কৃষ্ণ সাগরে গত শুক্রবার দুটি তেলবাহী ট্যাংকারে হামলা চালায় ইউক্রেনের নৌবাহিনী। এর মধ্যে এমটি কায়রোস জাহাজের ২৫ নাবিকের মধ্যে চারজন বাংলাদেশি। সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করে তুর্কি কোস্টগার্ড। বর্তমানে তারা তুরস্কে আছেন। আইনি প্রক্রিয়া শেষ হলেই যত দ্রুত সম্ভব ৪ নাবিক দেশে ফিরতে চান। তারা হলেন—নরসিংদীর মাহফুজুল ইসলাম প্লাবন, কুষ্টিয়ার আল-আমিন, ধামরাইয়ের হাবিবুর রহমান ও চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের আজগর হোসেন।
ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুল ইসলাম প্লাবন-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে ঘটনার বর্ণনা করেন। প্লাবন বলেন, ‘হামলার সময় ডিউটিতে ছিলাম না। জাহাজের রেলিংয়ের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ স্পিডবোটের মতো ২-৩টি বস্তু দ্রুতগতিতে জাহাজের দিকে আসতে দেখি।’
‘সেগুলো আসলে ড্রোন ছিল। বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে প্রথম ড্রোনটি জাহাজের প্রপেলারে আঘাত করে। প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরণ হয়। কেঁপে ওঠে পুরো জাহাজ,’ বলেন তিনি। তবে এখন তার নিরাপদে আছেন বলে জানান।
তুরস্ক উপকূলের কাছে কৃষ্ণ সাগর অতিক্রমের সময় দুটি তেলবাহী ট্যাংকারে এ হামলা চালায় ইউক্রেন। এমটি কায়রোস সেসময় মিসরের সুয়েজ বন্দর থেকে রাশিয়ার নভোরোসিস্ক বন্দরে যাচ্ছিল অপরিশোধিত তেল লোড করতে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়—জাহাজ দুটি রাশিয়ার ‘শ্যাডো ফ্লিট’-এর অন্তর্ভুক্ত, নিষেধাজ্ঞা এড়াতে যেগুলো ফাঁকি দিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত হয়।
প্লাবন আড়াই মাস আগে জাহাজটিতে যোগ দেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছিল এটি চীনা জাহাজ। তবে এখন জানা গেছে জাহাজটি রাশিয়ার।’
হামলার দুই ঘণ্টা পর তুর্কি কোস্টগার্ডের উদ্ধারদল জাহাজের ২৫ নাবিককে উদ্ধার করে তুরস্কে নিয়ে যায়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাদের ইজমিট শহরের একটি হোটেলে রাখা হয়।
প্লাবন বলেন, ‘প্রথম হামলার কিছু সময় পর জাহাজের পোর্টসাইডে দ্বিতীয় ড্রোন হামলা হয়। এতে বড় আকারের আগুন ধরে যায়। বিস্ফোরণে জাহাজের দুটি লাইফবোটই ধ্বংস হয়ে যায়।’
‘জাহাজ থেকে বের হওয়ার আর কোনো উপায় ছিল না। শেষ ভরসা ছিল পানিতে ঝাঁপ দেওয়া। কিন্তু নভেম্বরের এই সময়ে সাগরের পানি বরফশীতল। আর আগুন পানিতেও ছড়িয়ে পড়েছিল,’ বলেন তিনি।
ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুল ইসলাম প্লাবন জানান, জাহাজের ক্যাপ্টেন ধৈর্য ধরে তুর্কি নৌবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখছিলেন। প্রায় দুই ঘণ্টা পর তুর্কি কোস্টগার্ডের একটি উদ্ধারকারী জাহাজ তাদের কাছে পৌঁছায়।
এর আগে একটি বাণিজ্যিক জাহাজ আগাতে থাকলেও আগুনের কারণে কাছে আসতে পারেনি বলেও উল্লেখ করেন তিনি। ‘আমাদের জাহাজ খালি ছিল—এ কারণেই বেঁচে গেছি,’ বলেন প্লাবন।
হামলার পর নাবিকরা মানসিকভাবে আঘাতগ্রস্ত। তারা এখন দ্রুত দেশে ফিরতে চান।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘চার বাংলাদেশি নাবিকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। জাহাজ মালিক প্রতিষ্ঠান ও তুর্কি কোস্টগার্ড সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে।’
তথ্যসূত্র: অনলাইন ডেস্ক
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur