চাঁদপুরে সবজির সঠিক মূল্য থেকে বঞ্চিত কৃষকরা

চাঁদপুর সদর উপজেলার অন্যতম কৃষি জোন হচ্ছে শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম। সদরের সবজির চাহিদা মেটাতে গত দুই দশক এই এলাকার কৃষকরা ভূমিকা রাখছে।

বিশেষ করে জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত আলু, করোল্লা, কইডা, ধুন্দল, বরবটি ইত্যাদি আবাদ করেন। মধ্যস্বত্বভোগীদের জন্য সবজি উৎপাদনে তাদের যে পরিমাণে খরচ ও শ্রমি দিতে হয়, সে হিসেবে বাজার মূল্য পাচ্ছেনা। এবছর আবার অধিক খরায়ও অনেক সবজির জমিতে ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রাম ও ঘোষেরহাট মাঠে গিয়ে দেখাগেছে অনেক কৃষকই সবজি ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত। বিশেষ করে বৃষ্টি না হওয়ার কারণে অনকেইে অনেক দূর থেকে পানি বহন করে এনে জমিতে দিয়েছেন। গরম ও তাপে অনেক স্থানে ধুন্দল ও করোল্লা মাচা থেকে নিচে পড়ে আছে। আবার অনেক করোল্লা পেকে পচে মাটিতে পড়ে আছে।

চাঁদপুর সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা সদরের সবজি উৎপাদন হয় শাহমাহমুদপুর, বাগাদি, মৈশাদী ও রামপুর ইউনিয়নে। সবচাইতে বেশি হয় শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর, আলীমুড়া, তেঁতুয়া, সেনগাঁও, ঘোষেরহাট, মান্দারী ও টাওরখিল গ্রামে। এসব গ্রামের ৩৪০ হেক্টরে গত ২০ বছর প্রায় আড়াই হাজার কৃষক মৌসুমী সবজির আবাদ করে আসছেন।

কৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান গাজী চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, এ বছর সবজির ফলন ভালো হয়েছে। শুরু দিয়ে বাজারে সব কৃষকই মূল্য ভাল পেয়েছে। তবে পড়িয়াদের কারণে বর্তমানে প্রতিকেজি সবজিতে ১০-১৫টাকা কম দাম পাচ্ছে।

তিনি বলেন, মার্চ মাসে প্রতিকেজি করোল্লা কৃষক পেয়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। এখন পাচ্ছে ১০-১৫টাকা। কইডা ও ধুন্দল আগে ছিলো প্রতি কেজি ২০ টাকা এখন পাচ্ছে ১০-১২টাকা। বরবটি প্রথমে কেজি ছিলো ২৫-৩০টাকা এখন পাচ্ছে ১০-১২টাকা। কিন্তু এসব সবজি ১০-১২ কিলোমিটার দুরে শহরের বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০-৭০টাকা কেজি। সবজিগুলো সরাসরি কৃষক ক্রেতার কাছে বিক্রি করতে না পারায় মধ্যস্বত্বভোগীরাই অধিকাংশ আর্থিক সুবিধা নিচ্ছে।

ঘোষেরহাট এলাকার কৃষক বিল্লাল ও শাহজাহান গাজী চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, এবছর তাদের প্রত্যেকটি সবজির উৎপাদন ভালো হয়েছে। কিন্তু এখন দাম ভালো পাচ্ছেন না। প্রতিদিন ভোরে তারা জমির সবজিগুলো উত্তোলন করেন। সকাল ৮টার মধ্যেই চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক সড়কের পাশে হাট বসে। সেখান থেকেই পাইকারী ব্যবসায়ীরা এসব সবজি ক্রয় করে নিয়ে যান।

একই এলাকার কৃষক জসিম গাজী ও আবুল প্রধানিয়া বলেন, চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশের সবজির জমিতে কৃষি কর্মকর্তার কৃষকদের খোঁজ খবর নিলেও আমাদের ভিতরের গ্রামে কৃষি কর্মকর্তারা কোন পরামর্শ দিতে আসেন না। যার কারণে অনেক সময় সঠিক পরামর্শ না পেয়ে কিংবা মাছি পোকার কারণে সবজির অনেক বড় ধরণের ক্ষতি হয়।

চাঁদপুর সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের এই সবজির ব্লকটি আমিই দেখাশুনা করি। এখানকার কৃষকরা মূলত মৌসুমি সবজি উৎপাদন করেই লাভবান। সবজির আবাদ করার জন্য তারা আলুর আবাদ করেন। কারণ আলুর জমিতেই তারা সবজির বীজ বোপন করেন। যার কারণে আলুতে যেসব সেচ, সার ও আন্যান্য খরচ হয় তাতেই তাদের সবজি উৎপাদনে সহায়ক হয়। পরবর্তী সময়ে করোল্লা, ধুন্দল, কইডা ও বরবটির জন্য শুধুমাত্র মাচা দিয়ে পরিচর্যা করতে হয়।

তিনি বলেন, এ বছর এসব সবজির জমিগুলোর কিছু কিছু জমিতে মাছি পোকার কারণে কিছু সবজি নষ্ট হয়েছে। তবে আমাদের পরামর্শের কারণে অনেক কৃষকই গাছের জীবনী শক্তি বাড়ানোর জন্য ছত্রাক নাশক ব্যবহার করেছেন। সবমিলিয়ে এই এলাকার কৃষকরা সবজি উৎপাদন করেই তাদের জীবন জীবীকা নির্বাহ করেন।

সিনিয়র স্টাফ করেসপন্ডেট, ৯ মে ২০২১

Share