চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলায় ভেকু দিয়ে কৃষি জমির মাটি কাটার হিড়িক পড়তে দেখা যায়। এক ফসলি থেকে শুরু করে তিন ফসলি মাঠে অবৈধ ভাবে কিছু মাটি খেকো ব্যবসায়ী টপসয়েল কেটে ইট ভাটা ও ভরাট কাজে নিয়ে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে প্রশাসনের তৎপরতায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ীকে জেল জরিমানা করলেও থেমে নেই বাকিদের কার্যক্রম।
দেখা যায়, এসব ফসলি জমি থেকে ৩ থেকে ৫ ফুট গভীর করে মাটি কাটা হচ্ছে। আবার কিছু মাঠে ২৫ থেকে ৩০ ফুট গভীরতার ফলে আশপাশের কৃষিজমিও ভেঙে পড়ছে। এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে এলাকার ফসলি জমির মালিক ও কৃষকরা। স্থানীয় প্রশাসন তৎপর হলে প্রভাবশালী মাটি ব্যবসায়ীদের কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার দক্ষিণ অঞ্চলে দেবীপুর মাঠে ভেকু দিয়ে মাটি কাটছেন মো. শহিদ মিয়া। তিনি গত ১০ বছর ধরে উপজেলার বিভিন্ন মাঠ থেকে মাটি ক্রয় করে ইট ভাটায় বিক্রি করে আসছে। তার মতো দিগছাইল মাঠে সমিদ মিয়া ও মাহবুব, কাশিমপুর মাঠে শাহাদাত, জগন্নাথপুর মাঠে মোজাম্মেল, হাটিলা টঙ্গীরপাড় মাঠে সাখাওয়াত হোসেন, উত্তর অঞ্চলের কালচোঁ মাঠে মহিন, ইছাপুর মাঠে কাউসার, পিরোজপুর মাঠে শাহজাহান, তারাপাল্লা মাঠে ইছাহাক ও ওসমান মিয়াসহ প্রায় অর্ধশত মাটি ব্যবসায়ী রয়েছে। তারা ভেকু লাগিয়ে নিষিদ্ধ ট্রাকে অবাধে মাটি কেটে বিক্রি করছে। প্রথম দিকে সন্ধ্যার পর থেকে মাটিকাটা শুরু হতো এখন দিনের বেলা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মাটি কাটার পর তা নিয়ে যাওয়া হয় পার্শ্ববর্তী ইটের ভাটায়। এতে কমে যাচ্ছে উর্বর আবাদি জমি। ফলে কমছে খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা।
উপজেলার পূর্ব রাজারগাঁও, কাঁপাইকাপ, শিদলা, রামপুরসহ কিছু মাঠের জমিতে এ মৌসুমে আলু ও সরিষার আবাদ করেছে। এলাকার বেশির ভাগ কৃষক এবং জমির মালিকরা কেউ নিজে কেউবা বর্ঘা দিয়ে ধান রোপণের চেষ্টা করছে। তবে কিছু জমির মালিকরা পানি নিষ্কাশন অভাব ও সারের দামের কারণে এ বছর চাষাবাদে হিমসিমে পড়েছে।
মালিগাঁও এলাকার কৃষক নাজিমুদ্দিন বলেন, যারা মাটি কাটছে তারা নাকি অনেক বড় নেতা। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে জোর করেই মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। আমার চাচার জায়গা থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। তার মতে দেবীপুর মাঠের কৃষক খলিল মিয়া বলেন, পাশের জমি থেকে মাটি কেটে পেলায় পানি নিষ্কাশনের জটিলতা দেখা দেয়। তাই বাধ্য হয়ে পরের বছর মাটি ব্যবসায়ী সহিদের কাছে ১ ফুট আকারে বিক্রি করেছি। এখন দেখছি সে ভেকু দিয়ে দেড় ফুট করে মাটি কেটে নিচ্ছে। অথাৎ পরের বছর যেন আবার পাশের জমির মালিকও বাধ্য হয় মাটি বিক্রি করতে। এমন ভাবে চলতে পারেনা, এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ আমরা কামনা করছি।
হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাফস শীল বলেন, আমরা ইতিমধ্যে কয়েকজনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জেল জরিমানা করেছি, এ ধরনের অভিযান চলমান থাকবে সে যেই হোক কোন সুযোগ নেই।
প্রতিবেদক: জহিরুল ইসলাম জয়,১৫ জানুয়ারি ২০২৪