দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের আওতায় চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মাঠজুড়ে দোল খাচ্ছে সোনালি ফসল। চলতি মৌসুমে ফলন ভালো হওয়ায় হাজারো কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ধান কাটা-মাড়াই শুরু হবে। নতুন ধান উঠবে কৃষকের গোলায়। ধান ঘরে তোলার স্বপ্নে চাষিরা বিভোর। কৃষাণ-কৃষাণীরা গোলা, খলা, আঙিনা পরিষ্কার করায় ব্যস্ত।
সরকারের কৃষি বান্ধব কর্মসূচি, উপজেলা কৃষি অফিসের ব্যাপক তৎপরতা, কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রম, অনুকূল আবহাওয়া, সার, কীটনাশকসহ বাজারে কৃষি উপকরণের পর্যাপ্ত সরবরাহ, সহনশীল দাম, সহজলভ্যতা ও সেচের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের সরবরাহ এবং আবাদ উপযোগী পরিবেশ ইত্যাদি বিবেচনায় চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১টি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নে বোরো আবাদ হয়েছে ৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৫৯ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কৃষকেরা তাদের খেতের ধান কাটার অপেক্ষায় রয়েছে। খুশিতে কৃষক পরিবারসহ ব্যবসায়ীরা। খেতের মধ্যে পোতা বাঁশের কঞ্চি ও গাছের ডালের ওপর ফিঙে, শালিক, দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বসে আছে। সুযোগ বুঝে ধান খেতের ক্ষতিকারক পোকা ওই সব পাখিরা খেয়ে ফেলছে। আবার অনেকে অধিক ধান পাওয়ার আশায় নিজ নিজ জমিতে রাসায়নিক ও জৈব সার প্রয়োগ করছে। কেউ আবার খেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছে। তবে কখন নতুন ধান ঘরে তুলবে এ স্বপ্নে বিভোর ওই সব কৃষকেরা। তাই প্রতিটি বাড়ি বাড়ি চলছে নতুন ধান ঘরে তোলার উৎসবের প্রস্তুতি।
উপজেলার দেওয়ানজিকান্দি গ্রামের কৃষক খোকন সরকার বলেন, গত বারের চেয়ে এবার ধান ভালো হয়েছে। আর কয়েক দিন পর কাটা শুরু করা যাবে। তিনি বলেন, খেতে রোগ-বালাই ও পোকা আক্রমণ করতে পারেনি। প্রকৃতি অনুকূলে থাকলে স্বপ্নের সোনালি ধান যথাসময়ে ঘরে তুলতে পারব।
ওটারচর গ্রামের কৃষক মো. আতাউর রহমান সরকার বলেন, সেচ খরচ এবং শ্রমের অধিক মূল্য ও কৃষি শ্রমিকের কিছু সমস্যা থাকলেও অনুকূল আবহাওয়ায় সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত সার, কীটনাশক ও বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়ায় এ বছর বোরো ধান খুবই ভালো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ধান খেতের পাশে দাঁড়ালে বুক জুড়িয়ে যায়। এ বছর তিন একর জমিতে আমন আবাদ করেছি। গত বছরের তুলনায় এবার অধিক ফলন হবে বলেও আশা করছেন তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সালাউদ্দিন বলেন, বাম্পার ফলন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে আমরা মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে আসছি। কৃষকেরা যাতে লাভবান হতে পারে এবং কোনো প্রকার সমস্যায় না পড়েন এ জন্য আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি। আশা করি বিগত মৌসুমের মতো এবারও বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে। এতে কৃষক অনেকটা লাভবান হবে বলেও আশা করছেন তিনি।
মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের মাঠ জুড়ে দুলছে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন। কৃষকদের আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর হিসেবে গড়ে তুলতে কৃষি বিভাগ আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। ফলে অন্যান্য দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে উৎপাদন।
মতলব উত্তর প্রতিনিধি, ১৫ এপ্রিল ২০২২