কেন্দ্র সচিবের চরম গাফিলতি ও দায়িত্বহীনতায় নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের অনিয়মিত প্রশ্ন দিয়ে পরীক্ষা গ্রহণ করেও টনক নড়েনি কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের। কোনো প্রকার অভিযোগও করেনেনি সংশ্লিষ্ট বোর্ড কিংবা জেলা প্রশাসনকে।
চাঁদপুর সদর উপজেলায় দাখিল বাংলা পরীক্ষায় একটি কেন্দ্র সচিবের গাফিলতিতে ৩শ’ ৬ জন পরীক্ষার্থী ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। ফলে পরীক্ষায় অংশ নেয়া পরীক্ষার্থীদের চূড়ান্ত ফলাফল নিয়ে অভিভাবক ও পরীক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন।
পরীক্ষার প্রমাণপত্র হিসেবে গত বৃহস্পতিবার চাঁদপুর নতুন বাজারের আহম্মদিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। তবে মাদ্রাসার নির্মাণ কাজের জন্য চাঁদপুর সরকারি কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয়ে ওই পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হয়।
ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থীরা জানায়, বাংলা বিষয়ের নৈব্যত্তিক (এমসিকিউ) পরীক্ষায় তাদের অনিয়মিত (২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ) প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হয়। যেখানে তাদেরকে সরবরাহ করার কথা ছিলো নিয়মিত (২০১৪-১৫) ২০১৬ সালের পরীক্ষার প্রশ্ন। কিন্তু পরীক্ষার প্রথম দিকে কোন পরীক্ষার্থী বুঝতে না পারা কিংবা কোন পরিদর্শক তাদের না বলার কারণে এ প্রশ্ন দিয়েই পরীক্ষা দেয়া শুরু করে।
কিন্তু তারা পরীক্ষা শেষে বিষয়টি বুঝতে পেরে শিক্ষকদের ঘটনাটি জানালেও সংশ্লিষ্টরা তা সমাধানের চেষ্টা করেনি। ফলে শিক্ষার্থীরা এমসিকিউ’র ওএমআর শীটে নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে বৃত্ত ভরাট করছে। কিন্তু ওই শীট মূল্যায়ণের সময় নিয়ম অনুযায়ী ‘নিয়মিত ছাত্র’ হিসেবে দেখা হলে প্রায় সব পরীক্ষার্থীর’ই ফলাফল বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।
ওই কেন্দ্রে সদর উপজেলার পশ্চিম সকদি আলিম মাদ্রাসা, তরপুরচন্ডী আলী দাখিল মাদ্রাস, মাদ্রাসাতু ইশায়াতিল উলুম গাছতলা মাদ্রাসা, মান্দ্রারী মাদ্রাসা ও বিষ্ণুদী আলিম মাদ্রাসার মোট ৩শ’ ৬ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। তাদের মাঝে মাত্র ৩ জন অনিয়মিত পরীক্ষার্থী বলে জানা গেছে। ওই তিনজন অনিয়মিত ছাত্রের জন্য একই কেন্দ্রে ৩শ’ প্রশ্নপত্র কিভাবে গিয়েছে তা নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়।
তবে এত বড় আকারের ভুলের পরও কেন্দ্র সচিব মাও. মোস্তাফিজুর রহমান কোন ভূমিকা না নেয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষার্থীদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্র্থীদের ফলাফলে সমস্যা হবে কি-না জানতে চাইলে ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠানগুলার বেশ কয়েকজন শিক্ষক জানান, রচনামূলক পরীক্ষায় ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিলে খাতা মূল্যায়নে পরীক্ষকরা লেখার ধরন অনুযায়ী ও প্রশ্নের আলোকে নম্বর বন্টন করতে হয়তো পারবেন। কিন্তু এমসিকিউ পরীক্ষায় ওএমআর শীট যেহেতু কম্পিউটারে (ওএমআর মেশিনের সাহায্যে) দেখা হয় বারকোডের ভিত্তিতে ফলে সব পরীক্ষার্থীই নিয়মিত হয়ে অনিয়মিত প্রশ্নের আলোকে বৃত্ত ভরাট করায় এখন ওই অংশে অকৃতকার্য হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ কোনো বিষয়ের নৈব্যত্তিক (এমসিকিউ) পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে সে ওই বিষয়ে অকৃতকার্য হিসেবে গণ্য করে শিক্ষা বোর্ড।
এ বিষয়ে কেন্দ্র সচিব মাও. মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, অভিযোগটি তিনি শুক্রবার জানতে পেরেছেন। এ নিয়ে বেশ কয়েকজন অধ্যক্ষের সাথে আলাপ করেছেন। তবে বিষয়টি এখনো জেলা প্রশাসনকে জানাননি।
এমন গুরুতর অভিযোগ কি কারণে জানাননি জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ফলাফল কি হবে তা শিক্ষক হিসেবে তিনি’ই বেশি জানেন। সাংবাদিকরা সাংবাদিকদের সর্ম্পকে ভাল জানে।
অপরদিকে নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশ কয়েকজন শিক্ষক জানান, কেন্দ্র সচিব তার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পুরাণবাজার ওসমানিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে পরীক্ষা নেয়ায় কেবল ঈর্ষান্বিত হয়ে কাজটি করেছেন। কারণ বিদ্যমান পরিস্থিতিতে যেসব প্রতিষ্ঠানে শতভাগ অকৃতকার্য হয় সেসব প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন বন্ধ রাখা হয়। পরে ওই সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
তবে তাদের দাবি একজন ব্যক্তির কারণে কয়েকজন শিক্ষকের বেতন বন্ধ হলে সমস্যা নেই, কিন্তু ৩শ’ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অন্ধকার করার এখতিয়ার কারো নেই।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেট জানান, যে কোন কেন্দ্রে অনিয়ম বা অসঙ্গতি দেখা দিলে তাৎক্ষণিক প্রশাসনকে জানানোর নিয়ম। তবে কি কারণে জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়নি তা বোধগম্য নয়।
তিনি বলেন, গণমাধ্যমে এমন অভিযোগ আসলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে শিক্ষার্থীদের ফলাফলে কোন ক্ষতি হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, এমসিকিউ পরীক্ষায় নিয়মিত-অনিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে উত্তরপত্র ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় দেখা হয়। সেক্ষেত্রে একটা আশঙ্কা থেকেই যায়।
দেলোয়ার হোসাইন[
: আপডেট ১:১২ পিএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, রোববার
ডিএইচ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur