শতাব্দীর শেষ ভাগ পর্যন্ত ইতিহাস তাই বলে।
সুতরাং, এটা পরিস্কার যে তুরস্কের ইতিহাস একই সাথে সেনাবাহিনীর ক্যু-এর ইতিহাস; এবং অতিসাম্প্রতিক সময়ে এটাকে একটু ঘুরিয়ে ‘নয়া-অধুনিক’ মিলিটারি ক্যু নামেও ডাকা হয়। কারণ ১৯৯৭ সালে যে ক্যু সংগঠিত হয়েছিলো তাতে সেনাবাহিনীর সরাসরি কোন যোগসুত্র খোলা চোখে ধরা না পরলেও মূল কলকাঠি যে সেনানিবাস থেকেই নাড়া হয়েছিলো এটা সকলেই জানতো।
এরপর প্রায় ১৮ বছর যাবৎ তুরস্কের রাজনৈতিক পরিস্থিত তুলনামূলক ভাবে সহনশীল ছিল, বিশেষ করে ২০০২ সালে জনাব এরদোগানের নেতৃত্বধীন জাস্টিস এন্ড ডেভলপমেন্ট পার্টি ক্ষমতায় আসার পর থেকে।
জনাব এরদোগান একজন প্রভাববিস্তারকারী ব্যক্তি। তার উল্লেখ্যযোগ্য উদাহরণ হলো, খুব রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত আনাতোলিয়ার মত অঞ্চলেও তিনি আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করেছেন, তুর্কিদের মধ্যে তুলনামূলক ভাবে কম সেকুলার জনগণের জন্য যথাযথ জনপ্রতিনিধি নিশ্চিত করেছেন; এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর ব্যবস্থাগ্রহন করছেন। যা সামগ্রীক ভাবে তুরস্কের আর্থসামাজিক অবস্থাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।
তুরস্কের বর্তমান অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে তার অবদান নিয়ে যদিও বির্তকের অবকাশ রয়েছে। বলা হয় থাকে তুরস্কের অর্থনীতি সব সময়েই অগ্রগতির পথে পরিচালিত হয়ে আসছিলো, কিন্তু দেশের বেশির ভাগ মানুষের কাছে এটি এরদোগানের বিচক্ষণতারই ফলাফল। ফলেফলে ধন্যবাদ তারা রাষ্ট্রপতিকেই দিয়ে থাকেন।
আধুনিক তুরস্কের গোরাপত্তনকারী কামাল আতার্তুকের পরে এখন পর্যন্ত এমন আর একজন নেতাও তুরস্কের ইতিহাসে আসেনি, যিনি এত দীর্ঘ সময় ধরে জনাব এরদোগানের মত রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছেন।
সম্প্রতি এরদোগান বিরোধীরা এমন তীব্র ভাবে তার সামালোচনা করেছে যেটা তুর্কি জনগণের পক্ষেও মেনে নেয়া সম্ভব হয়নি। বিশ্লেষকদের মতে, তারা তাদের নেতার প্রতি অসম্মানমূলক কর্মকান্ড মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। দুটি ঘটনার কথা উল্লেখ্য করলেই বিষয়টি পরিস্কার হবে। রাষ্ট্রপতিকে সমালোচনা করায় ১৬ বছর বয়সি এক কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো; আর জনসাধারণের দিক থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও নিন্দা কুড়িয়েছিল মিস তুর্কি নির্বাচিত এক তরুনী, যিনি এরদোগানকে সমালোচান করে একটি কবিতা প্রকাশ করেছিলেন।
জনাব এরদোগানের পক্ষে এমন তীব্র জনসর্মথন অবশ্য সমালোচকদের দুঃচিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমালোচাকরা ধারণা করছেন, এই রকম এক তরফা জনসর্মথন ভবিষ্যতে তুরস্কের বাকস্বাধীনতা চর্চার বাধা হয়ে দাড়াতে পারে।
রিজ থেকে ইস্তাম্বুল, ফুটবল মাঠ থেকে রাজনীতির ময়দান
এরদোগানের জন্ম ১৯৫৪ সালের ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, তুরস্কের কাসিমপাসা অঞ্চলে। তার শৈশবের একটি বড় সময় কেটেছে তুরস্কের কৃষ্ণ সাগর অঞ্চলের উত্তর-পশ্চিম তীরের রিজে শহরে। তার পরিবার জর্জিয়ার বাতুমি থেকে হিজরত করে এসেছিলো ইস্তাম্বুল। ইস্তাম্বুলে স্থায়ীভাবে বসাবাস করার আগে তার পিতা দীর্ঘদিন রিজে’র কোস্টগার্ড হিসেবে চাকুরিরত ছিলেন। এরদোগান অসচ্ছল পরিবারকে চালাতে লেমনেড এবং সিমিত নামে পরিচিত এক ধরণের রুটি বিক্রি করেতেন।
১৯৬০ সালে তিনি কাসিমপাসা পিয়ালি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষালাভ শুরু করেন। ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত ইস্তাম্বুলের ইমাম হাতিপে, যেটি ছিল ধর্মীয় ভোকশনাল উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় সেখানে পড়াশুনা করেছেন।
১৯৬৯ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত তিনি আন্ঞলীক পর্যায়ে ফুলবল খেলোয়ার হিসেবে নাম কুড়িয়েছেন। ১৬ বছর বয়সে তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল তাকে ডিভিশন লীগে খেলার সুযোগ দেয়া হবে। ওই সময়ে তিনি কাসিমপাসা সুপার ক্লাবের হয়ে খেলতেন এবং তৎকালিন সংবাপত্রের তথ্য থেকে জানা যায়, তুরস্কের অন্যতম সেরা ক্লাব ‘ফিনেরবাক’ তাকে দলে নিতে চেয়েছিলো কিন্তু পিতার অনাগ্রহে তিনি যোগদান করেননি। পরর্বতিতে কাসিমপাসা সুপারসের খেলার মাঠ তার নামে নামকরণ করা হয়।
তরুন বয়সেই রাজনীতির সাথে যুক্ত হন এরদোগান। তার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের সূত্র জানা যায়, উচ্চমাধ্যমিক পাঠ শেষে র্মারমারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত অবস্থায় তিনি ন্যাশনাল তুর্কি স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনে যোগ দেন।
১৯৭০ দশকে প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল স্যালভাতিন পার্টির ছাত্র সংগঠনের প্রসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার মধ্যে দিয়ে তার সিরিয়াস রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু হয় বলে অন্য এক নির্ভরযোগ্য তথ্য সূত্রে জানা যায়। তবে ১৯৮০’র মিলিটারি ক্যু’র পরে ওই সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়। পরর্বতিতে সেনাবাহীনির ক্যু চলাকালিন সময়ে তিনি বেসরকারি কোম্পানির হিসাবরক্ষক এবং ম্যানেজার হিসেবে চাকুরি করে জীবন নির্বাহ করেন। ১৯৮১ সালে বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পোষ্ট গ্রাজুয়েশন সমাপ্ত করেন। এবং ১৯৭৮ সালে এমনি গুলবারানকে বিয়ে করেন, ব্যক্তিজীবনে তিনি দুই কন্য এবং দুটি পুত্র সন্তানের জনক।
ক্যাম্পাসের ছাত্র রাজনীতি থেকে কারাগারের বন্দি শিবিরে
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অবস্থায় তুরস্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নেখমাতিন এরবাকানের সাথে তার সাক্ষাৎ হয়। জনাব এরবাকান ছিলেন তুরস্কের প্রথম ইসলামিক পার্টির প্রধানমন্ত্রী। বলা হয়ে থাকে তার হাত ধরেই জনাব এরদোগান ইসলামী রাজনীতির মতাদর্শে থিতু হন। এরবাকানই এই তরুন রাজনৈতিক শিক্ষানবিসের একজন মেন্টর, পথ প্রর্দশক এবং দিকর্নিদেশক হিসেবে ভূমিকা রেখেছিলেন।
১৯৮০’র মিলিটারি ক্যু এর তিন বছর পরে, ১৯৮৪ তে ওয়েলফেয়ার পার্টি (রাফা পার্টি) গঠন করা হয় এবং জনাব এরবাকান বাইগুল জেলার পার্টি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। উক্ত বছরেই তিনি পার্টির ইস্তাম্বুল প্রভিন্সের প্রধান হিসেব নির্বাচিত হন, এবং পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহি পরিষদের সদস্যপদ লাভ করেন।
সেন্টার ফর ইকোনমিকস এবং ফরেইন পলিসি স্টাডিজ নামে পরিচিত তুর্কি থিংক ট্যাংক গ্রুপের বোর্ড মেম্বার আহমেদ হানের ভাষ্যমতে, জনাব এরদোগান ‘স্ট্রিট ইসলাম’ নামে পরিচিত নেখমাতিন এরবাকান পরিচালিত জাতীয়তাবাদি ইসলামি রাজনৈতিক মতার্দশের একজন উজ্জল ও সফল প্রতিনিধি।
জনাব এরদোগান প্রথম কোন ইসলামপন্থী হিসেবে ১৯৯৪ সালে যখন ইস্তাম্বুলের মেয়ার নির্বাচিত হন, সত্যিকারের রাজনৈতিক ক্ষমতা চর্চার সুযোগ তখন তার হাতের মুঠোয় ধরা দেয়। মেয়রকালিন সময়ে তার সামালোচকরা পর্যন্ত স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে, তিনি নিজেকে একজন কর্মদক্ষ এবং বিচক্ষণ মেয়র হিসেবে প্রমান করতে সক্ষম হন। বিশেষ করে পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যার কর্যাকর সমাধনে সফল হন, এবং ইস্তাম্বুল নগরীর সবুজায়নে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন।
