সারাদেশ

কুয়াকাটায় হচ্ছে ‘পর্যটক পার্ক’

কুয়াকাটাকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে নানা উন্নয়নকাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে একটি ‘পর্যটক পার্ক’ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন।

একই সঙ্গে কুয়াকাটার আবাসিক হোটেল-মোটেল এবং খাবার হেটেলের সেবার মানোন্নয়ন ও মূল্য পর্যটকদের সাধ্যের মধ্যে রাখতে তৎপর হয়েছে প্রশাসন। কুয়াকাটার মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হলে ভ্রমণপিপাসু বিশ্ব পর্যটকদের কাছে জায়গাটি আরো অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।

সরেজমিন কুয়াকাটার সৈকতসংলগ্ন আন্ধারমানিক ও রামনাবাদ নদের মোহনা ঘুরে দেখা গেছে, ২২ কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে রয়েছে মনোহরা প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্য স্পট। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কুয়াকাটার জিরো পয়েন্ট থেকে পশ্চিম দিকে আন্ধারমানিক নদের মোহনাসংলগ্ন লেম্পুচরের সংরক্ষিত ম্যানগ্রোভ বন, মোহনার অন্য তীরে রয়েছে ম্যানগ্রোভ ফাতরাবন, কুয়াকাটার খাজুরা মাঝিবাড়ী পয়েন্টে সৈকতে জেগে ওঠা মাটির স্তর, শুঁটকিপল্লী, জিরোপয়েন্টসংলগ্ন ফয়েজ মিয়ার নারিকেল বাগান, জিরোপয়েন্ট থেকে পূর্ব দিকে নয়নাভিরাম ঝাউবন, অপরূপ গঙ্গামতির লেক, গঙ্গামতি অপরূপ বনাঞ্চল এবং রামনাবাদ নদের মোহনাসংলগ্ন কাউয়াচরের ঝাউবন। এখানকার প্রতিটি স্পটেই রয়েছে আলাদা আলাদা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

মহিপুর বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫-০৮ অর্থবছরে ফরিদপুরের মেসার্স তহমিনা ট্রেডাস দুই লাখ ২৬ হাজার ৬৬৯ টাকা ব্যয়ে কুয়াকাটা, গঙ্গামতি, খাজুড়া, ফাতরাবনে (টেংরাগীরি) ১৩ হাজার ৯৮৪ একর জমির ওপর ইকো পার্ক নির্মাণ করেছে। সেখানে পর্যটকদের বিনোদনের জন্য লেক, পিকনিক স্পট, বিশ্রামের জন্য নানা ধরনের বেঞ্চ এবং সমুদ্রতীরের ঝাউ বাগানে সিমেন্টের ছাতা স্থাপন করা হয়। এদিকে উপজেলা বন বিভাগ ২০১০-এর এপ্রিল মাসে কুয়াকাটা, খাজুড়া ও গঙ্গামতির তিন হাজার ৯৮৪ একর বনাঞ্চলকে ‘জাতীয় উদ্যান’ ঘোষণার জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠায়। ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মিহির কান্তি মজুমদার স্বাক্ষরিত এক আদেশে উল্লিখিত ইকো পার্কটি ‘জাতীয় উদ্যানে’ রূপান্তরিত হয়।

জাতীয় উদ্যানের চৌহুদ্দি ঘোষণা করা হয় উত্তরে ওয়াপদা রাস্তা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। পূর্বে বঙ্গোপসাগর এবং পশ্চিমে আন্ধারমানিক নদ ও সাগর। অবশিষ্ট ১০ হাজার একরের ফাতরা বনের (টেংরাগীরি) বনাঞ্চলকে উদ্যানের আওতায় এনে অভায়ারণ্য ঘোষণা করা হয়।

কুয়াকাটায় ভ্রমণে আসা মোস্তাফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কুয়াকাটায় আমি তিন দিন অবস্থান করে এখানকার সব গুরুত্বপূর্ণ স্থান দর্শন করেছি। কুয়াকাটার প্রকৃতিকে বিধাতা নিজ হাতে যেন সাজিয়েছেন। যেখানে এক দণ্ড দাঁড়িয়েছি, সেখানেই একেক ধরনের সৌন্দর্য ও প্রশান্তি পেয়েছি। ‘

সূত্র মতে, সরকার মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে কুয়াকাটায় নির্মাণ করতে যাচ্ছে একটি আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম,একটি বিশ্ববিদ্যালয়, প্লে-গ্রাউন্ড, কনভেনশন সেন্টার, বিমানবন্দর, ওয়াচ টাওয়ার, আধুনিক হাসপাতাল, সুপার মার্কেট, জাদুঘর, ফায়ার সার্ভিস, শহীদ মিনার ও হেলিপ্যাড। চালু করা হবে হিস্টরিক সাইট। নির্মাণ হবে বাসটার্মিনাল, লঞ্চঘাট, ইকো পার্ক, মৎস্য মার্কেট, মেরিন পার্ক, মেরিন ড্রাইভ ও টেনিস পার্ক। এত সব উন্নয়নের যাত্রা শুরু হবে ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে।

এরই মধ্যে আলীপুর মৎস্যবন্দর থেকে কুয়াকাটাগামী মহাসড়কের তুলাতলী স্পট থেকে একটি দুই লেনের উন্নত সড়ক গঙ্গামতি পর্যটনপল্লী পর্যন্ত যাওয়ার জন্য নির্মাণের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে সরকার।

গত শনিবার সৈকতে পরিচ্ছন্ন অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন। কলাপাড়া ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে পরিচ্ছন্ন অভিযান চালানো হয়।

এ সময় পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক ড. মো. মাছুমুর রহমান বলেন, ‘পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে জেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে কুয়াকাটায় পর্যটকদের জন্য একটি ‘পর্যটক পার্ক’ নির্মাণ করা হবে। দরপত্র আহ্বান সম্পন্ন হয়েছে। কাজ শুরু হবে খুব শিগিগরই। পর্যটক পার্কে থাকবে কটেজ, সমুদ্রে গোসলের পর নারীদের পোশাক পরিবর্তনের সুযোগ সংবলিত একাধিক কক্ষ, ওয়াশরুম, পার্কের পাশেই থাকবে একটি বিশাল উম্মুক্ত মঞ্চ; যেখানে বিচ কার্নিভালের মতো বড় বড় উৎসব উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যায়।

কুয়াকাটায় আগত দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কুয়াকাটায় ভ্রমণসহ বিভিন্ন বিষয় তথ্য সরবরাহের জন্য থাকবে একটি হেলপ ডেস্ক। স্থানীয় হোটেল, মোটেল এবং খাবার রেস্টুরেন্টের মালিকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তাঁদের পর্যটকবান্ধব বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও মানসিকতা তৈরির জন্য বলা হয়েছে এবং তাঁরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ট্যুরিস্ট পুলিশের সহযোগিতায় পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।’

এ ব্যাপারে পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. হেমায়েত উদ্দিন বলেন, ‘পর্যটক পার্কটি স্থাপনে ব্যয় ধরা হয়েছে এক কোটি টাকা। তবে কতটুকু জায়গার ওপর স্থাপন করা হবে তা এখনো বলা যাচ্ছে না। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেই কুয়াকাটার মাস্টারপ্ল্যান সম্পন্ন হয়েছে। এখন থেকে যেসব কার্যক্রম শুরু হবে তা মাস্টারপ্ল্যানের অধীনেই হবে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।’

নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১ : ০০ পিএম, ১২ ডিসেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার
এইউ

Share