কুমিল্লা মুরাদনগরে নতুন থানাকে জাতীয় কবির নামকরণ নিয়ে গণশুনানী

কুমিল্লা জেলার বৃহত্তর উপজেলা মুরাদনগরকে বিভক্ত করে গঠিত নতুন থানাকে জাতীয় কবির নামে নামকরণ নিয়ে গণশুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার দুপুরে মুরাদনগর উপজেলার কবি নজরুল মিলনায়তনে এ গণশুনানী অনুষ্ঠিত হয়।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: আজগর আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মুরাদনগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা।

এসময় অন্যান্যের মধ্যে মুরাদনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আহাম্মদ হোসেন আউয়াল, মুরাদনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও মুরাদনগর যুবসমিতির যুগ্ম-আহবায়ক অ্যাডভোকেট এসটি আহমেদ ফয়সাল, মাছারাঙা টেলিভিশনের কুমিল্লা প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল, নজরুল-নারগিছ স্মৃতিরক্ষা পরিষদের সভাপতি হুমায়ুন কবীর খান এবং সাধারণ সম্পাদক বাবলু আলী খান, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাক্ষী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন চৌধূরী, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সবুজ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ সদস্য এরশাদ বকশী, মুরদনগর যুব সমিতির সদস্য আমীরুল ইসলাম, কোম্পানীগঞ্জ বদিউল আলম কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক সাহিত্যপত্র সম্পাদক মনিরুজ্জামান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

বক্তৃতায় অ্যাডভোকেট এসটি আহমেদ ফয়সাল বলেন, ১৮৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কুমিল্লা জেলার বৃহত্তম থানা মুরাদনগর (উপজেলা)। যার আদি নাম ছিলো থোল্লা থানা। পরবর্তীতে ১৮৭৮ সালে এর নামকরণ করা হয় মুরাদনগর থানা। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় সম্রাট শাহজাহান-এর ছোট ছেলে শাহ মুরাদ থোল্লা থানা এলাকায় সফর করেন। মূলত তাঁর সম্মানেই থোল্লা নামটি পরিবর্তন করে নামকরণ করা হয়েছিলো মুরাদনগর।

ফয়সাল আরো বলেন, মুরাদের নামে এ থানার নামকরণ হওয়ায় আমরা আজ শতাব্দী পরেও স¤্রাট শাহজাহানের ছেলে মুরাদের ইতিহাস জানতে চেষ্টা করি। তেমনি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচিত হয়েছে এই নবগঠিত থানার আওতাধীন দৌলতপুরে। সুতরাং আজকের নবগঠিত থানাটির নামকরণও যদি জাতীয় কবির নামানুসারে করা হয়, তাহলে পরবর্তী সকল প্রজন্ম জাতীয় কবির কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবে। সেই সাথে এতো বিশাল ব্যাক্তিত্বের নামানুসারে এর নামকরণ করা হলে এলাকাটিও ব্যাপক পরিচিতি পাবে।

সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল বলেন, আমার সাংবাদিকতা জীবনে দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময়ে নজরুলের দৌলতপুর অধ্যায় নিয়ে প্রিন্ট ও ইলেক্টনিক মিডিয়ায় সংবাদ তৈরিতে অনেকের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছি। তাদের প্রত্যেকেই দৌলতপুরে নজরুল স্মৃতি ধরে রাখতে নানা দাবির কথা উল্লেখ করেন। এসব দাবির মধ্যে জাতীয় কবির নামানুসারে নতুন থানার নামকরণ উল্লেখযোগ্য।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাক্ষী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন চৌধুরী বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশে এনে নাগরিকত্ব, সম্মাননা ও জাতীয় কবির মর্যাদা প্রদান করেন। পরবর্তীতে কবি স্বাধীনতা পদক ও একুশে পদকে ভূষিত হন। কবির নামে থানার নামকরণ করা হলে তা মূলত আমাদের জন্যেই গৌরবের বিষয় হবে।

নজরুল-নারগিছ স্মৃতিরক্ষা পরিষদের সভাপতি হুমায়ুন কবীর খান বলেন, ইতোপূর্বেও সরকারিভাবে নতুন থানার নামকরণের বিষয়ে একাধিকবার গণশুনাননীর আয়োজন করা হয়েছিলো। প্রত্যেকবারই জনমত জরীপে কবি নজরুল থানা নামটি সর্বাধিক সমর্থন লাভ করে। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, নিকারের বৈঠকে জনমত জরিপকে উপেক্ষা করে ‘বাঙ্গরা বাজার থানা’ নামটি নীতিগতভাবে অনুমোদন করা হয়। তাই আজ আমরা বর্তমান জনমত জরীপের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর নিকট এই থানাটির নামকরণ জাতীয় কবির নামানুসারে করার আবেদন করছি।

মুরাদনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আহাম্মদ হোসেন আউয়াল বলেন, সারাবিশ্বে বরেণ্য ব্যাক্তিদের নামে বিভিন্ন স্থাপনা ও এলাকার নামকরণ প্রচলিত। বাংলাদেশেও বিভিন্ন স্থানের নাম ব্যাক্তির নামানুসারে হয়েছে। এক্ষত্রে নতুন থানার নাম জাতীয় কবির নামানুসারে ’কবি নজরুল থানা বা কবি নজরুল নগর’ করা হলে তা ব্যাপক ভাবে সমাদৃত হবে।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ রাজিব আহাম্মদ, সাংবাদিক এসকে গিয়াস উদ্দিন আল মাসুদসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, স্থানীয় জনগণের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্র“তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ২২টি ইউনিয়ন বিশিষ্ট মুরাদনগরকে দিখণ্ডিত করে এর উত্তর এলাকার ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে নতুন একটি থানা গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণকরে সরকার। যার নামকরণ করা হয় ‘বাঙ্গরা বাজার থানা’।

তবে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি বিজড়িত কবিতীর্থ দৌলতপুর নতুন থানা এলাকার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এ অঞ্চলের অধিবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিলো নতুন থানার নামকরণ যেন কবির নামানুসারে ‘কবি নজরুল থানা’ নামকরণ করা হয়। এ বিষয়ে সম্প্রতি অ্যাডভোকেট এস.টি. আহমেদ ফয়সালসহ একাধিক সংগঠনের স্বাক্ষরিত একটি আবেদন প্রধানমন্ত্রী বরাবর পাঠানো হয়। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে এ গণশুনানীর আয়োজন করে মুরাদনগর উপজেলা প্রশাসন।

পরে মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনছুর আহমেদ এ বিষয়ে মতবিনিময়ে অংশ নেন।

তিনি বলেন, আমরা জনমত গ্রহণ করে এর প্রতিবেদন অতি দ্রুত সরকারের উচ্চ পর্যায়ে প্রেরণ করবো।

কুমিল্লা প্রতিনিধি :

||আপডেট: ০৪:৩১ পিএম,১৪ অক্টোবর ২০১৫,বুধবার

 

এমআরআর

Share