একজন ইসলামপন্থী মেয়র হিসেবে তার দায়িত্ব পালনের সময়কাল বেশ ঘটনাবহুল। সেই সময়েই প্রাচীন অটোমান আমলের এক বরেণ্য কবির কবিতার কিছু পংক্তি,পূর্ব তুরস্কের সিরাত শহরে সর্মথকদের উদ্দেশ্যে পাঠ করার অভিযোগে ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বর মাসে তুর্কি আদালত তাকে ১০ মাসের কারাদন্ড প্রদান করে। তার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ ছিল, ধর্মীয় উষ্কানি প্রদান। কবিতার পংক্তিগুলো বাংলায় এরকমঃ
মসজিদগুলো আমাদর ঘাঁটি
গম্বুজগুলো তো আমাদের শিঁরনাস্ত্র
আর মিনারগুলো সব আমাদের বেয়নেট
এবং আমাদের ইমানদারগণ সকলে মুজাহিদ…!
জনসম্মুক্ষে এই কবিতা পাঠ করার কারণে তুরস্কের আদালত এটিকে কামালিস্ট ভাবার্দশের, বিশেষ করে ধর্মনিরপেক্ষতা যার প্রধানতম মূলনীতি, বিরুদ্ধচারণ বলে ঘোষণা করে। প্রবল প্রতিবাদ সত্যেও তুরস্কের সাংবিধানিক আদালত ওয়েলফেয়ার পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। বন্ধ করে দেয় হয় এই পার্টির সকল কার্যক্রম। আদালতের ভাষ্য ছিল, তুরস্কের কামালপন্থী ভাবার্দশের ভিত্তিভূমিকে, বিশেষ করে ধর্মনিরপেক্ষ চেতনাকে বিনাশ করার কার্যক্রম পরিচালনার দায়ে ওয়েলফেয়ার পার্টিকে নিষিদ্ধ করা হলো।
মেয়র পদে ইস্তফাদ দিয়ে জনাব এরদোগান আদালত নির্ধারিত দন্ড কার্যকর করতে ১৯৯৯ সালের মার্চ থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত কারাবরণ করেন।
কারাগার থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এবং এখন রাষ্ট্রপতি আসনে
২০০১ সালে জনাব এরদোগানের নেতৃত্বে, তার রাজনৈতিক সহকর্মীরা একত্রিত হয়ে, যাদের মধ্যে তুরস্কের সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল্লাহ গুলও ছিলেন, জাস্টিস এন্ড ডেভলামেন্ট পার্টি (একে পার্টি নামে তুর্কিতে পরিচতি) প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০২ সালের নভেম্বর মাসে এই দল তুরস্কের বৃহৎ দল হিসেবে সংসদ নির্বাচনে ৩৪.৩ শতাংশ ভোটে নির্বাচিত হয়। যদিও আদালতের নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকায় জনাব এরদোগান নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে সংক্ষম হননি। কিন্তু ২০০৩ সালের মার্চে একে পার্টি তাদের ব্যাপক সফলতার সুবিধা কাজে লাগিয়ে সংবিধান সংশোধন করতে সক্ষম হয় এবং জনাব এরদোগানকে তার স্ত্রীর জন্মস্থান সিরাত থেকে প্রার্থী হিসেবে একটি উপ-নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন এবং বিপুল ভোটে তিনি জয় লাভ করেন।
সে মাসেই তিনি আব্দুল্লাহ গুলের কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রীত্ব গ্রহন করেন, আর ২০১৪ সালের আগষ্ট মাস পর্যন্ত সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর জনাব এরদোগান তুরস্কের বার’তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন।
জনাব রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের ব্যক্তি ও কর্ম জীবন
রুটি বিক্রেতা থেকে আধা-প্রফেশনাল ফুটবল খেলোয়ার; অতপর কারাবন্দি পরবর্তীতে তুরস্কের রাষ্ট্রপতির পদে আসিন জনাব এরগোগানের বর্নাঢ্যময় এবং ঘটনাবহুল জীবনের সারসংক্ষেপ পাঠকের উদ্দেশ্যে আমরা তুলে ধরছিঃ
১৯৫৪
২৬ শে ফেব্রুয়ারি তুরস্কের কাসিমপাসা অঞ্চলে রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান জন্মগ্রহন করেন। তার বাবার নাম আহমেদ এরদোগান এবং মা তানজিলা এরদোগান।
১৯৬৯
এ্যামেচার লীগ খেলার মধ্যে দিয়ে তার ফুটবলার জীবন শুরু হয়। যদিও দেশের সেরা প্রফেশনাল ফুটবল দল ফিনেরবাকে যোগদানের সুযোগ তৈরি হয়, কিন্তু পিতার আদেশ তিনি দলের সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়া থেকে বিরত থাকেন।
১৯৭৩
সেকেন্ডারি স্কুলের পাঠ শেষ করেন ইস্তাম্বুলের ইমাম হাতিপ থেকে, যেটি ছিল ধর্মীয় ভোকশনাল উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়। তিনি ইয়েপ সেকেন্ডারি বিদ্যালয় থেকেও একটি ডিপ্লোমা সমাপ্ত করেন।
১৯৭৮
বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। স্ত্রীর নাম এমিনি গুলবারান। তাদের দুটি মেয়ে, ইসরা এবং সুম্মী। এবং দুই পুত্র সন্তান: নেখমাতিন বিলাল এবং আহমেত বুরাক।
১৯৮৪ থেকে ১৯৮৫
রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু হয়। ১৯৮৪ তে ৩০ বছর বয়সে ওয়েলফেয়ার পার্টির বেইগুল জেলার প্রধান নির্বাচিত হন এবং একই বছরে তিনি পার্টির কেন্দ্রীয় র্নিবাহী কমিটির সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং ইস্তম্বুল প্রোভিন্সের পার্টি প্রধান হিসেব দায়িত্বলাভ করেন।
১৯৮৮
সাবেক নৌচালক পিতা আহমেদ এরদোগান, যিনি তুরস্কের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সমুদ্রতীরবর্তি শহর রিজের কোস্টগার্ড হিসেবেও কর্মরত ছিলেন, তিনি ইন্তেকাল করেন।
১৯৯৪
মার্চ মাসে জনাব এরদোগান প্রথম ইসলামপন্থী রাজনৈতিক হিসেবে ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হন। সর্মথক ও সমালোচাকরা বলেন মেয়র হিসেব দায়িত্বরত অবস্থায় তার সময়কালে ইস্তাম্বুল শহর ছিল উৎপাদনশীল, এবং তিনি শহরটির সবুজায়নে প্রধাণ ভূমিকা পালন করেন।
১৯৯৭
জনসম্মুখ্যে ইসালামী মতার্দশের কবিতা পাঠ করার অপরাধে জনাব এরদোগানকে আদালত ১০ মাসের কারাদন্ড প্রদান করে। আর ওয়েলফেয়ার পার্টি কে তুরস্কের রাজনীতিতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
২০০১
আবদুল্লাহ গুল সহ অন্যান্য রাজনৈতিক সহকর্মিদের নিয়ে তিনি আগষ্ট মাসে একে পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন।
২০০২
নভেম্বর মাসের সাধারণ নির্বাচনে একে পার্টি দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেব জয়লাভ করে। যদিও আইনি নিষেধাজ্ঞার কারণে জনাব এরদোগানে পক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহন করা সম্ভব হয় নি।
২০০৩
আইনি নিষেধাজ্ঞা অপসারণ করে একে পার্টি জনাব এরদোগানকে একটি উপ-নির্বাচানে প্রতিদ্বন্দীতার মধ্যে দিয়ে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে জয়যুক্ত করে আনে। তিনি তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী আবদুল্লাহ গুলের কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রীত্ব গ্রহন করেন।
২০১১
ডাক্তারি আস্ত্রপাচারের সম্পন্ন হয়। ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার গুজব ছড়িয়ে পরলেও আসলে সেটি ছিল একটি রুটিন সার্জারি। ওই বছরের অক্টোবর মাসে তার মাতা ইন্তিকাল করেন।
২০১৪
আগষ্ট মাসে তিনি তুরস্কের রাষ্ট্রপতি পদে আসিন হন। যদিও তুরস্কের রাষ্ট্রপতিকে কার্টুন হিরো হিসেবে চিত্রিত করা হয়, তারপরেও এটি উল্লেখযোগ্য যে ৫১ শতাংশেরও বেশি ভোটে নির্বাচিত জনাব এরদোগান তুরস্কের প্রথম নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি।
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৩:৪০ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭, রোববার
এএস