হাজীগঞ্জ

কে আমার মা’ কেনো তাকে খুন করা হয়েছিলো?

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দুই মাসের শিশুর মায়ের মুত্যুর রহস্য অন্ধকারে চলে যাচ্ছে। মামলা নেয়নি পুলিশ, পার পেতে যাচ্ছে অপরাধীরা। ময়না তদন্ত শেষে কবর দেওয়ার পর আর কোন কূল কিনারা পাচ্ছেন না গৃহবধূর পরিবার।

ভূক্তভোগী পরিবার ও দুই মাসের কোলের শিশু জুবায়েরও মায়ের মৃত্যুও রহস্য হয়তো একদিন বড় হয়ে জানতে চাইবে? কে আমার মা’ কেন তাকে খুন করা হয়েছিলো?

গত ২৪ সেপ্টেম্বর হাজীগঞ্জ পৌরসভার ১১নং ওয়ার্ড বেপারী বাড়ী থেকে দুই মাসের কোলের শিশুর পাশে মায়ের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

জানা যায়, গত দুই বছর পূর্বে উপজেলার কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস (১৯) এর সাথে বিয়ে হয় পৌর এলাকার রান্ধুনীমুড়া বেপারী বাড়ির মো.রানা মিয়ার সাথে। বিয়ের সময় রানাকে সিএনজি কিনার জন্য নগদ দুই লাখ টাকা ও ৫ ভরি স্বর্ণসহ জাবতীয় মালামাল দিয়ে সাজিয়ে দেয় জান্নাতের পরিবার।

কিন্তু রানা পূর্বেও যৌতুকের জন্য আরেকটি বউ বিদায় করেছে তা জানতেন না জান্নাতের পরিবার। তার পরেও মেয়ের সুখের দিকে লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন সময়ে সার্বিক সহযোগিতা করে আসছিল জান্নাতের পরিবার। বিয়ের কিছু দিন পর দেখা যায় জামাই রানা সিএনজি না কিনে উক্ত টাকা নেশা করে উড়ে ফেলেছে। পরবর্তীতে টাকার জন্য কয়েকবার স্ত্রী জান্নাতকে বাপের বাড়িতে পাঠায়। এ ভাবে নেশাখর জামাই রানার অত্যাচার বেড়ে যাওয়া গৃহবধূ কয়েক মাস বাপের বাড়িতে অবস্থান নেয়।

এরই মধ্যে তাদের ঘর আলোকিত করে সংসারে আসে শিশু জুবায়ের। স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে সিজারের মাধ্যমে জন্ম নেয় জুবায়ের। সেখানে মা ও শিশু প্রায় সপ্তাহখানেক থাকার পর সম্পূর্ণ খরচ পরিশোধ করে জান্নাতের পরিবার।

কিন্তু নেশাগ্রস্ত রানা মিয়ার স্ত্রী ও নবজাতকের খবর না নিয়ে পুণরায় জান্নাতের পরিবারের কাছ থেকে টাকা দাবি করে। জান্নাতের পরিবার কিছু টাকা নিয়ে মেয়েকে স্বামীর বাড়ীতে পাঠায়।

কিন্তু দুই দিন না যেতে পূনরায় অতিতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রানা গভীর রাতে বাসায় এসে স্ত্রী জান্নাতকে এলোপাতাড়ী মারধর শুরু করে। পরের দিন ২৪ সেপ্টেম্বর রবিবার সকালে দুই মাসের কোলের শিশুর পাশে জান্নাতের লাশ ফেলে ৮ বছরের ছোট শালিকা খাদিজাকে মকিমাবাদ এলাকার কাশারী বাড়ীর মনির হোসেনের ঘরে রেখে পালিয়ে যায় স্বামী রানা।

হাজীগঞ্জ থানার এস আই বলাই দেবনাথ ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই মাসের কোলের শিশুর পাশ থেকে গৃহবধু জান্নাতের লাশ উদ্ধার করে।

ওই সময়ে গা বাঁচাতে রানার পরিবার পুলিশের কাছে জবানবন্ধী দেয় জান্নাত গলায় ফাঁস দিয়েছে এবং রশি কেটে তরা খাটের উপর শুয়ে রেখেছি। লাশ ময়না তদন্ত শেষে জান্নাতের বাপের বাড়িতে পারিবারিক কবরের স্থানে দাফন সম্পন্ন করে।

ঘটনার রাতে জান্নাতের ছোট বোন খাদিজা আক্তার ওই বাড়িতে ছিল। সে বলে, ‘আমার বোনকে রাতে দুলাভাই অনেক মেরেছে। তার পর আমার ঘুম চলে এসেছে আমি কিছু বলতে পারবো না। সকালে দুলাভাই রানা ঘুম থেকে উঠিয়ে আমার খালাতো বনের বাসা কাশারী বাড়ীতে দিয়ে যায়। কিন্তু সকালে আসার সময় আপুর সাথে কথা বলতে গিয়ে দেখি আপু ঘুমিয়ে আছে। কোন কথা আমার সাথে বলেনি।’

এদিকে দুই মাসের কোলের শিশু জুবায়েরের দায়িত্ব নিয়ে অবহেলার অভিযোগে জান্নাতের মা পারুল বেগম তার কাছে নিয়ে আসে। কিন্তু মায়ের দুধের অভাবে শিশুটির অবস্থা খারাপ পরিস্থিতি দেখা দেয়ায় হাজীগঞ্জ প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে নানুর কাছে রয়েছে বলে জানা যায়।

এদিকে গৃহবধূ জান্নাতের ময়নাতদন্তের দোহাই দিয়ে পুলিশ এখন পর্যন্ত কোনো মামলা নেয়নি বলে অভিযোগ করেন জান্নাতের পরিবার।

পরে চাঁদপুর পুলিশ সুপার শামসুন্নাহারের কার্যালয়ে জান্নাতের মা পারুল বেগম গিয়ে আকুতি করলে তাকে লিখিত অভিযোগ দায়েরের পরামর্শ দেন বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে জান্নাতের লাশ উদ্ধারকারী থানার এস আই বলাই দেবনাথ বলেন, মামলা নেওয়ার বিষয়ে আমার কোন এখতিয়ার নেই। বিষয়টি সরাসরি ওসি স্যারের কাছে খুলে বলার প্রস্তাব দেন বলে পরিবারটির কাছে জানান।

দুই মাসের কোলের শিশু জুবায়ের তার মায়ের মৃত্যুও রহস্য হয়তো একদিন জানতে চাইবে। তাই নিহত জান্নাতের পরিবারের দাবি প্রশাসন মামলা আমলে নিয়ে যেন মেয়ের খুনি জামাই রানাসহ শুশুর-শাশুড়ীকে গেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসে। এর জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান তারা।

এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাবেদুল ইসলাম বলেন, গৃহবধু জান্নাতের ময়নাতদন্তের রির্পোট এখনো আমাদের কাছে এসে পৌঁছেনি। রিপোর্ট আসলে সে অনুযায়ী মামলার অগ্রগতি কার্যকর করা হবে।

প্রতিবেদক- জহিরুল ইসলাম জয়
: আপডেট, বাংলাদেশ ০৯:০৩ পিএম, ০৭ অক্টোবর, ২০১৭ শনিবার
ডিএইচ

Share