কুমিল্লা সামান্য বৃষ্টিতেই কোটি কোটি টাকার লোকসান

সামান্য বৃষ্টিতেই দেখা দেয় ভয়বহ জলাবদ্ধতা,সৃষ্টি হয় সীমাহীন দুর্ভোগ। এমনই পরিস্থিতি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ বাজারে।

প্রায় সাড়ে ৩ হাজার দোকানের এই বাজারে মালিক-কর্মচারী মিলে ৯ থেকে ১০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান। প্রতিদিন লেনদেন হয় কয়েক কোটি টাকার। আশেপাশের প্রায় ৬টি থানার মুল বাণিজ্যিক কেন্দ্র ঐতিহ্যবাহী এই বাজারটি। বর্ষা মৌসুম এলেই জলাবদ্ধতা যেন ঘিরে থাকে বাজারটিকে।

এতেনকরে যেমন ভোগান্তি হচ্ছে, তেমনি গচ্ছা যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন শুধুমাত্র অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণেই বিগত ২০-২২ বছর যাবত এই জন দুর্ভোগ লেগেই আছে।

সমপ্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে বাজারে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে দিনের পর দিন পানির নীচে শতাধিক দোকান। মাসের শুরু থেকে ভারী বর্ষণে বাজারে আসা ক্রেতা-বিক্রেতারা চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দোকানে পানি ঢুকে পড়ায় ব্যবসায়ীক কার্যক্রম বন্ধের পাশাপাশি পণ্যসামগ্রী নষ্ট হয়ে কোটি কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন ব্যবসায়ীরা।

ভারি বর্ষণে পানিতে তলিয়ে গেছে পেঁয়াজ বাজার, কাঁচা বাজার, শুটকি বাজার, মুরগী বাজার, চাল বাজার, কাঁপড় পট্টি, কামার পট্টি, একতা মার্কেট, সততা মার্কেট ও মেইন গলির ফুটপাতে থাকা সব রকমের দোকানপাট ।

ড্রেনেজ ব্যবস্থা অচল থাকায় পানি সরতে পারে না। তিনটি সেচ মেশিন দিয়ে পানি অন্যত্র সরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বৃষ্টির শেষে কাঁদা আর আবর্জনা পঁচে দুর্গন্ধে সৃষ্টি হয় আরেক দুর্ভোগ। জলাবদ্ধতার কারণে সাধারণ ক্রেতা বাজারে আসে না। এতে পাইকারি ব্যবসায়ীদের চরম ধস ও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

কোম্পানীগঞ্জ বাজার জুয়েলারী ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি চন্দন বনিক জানান, বৃষ্টিতে বাজারের প্রায় শতাধিক দোকানের ভিতর পানি ঢুকছে। এতে চরম ক্ষয়-ক্ষতির মুখে পড়েছে ব্যবসায়ীরা।

মুদি দোকানী দয়াল সাহা জানান, ভারি বর্ষণে বাজারের ভিতর অনেক মুদি দোকানে পানি ঢুকে ব্যবসায়ীদের লক্ষ লক্ষ টাকার মালামাল নষ্ট হয়েছে। মুরগী ব্যবসায়ী ঈমান উদ্দিন বলেন, আমার দোকানসহ আশ-পাশের সব দোকান পানিতে তলিয়ে গেছে। বাজার এলাকায় কোন ড্রেন না থাকায় আমরা অনেক দিন ধরেই এভাবে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতায় ভোগান্তির শিকার হই।

ভাসমান কাঁচামাল বিক্রেতা জানান, চলতি বর্ষায় আমার কয়েক মন আলু নষ্ট হয়ে গেছে। পানির কারণে পাইকারি বিক্রেতারা মোকামে আসতে চায় না। আরেক পাইকারি কাপড় ব্যবসায়ী জানান, দোকানে পানি ঢুকে আমার থান কাপড়ের গাইট কালো ময়লা পানিতে ভিজে নষ্ট হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী জানায়, দেড় দশকের আগেও পানি নিষ্কাশনের জন্য বাজারের পূর্বপাশে বড় নালা ছিল। যা দিয়ে বাজারের সকল পানি ও ময়লা নিষ্কাশন হতো। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা তা দখল করে দোকানঘর তৈরি করেছে, যার দরুন আজ আমাদের এ করুণ অবস্থা।

ক্রেতারা বলেন, বাজারে আসার পরিবেশ নাই। দুর্গন্ধযুক্ত পানি পাড়াতে ইচ্ছে করে না, তাই আসি না। এলাকার দোকান থেকে বেশি দামে কিনতে হয়। আর বিশ টাকার রিকশা ভাড়া চল্লিশ টাকা লাগে, তবুও রিকশাওয়ালা আসতে চায় না।

কোম্পানীগঞ্জ বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, পানি নিষ্কাশনের জন্য মেশিন লাগানো আছে। বাজারের জলবদ্ধতা একটি বড় সমস্যা। আমি বিষয়টি এমপি ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন সাহেবকে জানিয়েছি। তিনি সম্প্রতি বাজার পরিদর্শন করেছেন। আশা করি আগামী বর্ষার আগে সুরাহা হবে।

প্রতিবেদকঃ জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল, ৭ জুলাই ২০২১

Share