সারাদেশ

কুমিল্লায় সাংবাদিককে কুপিয়ে জখম : চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

সংবাদ প্রকাশ করার জের ধরে কুমিল্লার মুরাদনগর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক ভোরের কাগজ প্রতিনিধি এবং আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মুরাদনগর উপজেলা শাখার সভাপতি শরিফুল আলম চৌধুরীকে কুপিয়ে গুরুত্বর আহত করেছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী। এসময় তারা হাতুরী ও লোহার পাইপ দিয়ে পিটিয়ে তার হাত-পা ভেঙ্গে ফেলে এবং দা দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। গুরুত্বর আহত শরীফকে আশংকা জনক অবস্থায় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

শনিবার বিকেলে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার দারোরা ইউনিয়নের কাজিয়াতল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। দারোরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়ার নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী কাজিয়াতল গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মতিন চৌধুরী বাড়িতে ঢুকে তাঁর ছেলে সাংবাদিক শরিফের উপর হামলা চালিয়ে আহত করে। এসময় তাকে বাঁচাতে তার বাবা, মা ও বোন এগিয়ে এলে তাদের উপরও হালিয়ে আহত করা হয়।

এদিকে ঘটনার মূল হোতা ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়াকে গ্রেফতার করেছে। এ ঘটনায় চেয়ারম্যানসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

মুরাদনগর থানার ওসি এ.কে.এম মনজুর আলম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, উক্ত ঘটনায় জড়িত চেয়ারম্যান শাহাজাহনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সাংবাদিক শরিফকে এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে হাসপাতাল পাঠাই। তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মতিন চৌধুরী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে।

সাংবাদিক শরীফুল আলম চৌধুরীর বাবা আহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন চৌধুরী বলেন, দারোরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির সংবাদ প্রকাশ করে আমার ছেলে। উক্ত ঘটনায় ক্ষীপ্ত হয়ে আমার ছেলেকে প্রাণে শেষ করে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ভাবে আগে থেকেই হুমকি ধমকি দেয় চেয়ারম্যান ও তার দলবল। এ নিয়ে ফেইসবুকেও একাধিকবার প্রকাশ করে শরীফ। নিজেকে অনিরাপদ ভেবে একমাস বাড়ির বাহিরে থেকে সে গত সপ্তাহে বাড়ি আসে। শরী বাড়িতে আছে এ খবর পেয়ে গতকাল শনিবার দুপুরে চেয়ারম্যান শাহজাহানের লোকজন বাড়িতে ঢুকে কিছু বুঝে ওঠার আগেই জোরপূর্বক টেনে হিচড়ে বাড়ির ওঠানে বের করে আনেন। তখন দা দিয়ে কুপিয়ে, হাতুরী ও লোহার পাইপ দিয়ে পিটিয়ে তার দুই হাত পা ভেঙ্গে দেয়। দা দিয়ে তার মাথায় মারাত্বক আঘাত করে।

মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন চৌধুরী বলেন, আমি এবং আমার স্ত্রী ছেলেকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে রামদা দিয়ে আমার ডান হাতে কুপ দেন এবং রড দিয়ে পিটায়। শরীফের মা’কেও কুপিয়ে জখম করে এবং বাম হাত ভেঙ্গে দেয়। আমাদের চিৎকারেও চেয়ারম্যানের লোকজনের ভয়ে কেউ এগিয়ে আসার সাহস পায়নি। পরে তাকে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে আবস্থা আশংকাজনক দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক দ্রুত কুমিল্লা মেডিকেল হাসপাতালে পাঠান।

সাংবাদিক শরীফুলের বোন সুলতানা চৌধুরী মুন্নী বলেন, “আমাকে ঘরে পেয়ে সন্ত্রাসীরা শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করে। আমি তাদের হাতে কামড়ে দিয়ে দৌড়ে প্রতিবেশিদের বাড়িতে গিয়ে ইজ্জত রক্ষা করি।”

তিনি বলেন, আমরা চেয়ারম্যানের এই বর্বরতার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।

এদিকে শনিবার রাত সাড়ে ১২ টার দিকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শরীফের খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায় তার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। এসময় শরীফ জানান, তার উপর চেয়ারম্যান মেরে ফেলার পরিকল্পনা করছে, তাদের বাড়ীর আসপাশে প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসীরা ঘুরাফেরা করছে, মুরাদনগর থানার ওসিকে এ বিষয়টি বার বার অবহিত করা হলেও তিনি কর্ণপাত করেননি। শরীফ জানান, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে থানায় মামলাও রয়েছে। ওসি সাহেব যদি ব্যবস্থা নিতেন তাহলে আজকে এই হামলার ঘটনা ঘটে না।

এদিকে গত রাত পৌণে ১ টার দিকে (শনিবার রাত) কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কেজুয়ালিটি ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মুশফিক আহম্মদ জানান শরীফের শারীরিক অবস্থা আশংকাজনক। তাকে মারাত্মক ভাবে আঘাত করা হয়েছে। তার দুই হাত, দুই পায়ের হাঁড়ে একাধিক ভাঙ্গা রয়েছে। মাথায় কোপানো হয়েছে।

প্রতিবেদক:জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল,০৫ জুলাই ২০২০

Share