Home / কৃষি ও গবাদি / কৃষি বিপ্লবে বঙ্গবন্ধুর অবদান
farmar
File photo

কৃষি বিপ্লবে বঙ্গবন্ধুর অবদান

বঙ্গবন্ধু শাসনভার গ্রহণকালে দেশের ৮৫ % লোকই ছিল কৃষির ওপর নির্ভরশীল। জাতীয় আয়ের অর্ধেকেরও বেশি ছিল কৃষিখাত নির্ভর। বঙ্গবন্ধু জানতেন যে কৃষিপণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে না পারলে দেশের অর্থনৈতিক মেরুদ সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। আর সে জন্যই ডাক দিয়েছিলেন সবুজ বিপ্লবের।

কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে এ স্লোগানকে শুধু স্লোগান হিসেবেই ব্যবহার করেননি। নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন এ দেশের শোষিত, বঞ্চিত, অবহেলিত কৃষকদের মুখে হাসি ফোঁটাতে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকালের তথ্য থেকে জানা গেছে, ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের শাসনামল বা বঙ্গবন্ধুর শাসনামল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার পর অবসান ঘটে ওই শাসনামলের। তাঁর শাসনামল স্থায়ী ছিল মাত্র ৩ বছর ৭ মাস ৩ দিন। এ সময়ের মধ্যে অন্যান্য খাতের পাশাপাশি কৃষিখাতেও রেখেছেন অসামান্য অবদান।

মুক্তিযুদ্ধের পর ২২ লাখেরও বেশি কৃষক পরিবারকে পুনর্বাসন করার দায়িত্ব বর্তে ছিল বঙ্গবন্ধু সরকারের ওপর। বেশ দক্ষতার সাথেই পাণ করেছিলেন সে দায়িত্ব। এ পুনর্বাসন ছিল সত্যিকার অর্থেই পুনর্বাসন।

শুধু বসতবাড়ির জন্য কয়েকটি টিন কিংবা একটি লাঙ্গল কেনার টাকা দিয়ে দায়সারাভাবে কাজ সারা হয়নি। তাদের কৃষিযন্ত্রপাতি ও অন্যান্য কৃষি বিষয়ক মৌলিক কাঠামো নির্মাণে সহায়তাদানের পাশাপাশি নামমাত্র মূল্যে কিংবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ, বীজ, সার, কীটনাশক সরবরাহ করেছিলেন।

কৃষি সংস্কারে বঙ্গবন্ধুর অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের কৃষির মতো প্রকৃতি নির্ভর অনিশ্চিত এবং ঝুঁকিপূর্ণ খাতে অর্থায়নের জন্য এবং কৃষকরা যাতে সুবিধা পান সে লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে এর ৩৩৬ টি শাখা স্থাপন করেন। এছাড়া জমির সমস্ত বকেয়া খাজনা মওকুফসহ ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করেন।

পরিবার পিছু সর্বাধিক ১শ বিঘা পর্যন্ত জমির মালিকানা সিলিং নির্ধারণ করেন। দখলদার পাকিস্তানি শাসনামলে রুজু করা ১০ লাখ সার্টিফিকেট মামলা থেকে ঋণী কৃষককে মুক্তি এবং তাদের সকল বকেয়া ঋণ সুদসহ মাফ করে দেয়া হয়।

১৯৭২ সালের শেষ নাগাদ সারাদেশে হ্রাসকৃত মূল্যে ৪০ হাজার শক্তিচালিত লো লিফট পাম্প,২ হাজার ৯শ গভীর নলক‚ প ও ৩ হাজার অগভীর নলক‚পের ব্যবস্থা করেন। এর ফলে সেচের আওতাধীন জমির পরিমাণ ১৯৬৮-৬৯ অর্থবছরের তুলনায় ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরে এক তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৬ লাখ একরে উন্নীত হয়।

সেচ সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষকদের মধ্যে ১৯৭২ সালেই কেবলমাত্র অধিক ফলনশীল ১৬ হাজার ১২৫ টন ধানবীজ, ৪৫৪ টন পাট বীজ এবং এক হাজার ৩৭ টন গম বীজ বিতরণ করেন। পাশাপাশি স্থাপন করেন দেশের প্রথম ঘোড়াশাল সার কারখানা।

এছাড়া সারের দাম বিশ্ববাজারের চেয়ে হ্রাসকৃত মূল্যে সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৭২ সালে মণপ্রতি ইউরিয়া সারের মূল্য ছিল ২০ টাকা, পটাশ সার ১৫ টাকা এবং টিএসপি সারের মূল্য ১০ টাকা।

ফলে ১৯৬৯-৭০ অর্থবছরের তুলনায় ১৯৭৩-৭৪ অর্থবছরে রাসায়নিক সারের ব্যবহার গড়ে ৭০% , কীটনাশক ৪০ %, উন্নত বীজ ২৫ % বৃদ্ধি পায়। ধান,পাট, তামাক ও আখসহ গুরুত্বপূর্ণ কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির লক্ষ্যে এসব পণ্যের ন্যূনতম ন্যায্য বিক্রয়মূল্য ধার্য করে দেয়া হয়।

বঙ্গবন্ধু মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন, অর্থনৈতিকভাবে উন্নত ও সমৃদ্ধ একটি সোনার বাংলা গড়তে কৃষিশিল্পের উন্নয়ন অপরিহার্য। তিনি উপলব্ধি করতেন, কৃষি একটি জ্ঞাননির্ভর শিল্প। গতানুগতিক কৃষিব্যবস্থা দ্বারা দ্রুত ক্রমবর্ধমান বাঙালি জাতির খাদ্যের জোগান নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

তাই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য উপলব্ধি করেছিলেন কৃষির ব্যাপক আধুনিকীকরণের প্রয়োজনীয়তা। ফলে তিনি গুরুত্ব দিয়েছিলেন কৃষি গবেষণার ক্ষেত্রেও। বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেন কৃষি বিষয়ক উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠনের জন্য।

বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালের ৮ মাসের মধ্যে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প পূর্ণোদ্যমে চালুর ব্যবস্থা করেন। ফারাক্কা বিষয়ে আলোচনার জন্য ১৯৭২ সালের ২১ জানুয়ারি বিশিষ্ট পানি বিজ্ঞানী বি এম আব্বাসকে দিল্লি পাঠান এবং শুকনো মৌসুমে পদ্মা নদীতে ৫৪ হাজার কিউসেক পানি সরবরাহের নিশ্চয়তা লাভ করেন।

পরবর্তী কোন সরকারই সে লক্ষ্যমাত্রার ধারে কাছেও যেতে পারেননি। সরকারিভাবে খাদ্য মজুত গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের মধ্যেই ১০০টি খাদ্য গুদামঘর নির্মাণ করা হয়। কৃষকদের মধ্যে এক লাখ বলদ ও ৫০ হাজার গাভী এবং ৩০ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়।

কৃষি উন্নয়নে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরার জন্য বঙ্গবন্ধু সরকার জাতীয় পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু পুরস্কার নামে কৃষকদের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার ঘোষণা করেন। এভাবে কৃষক দরদি নীতি গ্রহণের ফলে কৃষিক্ষেত্রে অগ্রগতির যে ধারা সূচিত হয় তারই ফলশ্রুৃতিতে আজ কৃষি ক্ষেত্রে শক্তিশালী ধারা সৃষ্টি হয়েছে। কৃষি ক্ষেত্রে এ যুগান্তকারী সাফল্য, বঙ্গবন্ধুর অবদান বাঙালি জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ রাখবে।

ঢাকা ব্যুরো চীফ , ১৭ মার্চ ২০২০