কুমিল্লা কেন্দ্রিয় কারাগারের চার দেয়ালে প্রহর গুনার অবসার হচ্ছে চট্টগ্রামের শফিউদ্দিন আহমেদের দুই খনির। সুপ্রিম কোর্টে তাদের ফাঁসির রায় বহাল থাকায় এবং রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ায় তাদের ফাঁসিতে আর কোনো আইনী জটিলতা না থাকায় আজ রাতেই ঝোলানো হবে বলে জানায় কারা কর্তৃপক্ষ।
আজ (মঙ্গলবার) দিবাগত রাত ১১টা ৩০ মিনিটে ফাঁসি কার্যকর হচ্ছে দুই খুনি শিপন হাওলাদার ও নাইমুল ইসলাম ইমনের।
শিপন ও নাইমুল অনেকদিন যাবৎ কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে বন্দি রয়েছেন। ১৮ বছর আগে শফিউদ্দিনকে বাসায় গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে তারা। চট্টগ্রামে রেলওয়ে বস্তিতে মদ, জুয়া ও অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে খুন হয়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউদ্দিন। দীর্ঘ ১৮ বছর পর কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাদের ফাঁসির সাজা কার্যকর হতে যাচ্ছে।
কুমিল্লা কেন্দ্রিয় কারাগারের জেলার মোঃ আসাদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গত ১৬ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টে তাদের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখার চিঠি কুমিল্লা কারাগারে পৌঁছে। এরপরই রাষ্ট্রপতির কাছে করা প্রাণভিক্ষার আবেদনও খারিজ হয়ে যাওয়ার চিঠিও কুমিল্লা কারাগারে পৌঁছায়। এর পর থেকেই তাদের ফাঁসি কার্যকরে প্রস্তুতি নিতে শুরু করে কারা কর্তৃপক্ষ।
শিপন হাওলাদার চট্টগ্রাম নগরের খুলশীর দক্ষিণ আমবাগানের মৃত ইউনুছ হাওলাদারের ছেলে। তার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়ার নন্দন সদর এলাকায়। আর নাইমুল ইসলাম ইমন চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার ডেবারপাড় এলাকার ঈদুল মিয়া সরকারের ছেলে। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের পূর্বপাড়ার রতনপুর এলাকায়।
মুক্তিযোদ্ধা শফিউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী মাহমুদা বেগম মামলার বাদী হয়ে মামলাটি করেছিলেন।’ অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রাম নগরের খুলশীর উত্তর আমবাগান রেলওয়ে কোয়ার্টারের ৩৬/এ বাসায় বাস করতেন শফিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বাংলাদেশ রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী-১ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পাশাপাশি তিনি ছিলেন স্থানীয় রেলওয়ে আমবাগান এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক। এলাকায় সন্ত্রাসী ও সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে মদ, জুয়া ও রেলওয়ের অবৈধ সম্পদ দখলের প্রতিবাদে সোচ্চার ভূমিকা ছিল তার। সে কারণে ওই সময় রেলওয়ের জায়গা থেকে চার দফায় অবৈধ বস্তি ও কলোনি উচ্ছেদ করতে বাধ্য হয় প্রশাসন।
এ ঘটনায় সন্ত্রাসীরা শফিউদ্দিনের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ২০০৩ সালের ১৪ জুন বাসায় ঢুকে গুলি করে শফিউদ্দিনকে খুন করে। গুলি ও ছুরিকাঘাত করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে বোমা ফাটিয়ে এলাকা ছাড়ে খুনিরা।
এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা শফিউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী মাহমুদা বেগম মামলার বাদী হয়ে খুলশী থানায় হত্যা মামলা করেন। ২০০৪ সালে চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ২৩ জনের সাক্ষ্য নিয়ে এ হত্যা মামলায় দুই খুনি শিপন ও ইমনকে ফাঁসি, সাত আসামিকে যাবজ্জীবন এবং চারজনকে খালাস দেন।
প্রতিবেদক: জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল,০৮ মার্চ ২০২২