বিশেষ সংবাদ

জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কূটনীতিকরা তৎপর !

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তৎপর হয়ে উঠছেন বিদেশী কূটনীতিকরা। সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রত্যাশা তাদের। সে কারণে একাদশ জাতীয় নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে সরকারের নেয়া পদক্ষেপ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকার কি করতে চায় তা জানতে চাইছেন কূটনীতিকরা। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে কোন সহায়তারও আশ্বাস দিয়েছেন তারা।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা তৎপরতা শুরু করেছেন। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ও ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বানিকার্ট প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে জানার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ওই দুই প্রভাবশালী কূটনীতিক।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিগত নির্বাচনের অভিজ্ঞতা, নতুন চ্যালেঞ্জ, তাদের প্রত্যাশা ও সহযোগিতার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া ভোটের ত্রুটি-বিচ্যুতি, হরতাল, জ্বালাও-পোড়াও নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে তারা। ৫ জানুয়ারি বা ১৫ ফেব্রুয়ারির মতো নির্বাচন যেন না হয়, তেমনটাই প্রত্যাশা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রত্যাশার সঙ্গে একমত পোষণও করেছে নির্বাচন কমিশন।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে আগ্রহী ভারতও। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলাও ইতোমধ্যেই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সীমা ও নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ঢাকায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে কারিগরি কোন বিষয়ে বাংলাদেশ সহযোগিতা চাইলে ভারত দেবে। এছাড়া বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারত কখনও হস্তক্ষেপ করবে না বলেও তার দেশের অবস্থান সুস্পষ্ট করেছেন।

এদিকে বাংলাদেশে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আশা প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইউরোপের এই বৃহত্তর জোটের আশা, ২০১৪ সালের নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়ে সব দল নির্বাচনে অংশ নেবে। বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে। গত ৯ মে ইউরোপ দিবস উপলক্ষে ঢাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদ্যুন জানিয়েছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বৈশ্বিক এজেন্ডা হিসেবে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনকে উৎসাহিত করে।

তিনি বলেছেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ কাম্য। আর এজন্য আগামীতে সব ধরনের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া অংশগ্রহণমূলক হবে বলে আশা করি। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনকে উৎসাহিত করতে ইইউও যে এজেন্ডা রয়েছে, তাতে বাংলাদেশ সাড়া দেবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন চাইলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই কমিশন শক্তিশালী করতে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দেবে। নির্বাচন কমিশন সুনির্দিষ্ট কোন সহায়তা চাইলেও ইইউ প্রস্তুত আছে।

নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া নিয়েও বিদেশী কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার প্রতিনিধিদের বিশেষ আগ্রহ ছিল। অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও দক্ষ নির্বাচন কমিশন দেখার জন্য প্রত্যাশা করেছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বিশেষ করে গত ডিসেম্বরে ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ইউরোপীয় ইউনিয়ন সুশাসন ও মানবাধিকার বিষয়ক সাব গ্রুপের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়েছিল, তারা বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ, নির্দলীয় ও দক্ষ নির্বাচন কমিশন দেখতে চায়।

নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া ও আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহ প্রকাশও করেছিলেন বিদেশী কূটনীতিকরা। জাতিসংঘের নেতৃত্বে কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার জন্য অনুমতি চেয়েছিলেন। আগামী জাতীয় নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ার বিষয়ে তারা আলোচনাও করতে চেয়েছিলেন। সে সময় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখার করার বিষয়ে তারা অনুমতি পাননি। তবে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে কয়েকজন কূটনীতিক বৈঠকের সুযোগ পেয়েছেন।

আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০১৮ সালে। এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে একটি সার্চ কমিটি গঠন করে সরকার। জাতীয় নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে অনেক রাজনৈতিক দলও আলোচনা করে। এ বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শও দিয়েছে তারা। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন মিশনের কূটনীতিকরাও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন। জাতিসংঘের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশের প্রভাবশালী কয়েকটি দেশের কূটনীতিক এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।

ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী রবার্ট ওয়াটকিন্স সে সময় গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে জাতিসংঘের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করতে চায়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে সরকার কি ধরনের পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে বিষয়ে আমরা জানতে চাই। আগামী নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আমরা খোলামেলা আলোচনা করতে আগ্রহী। তবে রবার্ট ওয়াটকিন্স এসব কথা বললেও তারা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনার কোন সুযোগ পাননি। কেননা নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া সরকারের একান্তই নিজস্ব বিষয় বলে তখন তাদেরকে জানানো হয়েছিল।

বাংলাদেশে বরাবরই একটি সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান দেখতে চান কূটনীতিকরা। সকল রাজনৈতিক দল যেন এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন, সেটাই প্রত্যাশা করে আসছেন তারা। এছাড়া নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে বিভিন্ন সহায়তাও দিয়ে আসছে জাতিসংঘ। এর আগে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংলাপ আয়োজনের চেষ্টায় ঢাকায় এসেছিলেন তৎকালীন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। তিনি সে সময় দুই পক্ষের মধ্যে একাধিক বৈঠক করে সমঝোতায় আনার জন্য চেষ্টা করেছিলেন। যদিও তার সেই চেষ্টা সফল হয়নি।জ:ক:

নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময়১২:০১ পি.এম, ০৬ জুন ২০১৭,মঙ্গলবার
ইব্রাহীম জুয়েল

Share