রাজনীতি

কেমন আছেন গ্রেনেড হামলা মামলার জজ মিয়া

২১ আগস্ট ইতিহাসের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার আলোচিত নাম জজ মিয়া । গ্রামের সহজ-সরল এই যুবককে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে স্বীকারোক্তি আদায় করে গ্রেনেড হামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছিলো তৎকালীন সরকার।

জন্ম দেওয়া হয় জজ মিয়া নাটকের। কিন্তু পরবর্তী সময়ে মামলাটি অধিক তদন্তের ইতিহাসের জঘন্যতম এই হামলার রহস্য উন্মোচিত হয়। চাপের মুখে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা নিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলেও পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জজ মিয়াই তুলে ধরেন প্রকৃত সত্য। এর মধ্যে বিনা অপরাধেই পাঁচ বছর কারাভোগ করতে হয়েছিল এই জজ মিয়াকে।

ঘটনার প্রায় ১৬ বছর পরে এসেও সেই দিনের কথা মনে হলে আঁতকে উঠেন জজ মিয়া। গ্রেনেড হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সবাই বিভিন্নভাবে সরকারি সহায়তা পেলেও, আশ্বাসের পর নিজে কিছুই না পাওয়ার আক্ষেপও রয়েছে তার।

তিনি বলেন, আমি হয়তো সরাসরি হামলায় আহত হইনি, কিন্তু এ ঘটনায় ভিন্নভাবে বিশাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।

এখন তিনি নারায়ণগঞ্জের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক হিসেবে কর্মরত জজ মিয়া। সামান্য বেতনে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অর্থকষ্টের মধ্যেই ওই এলাকায় বসবাস করছেন।

কেমন আছেন জানতে চাইলে কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সামান্য ড্রাইভারির বেতন দিয়ে কোনোভাবে দিন চলে যাচ্ছে। গ্রেনেড হামলার ক্ষতিগ্রস্তরা সরকারি সহায়তা পেলেও আমি কোনো সহায়তা পাইনি। বিভিন্ন সময় আশ্বাস দেওয়া হলেও আমাকে কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি।

‘অথচ আমি নিজেকে হুমকির মুখে রেখে সত্য ঘটনা উদঘাটনে আদালতে স্বাক্ষ্য দিয়েছি। এখনো আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাই-যোগ করেন তিনি।

২১ আগস্টের ভয়াবহ স্মৃতি হাতড়ে জজ মিয়া বলেন, ওই দিন আমি বাড়িতে বাবুলের চায়ের দোকানে ছিলাম টেলিভিশনে দেখে এলাকার লোকজনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলি। সেখানে গ্রামের মুরব্বিরা সবাই ছিলেন। কিন্তু সেই আমাকেই কি না বানানো হয় গ্রেনেড হামলাকারী!

২১ আগস্টের সাত-আট মাস পর আমাকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রামের চৌকিদার বাড়িতে এসে বলেন, তোমার নামে থানায় মামলা আছে। এরপর সেনবাগ থানার কবির দারোগা এসে আমাকে হ্যান্ডকাফ লাগান। থানায় নেওয়ার পর কবির দারোগা বলেন, তোমার নামে এখানে কোনো মামলা নেই। ঢাকা থেকে সিআইডির এসপি রশিদ সাব আসতেছেন। ঢাকায় তোমার নামে বড় মামলা আছে।

সেনবাগ থানায় এসপি রশীদ সাব ক্রসফায়ারে মারার ভয় দেখিয়ে বলেন, যা শিখিয়ে দিব সেগুলো কোর্টে বলতে হবে। তিনি আমাকে থানার মধ্যে ব্যাপক মারধর করেন। একপর্যায়ে বলেন, আমাদের কথা না শুনলে তোরে ক্রসফায়ারে দেবো। আর কথা শুনলে তোরে বাঁচাইয়া আনবো। তোর ফ্যামিলিকে প্রতিমাসে নগদ আড়াই হাজার টাকা দেবো।

জজ মিয়া আরো বলেন, এরপর আমাকে নোয়াখালীর সেনবাগ থানা থেকে ঢাকায় নিয়ে আসে। ক্রসফায়ারে মারার ভয় দেখিয়ে তারা যা শিখিয়ে দেন সেগুলো কোর্টে বলতে বলেন। আমি সেভাবেই বলি।

এদিকে, ঘটনার প্রায় ১৪ বছর পর হলেও প্রকৃত দোষীদের শাস্তির রায়ে সন্তুষ্ট জজ মিয়া। তবে উচ্চ আদালতে বিষয়টি দ্রুত নিস্পত্তির মাধ্যমে দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

আগে রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকলেও এখন নিজেকে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে দাবি করেন জজ মিয়া। আর এজন্য কর্মী হিসেবেই দল এবং দলের নেতৃত্বের কাছে স্বীকৃতি চান।

আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২০০৪ সালের ২১ শে অগাস্ট গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। সেদিন বিকেলে ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে একটি ট্রাকে তৈরি করা অস্থায়ী মঞ্চে দলের প্রধান এবং তখনকার বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা বক্তৃতা শেষ করার পরই গ্রেনেড হামলা হয়।

অতর্কিত ওই হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কয়েক শত নেতাকর্মী।

ঢাকা ব্যুরো চীফ, ২১ আগস্ট ২০২০

Share