আজ ৮ ডিসেম্বর কুমিল্লা মুক্ত দিবস। মহান মুক্তিযুদ্ধে সারাদেশের মত কুমিল্লায়ও বহু রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানী হায়েনাদেরকে পিছু হটতে বাধ্য করে বীরযোদ্ধারা এবং মুক্ত করে কুমিল্লাকে।
মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরেই হানাদার বাহিনী নির্মম ভাবে হত্যাকরে কুমিল্লার তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে। এরপর দীর্ঘ যুদ্ধে পাকবাহিনীর হাতে নিহত হয় কুমিল্লার হাজারো নিরীহ জনতা। কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানের অরক্ষিত বদ্ধভূমি ও গণ-কবর আজও পাকবাহিনীর বর্বর এ হত্যাযজ্ঞের স্বাক্ষ্য বহন করে চলেছে।
১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী সারাদেশের মতো কুমিল্লায়ও নিরস্ত্র বাঙ্গালীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো হায়েনার মতো। কেঁড়ে নিয়েছিলো হাজারো প্রাণ। প্রথমেই হায়েনারা কুমিল্লার দুই শীর্ষ সরকারী কর্মকর্তা কুমিল্লা জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার নির্মম ভাবে হত্যাকরেই ক্ষান্ত হননি, দীর্ঘ ৯মাসের যুদ্ধে এরা হাজারো নিরীহ বাঙালীকে গণহত্যা করে মাটিচাপা দিয়েছিলো।
এদিকে কুমিল্লাকে হায়েনা মুক্ত করতেও মরিয়া হয়ে উঠে এ অঞ্চলের বীর যোদ্ধারা। বীর মুক্তিযোদ্ধা নন্দন চৌধূরীর ভাষ্য মতে ‘প্রথমে মুক্তিবাহিনী মিয়াবাজার থেকে সুয়াগাজীতে কোম্পানী কমান্ডারের সাথে একত্রিত হয়। পরে সুয়াগাজী হয়ে এয়ারপোর্টে ঢুকে মুক্তিবাহিনী।’
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কুমিল্লা জেলার সদ্য সাবেক কমান্ডার শফিউল আহমেদ বাবুল জানান,‘কুমিল্লা অঞ্চলের দায়িত্বে থাকা ইন্ডিয়ান ৪র্থ কোরের ৫৭ ও ২৩ মাউণ্টেন ডিভিশনের সাথে মুক্তিবাহিনীর কে ও এস ফোর্স সম্মিলিতভাবে পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। ইন্ডিয়ান ৪র্থ কোরের ২৩ মাউণ্টেন ডিভিশনের মেজর জেনারেল আর ডি হিরার নেতৃত্বোধীন ভারতীয় মিত্রবাহিনী সদস্যদের সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধারা ৭ ডিসেম্বর রাতে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে কুমিল্লাকে। অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ৮ ডিসেম্বর মুক্ত হয় কুমিল্লা। ওই দিন বিকেলে মুক্ত কুমিল্লার প্রথম প্রশাসক এডভোকেট আহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে নগরীর টাউন হল মাঠে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়।
যুদ্ধকালীন জেলা কমান্ডার ও কুমিল্লা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক আলহাজ্ব ওমর ফারুক বলেন, দীর্ঘ যুদ্ধে হানাদার বাহিনী নিরীহ বাঙালীদের গণহত্যা করে মাটিচাপা দেয়। কুমিল্লা সার্ভে ইন্সটিটিউট ক্যম্পাস, লাকসাম, বেতিয়রা এবং দেবীদ্বারসহ বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে গণকবর ও বদ্ধভূমি। এ গুলো সংরক্ষনের দাবি করেন তিনি। বিভিন্ন এলাকায় অরক্ষিত গণকবর ও বদ্ধভূমিসহ যুদ্ধের স্মৃতি চিহ্ন গুলো সংরক্ষনে সরকারের প্রতি আর্থিক বরাদ্ধেরও দাবি জানান যুদ্ধকালীন এই জেলা কমান্ডার।
প্রতিবছরের ন্যায় এবারও নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে যথাযোগ্য মর্যদায় আজ (রোববার) পালিত হতে যাচ্ছে কুমিল্লা মুক্ত দিবস। দিবসটি উপলক্ষে কুমিল্লা নগরীর টাউন হল থেকে বর্ণঢ্য শোভাযাত্র বের করা হবে। শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেবেন কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তি যোদ্ধা হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। মুক্তিযোদ্ধা, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ এতে অংশ নেবেনে। শোভাযাত্রা শেষে দিবসটি উপলক্ষে টাউন হলে জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা।
প্রতিবেদক:জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল