চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলায় সুহিলপুর উচ্চ বিদ্যালয়সহ চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কৃমিনাশক ঔষধ খেয়ে দু’শতাধিক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ উপলক্ষে সোমবার ১১ টায় সরকারিভাবে শিক্ষার্থীদের কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়। কৃমির ঔষধ খেয়ে ক্রমান্বয়ে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে।
অসুস্থ্য শিক্ষার্থীরা হলো উপজেলার সুহিলপুর উচ্চ বিদ্যালয়, রামকানাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় , রান্ধুনীমুড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও সিদলা একটি মাদ্রাসার। এর মধ্যে সুহিলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭ শতাধিক শিক্ষার্থীর মাঝে প্রায় দেড় শতাধিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অসুস্থ শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
এদিকে অসুস্থ্ হওয়া শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লে সুহিলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভাংচুর চালায় এলাকাবাসী। পরে হাজীগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাবেদুল ইসলাম ও সঙ্গীয় ফোর্স ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
সুহিলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ অজ্ঞান হয়ে যায়, কারো মাথা ব্যাথা, কারো বুক ব্যাথাসহ বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয়। সবাই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। আমরা সব শিক্ষক ও অভিভাবকসদস্যবৃন্দ মিলে শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করছি।’
এই বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য ওমর ফারুক বলেন, ‘খবর পেয়ে হাসপাতালে এসে শিক্ষার্থীদের সেবার কাজে ছিলাম। আমি নিজেই প্রায় ৫০/৬০ জন শিক্ষার্থীর সেবায় নিয়োজিত ছিলাম।’
হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে চিকিৎসা নেয়া শিক্ষার্থীরা হলো- সুহিলপুরের রিমা, আঁখি, মরিয়ম, সানজিদা, আছমা, সাবিনা, শান্তা, লিপি, তানজিনা, সুমাইয়া, সুমনা নাজমিন, সাবিনা, বৃষ্টি, খাদিজা, মারজান, ফারজানা, তামান্না, রাবেয়া, রোকসানা, সানজিদা, নাছরিন, আনিকা, জান্নাত, মাছুম, রমজান, নাছির ও সাকিবসহ আরো অনেকেই । তারা সবাই ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
এছাড়া হাজীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে শিক্ষার্থীরা চিকিৎসা সেবা নিয়েছে বলে জানা গেছে।
সুহিলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ইসরাফিল জানান, ‘বেলা ১১ ঘটিকার দিকে বিদ্যালয়ে কৃমিনাশসক ওষুধ খাওয়ানো শুরু হয়। পরে ক্রমেই কয়েক বন্ধুরা অসুস্থ্য হয়ে পড়ে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আলী নুর মোহাম্মদ বশির আহম্মদ জানান, জরুরি চিকিৎসা দেয়ার জন্য ২০ জন চিকিৎসক, ১০ জন প্যারামেডিকেল চিকিৎসক, নার্সসহ প্রায় অর্ধশত কর্মকর্তা শিক্ষার্থীদের মাঝে চিকিৎসা সেবা দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘প্রত্যেককে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে সবাই সেরে উঠবে। দুঃচিন্তার কোন কারণ নেই। কৃমি নাশক টেবলেট ভরা পেটে খেলে কোন অসুবিধা নেই। টেবলেটটি সকলকে সচেতনতার সহিত সেবন করাতে হবে। প্রয়োজনে স্বাস্থ্য সহকারী ও ডাক্তারগণের পরামর্শ নিতে পারেন।’
প্রসঙ্গত, ১ এপ্রিল শনিবার থেকে ৬ এপ্রিল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এটি ৫ বছর থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশু-কিশোর-কিশোরীদের কৃমিনাশক টেবলেট খাওয়ানো কর্মসূচি।
হাজীগঞ্জ উপজেলার ৩৯৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সর্বমোট ৯৪ হাজার ৯শ’ ৭০ জন। অপরদিকে রোববার মতলব উত্তর উপজেলার ইন্দুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে কৃমিনাশক ওষুধ খেয়ে প্রায় ২৫ জন শিক্ষার্থী মতলব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিয়েছে।
এ ব্যাপরে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মতিউর রহমান মুঠোফোনে চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি, তবে এ ঔষধটি নিয়ে মানুষের একটি ভুল ধারণা করেছেন। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাধ্যমে বেলজিয়াম থেকে আনা হয়েছে। এটিকে ভরা পেটে খেতে বলা হয়েছে। হয়তো অনেক শিক্ষার্থীকে খালি পেটে খাওয়ানো হয়ছে, তাই কিছুটা অসুস্থবোধ করলেও বিষয়টি গুরুতর নয়।’
অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, ‘এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘ক্রিমিনাশক কেন? ভিটামিন এ ক্যাপসুল খেয়েও কিছু শিক্ষার্থী অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এটি অনেক সময় একজনের দেখাদেখিতে অপরজন মনস্তাত্ত্বিক কারণে অসুস্থতাবোধ করে থাকেন। বিষয়টি নিয়ে আতংকিত হওয়ার কিছু নেই।’
প্রতিবেদক- জহিরুল ইসলাম জয়
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৭: ৪০ পিএম, ৩ এপ্রিল ২০১৭, সোমবার
ডিএইচ