রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ বলেছেন ‘মাদকের বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্মকে সোচ্চার হতে হবে।’
২৭ জানুয়ারি সোমবার বিকেলে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন এর সভাপতির বক্তব্য কালে সমাবর্তনে সনদপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন দেশ আজ মাদকে সয়লাব হয়ে গেছে। এ থেকে উত্তরণে যুবসমাজকে নীরব বিপ্লব ঘটাতে হবে। তা না হলে দেশ একেবারে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হবে। রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, মাদকের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করে দেশকে উন্নতির চরম শিখরে নিয়ে যেতে হবে তোমাদেরই।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মূলত জ্ঞানচর্চা মুক্তচিন্তা ও মানবিক মূল্যবোধ বিকাশের ক্ষেত্র। তারই অংশ হিসেবে উচ্চ শিক্ষার প্রসারে মেধাবী ও দক্ষ সমাজ গঠনের লক্ষ্যে ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দিয়ে নতুন নতুন জ্ঞানের ক্ষেত্র ও সে বিষয়ে কার্যকর, প্রাসঙ্গিক ও ব্যবহারিক কার্যক্রম প্রণয়ন করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, পাঠদানের পাশাপাশি গুণগত মান সম্মত গবেষণার মাধ্যমে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা যাতে বাংলাদেশের সম্পদ ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দেশের অগ্রযাত্রায় সামিল হতে পারে তার উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, নিরন্তর গবেষণার মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন সৃষ্টি হয় নবতর জ্ঞানের, তেমনি বহুমুখী সৃষ্টিশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মননে জাগ্রত হয় মানবিক মূল্যবোধ। শিক্ষার সাথে মানবিক মূল্যবোধ পৃথিবীকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মূল প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। তাই লক্ষ্য রাখতে হবে, মানবিক মূল্যবোধ বিকাশে আমরা যেন বিশেষভাবে সচেতন থাকি এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে জ্ঞানচর্চা, মুক্তচিন্তা ও মানবিক মূল্যবোধের পীঠস্থান হিসেবে সমুন্নত রাখি।
বর্তমান যুগকে তথ্য প্রযুক্তির যুগ আখ্যায়িত করে রাষ্ট্রপতি বলেন, এসময়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে আধুনিক ও প্রযুক্তি জ্ঞানে সমৃদ্ধ হতে হবে। বাংলাদেশের বিশাল তরুণসমাজকে দক্ষ মানব সম্পদে পরিণত করার জন্য আনুপাতিক হারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই।
সোমবার বিকাল তিনটায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আবদুল হামিদ। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠেয় সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন তিনি। অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তৃতা করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল।
অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বক্তব্য প্রদান করেন।
এতে জাতীয় নেতৃবৃন্দ, সংসদ সদস্য, রাষ্ট্রপতির সংশ্লিষ্ট সচিবগণ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং বেসরকারি ও সরকারি কর্মকর্তারা অংশ নেন।
সবশেষে রাষ্ট্রপতি উপস্থিত সংসদ সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফ, সংসদ সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, সাবেক রেলপথ মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য মোঃ মুজিবুল হক, সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত সুবিদ আলী ভূঁইয়া, সংসদ সদস্য হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার, সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, প্রবীণ রাজনীতিক অধ্যক্ষ আফজল খান, রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদিনসহ উপস্থিত বিশিষ্ট জনদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
অনুষ্ঠানে মোট দুই হাজার ৮শ’ ৮৮ শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি দেওয়া হয়।শিক্ষাক্ষেত্রে অসামান্য কৃতিত্ব ও অবদানের জন্য সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মোট ১৪ জনকে স্বর্ণপদক ও ৫২ জনকে ডিন পদক প্রদান করা হয়।
জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur