নিজের গাছ কেটে ২১ দিন ধরে হাজত খাটছেন আবু সাইদ নামে এক প্রবাস ফেরৎ ব্যাক্তি। তিনি একাই নন, সাথে তার ছোট ভাই মাওলানা আবুল খায়ের (মুজিবুর) এবং ওই গ্রামেরই প্রয়াত আবদুর রৌফ এর ছেলে রাশেদ মিয়াসহ তিন জন! ঘটনাটি জেলার মুরাদনগর উপজেলার বাংগরাবাজার থানাধীন রাজাবাড়ী গ্রামে। আবু সাইদ ও মাওলানা আবুল খায়ের ওই গ্রামের প্রয়াত আবদুল হামিদের (হামদু মিয়া) ছেলে।
এক সংবাদ সম্মেলনে ঘটনাটি সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। আবু সাইদের স্ত্রী রত্নাবেগম বলেন, নিজের ভূমি থেকে গাছ কাটার পরও আমার স্বামীকে প্রতিবেশি আবু ইউসুফ (আবন) ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে পরিকল্পিত ভাবে হাজত খাটানো হচ্ছে। মাওলানা আবুল খায়েরের স্ত্রী সালামা বেগম বলেন, আমার স্বামী মাওলানা আবুল খায়ের ওই দিন বাড়ীতেই ছিলেন না। তিনি সেদিন দাউদকান্দিতে তার কর্মস্থলেই ছিলেন। একই অভিযোগ রাশেদ মিয়ার বড় ভাই মাসুদ রানা বলেন, আমার ভাই রাশেদ একটি ঔষধ কোম্পানী বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার নবীনগরে কর্মরত। সেদিন সে তার কর্মস্থলে ছিলো। তাকেও এই মিথ্যা অভিযোগে জড়িয়ে বিনা অপরাধে হাজত খাটানো হচ্ছে।
রোববার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব কথা বলেন।
আবু সাইদ ও তার ছোট ভাই মাওলানা আবুল খায়ের ২০০৯ সালে তার চাচা আবদুল কাদির বেপারীর ছেলেদের কাছ থেকে ৮০৪ খতিয়ানভূক্ত ৩২৩৩ দাগে দুই শতক করে মোট চার শতক ভূমি কেনেন। ২০১১ সালে ওই ভুমির একাংশে একটি টিন শেডের পাকা ঘর নির্মাণ করে এতে ব্যবসা শুরু করেন আবু সাইদের ছেলে আবু বকর (সজীব)। সজীব প্রবাসে চলে গেলে তার মা রত্না বেগম দোকান ঘরটি ভাড়া দেন পাশের বাড়ীর জসীম উদদ্দীনের (জসু) কাছে। তিনি ২০১৬-২০১৭ এই দুই বছর এখানে মুদি মালামালের ব্যবসা করেন। এসময় প্রতিবেশি আবু ইউসুফ (আবন) ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের অত্যাচারে দোকানটি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন জসীম উদদ্দীনের জসু। ২০১৮ সাল থেকে দোকান ঘরটি বন্ধ রয়েছে।
এমতাবস্থায় দীর্ঘ ২৯ বছর প্রবাসজীবন শেষে চলতি বছরের শুরুতে দেশে এসে আবু সাইদ দোকানটি চালু করার সিদ্ধান্ত নেন। গত ১৬ সেপ্টেম্বর দোকান ঘরটির চারপাশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করেন এবং এখানে তাদেরই লাগানো কাঠের গাছগুলো ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন। এই সুযোগে প্রতিবেশি আবু ইউসুফ (আবন) এই গাছ তার উল্লেখ করে গোপনে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় গত ০১ নভেম্বর আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে বিচারক তাদের তিন জনকে জামিন না মঞ্জুর করে জেলা হাজতে পাঠান।
উক্ত মামলায় বিবাদী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট সৈয়দ নূরুর রহমান, এডভোকেট এএইচএম আবাদ জানান এই মামলায় প্রথম বার জামিন নামঞ্জুরের পর ২য় বারও তাদের জামিন আবেদন করা হলে আদালত তা নামঞ্জুর করেন। আইনজীবীরা বলেন, সচরাচর দন্ডবিধি ৩৭৯/৪২৭/১০৯ এই ধারায় কেউ অভিযোগ করলে আদালত মামলাটি গ্রহণ করে তদন্ত দিয়ে থাকেন, পাশাপাশি এসমস্ত ধারায় সচরাচর জামিন নামঞ্জুর করেন না আদালত। কিন্তু এই মামলাটি তার ব্যতিক্রম কেন তা বোধগম্য নয়। আইনজীবীরা জানান, বর্তমানে মামলাটি জামিন শুনানীর জন্যে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রয়েছে।
রাজাবাড়ী গ্রামের ইনূস বেগ, জসীম উদ্দিন জসু বেগ, আবুল আহাদ, আলউদ্দিন আলাল ভূইয়া, বিডিআর কাউসার এবং বলিঘর গ্রামের ছগির আহাম্মদসহ অন্যান্যরা বলেন, আবু সাইদ ও আবুল খায়েরের চাচাতো ভাই আবু ইউসুফ আবন। দুষ্ট প্রকৃতির লোক। পাশাপাশি সমাজের কিছু অসৎ লোকের প্ররোচনায় সে গ্রামের মানুষকে জমিজমা সংগ্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে হয়রানি করে আসছে। একই ভাবে আবু সাইদ, আবুল খায়েরকেও হয়রানি করছে। সবশেষ গাছ কাটার মামলাটি অত্যন্ত দুখঃজনক বলেও মন্তব্য করেন তারা। তারা বলেন, মামলায় গাছ কেটে চুরি করে নিয়ে যাওয়ার কথা হয়েছে, অথচ যেখানের গাছ সেখানেই রয়েছে।
আবু সাইদের স্ত্রী রত্না বেগম এবং আবুল খায়ের এর স্ত্রী সালমা বেগম জানান, বাড়ীতে পুরুষ না থাকায় আবু ইউসুফ আবনের মামাতোভাই কামালসহ সাঙ্গপাঙ্গরা প্রতিনিয়তই এসে তাদের বাড়ীতে রাতদিন হুমকী ধমকীতে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তারা পৃথক ভাবে থানা ও আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে আবু ইউসুফ আবন আদালতে মামলা দায়েরের কথা স্বীকার করলেও এ নিয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাংগরাবাজার থানার সাবইন্সপেক্টর শাহনেওয়াজ বলেন, আমি আদালতের নির্দেশে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সাক্ষ্য প্রমাণাদি নিয়ে দেখা গেছে উল্লেখিত ভূমিতে আবু সাইদ ও আবুল খায়েরের দখল বিদ্যমান। এমতাবস্থায় উভয় পক্ষকে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে নোটিশ দিয়েছি এবং এমর্মে আদালতে প্রতিবেদন প্রেরণ করেছি।
প্রতিবেদক: জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল, ২১ নভেম্বর ২০২১