ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য, সচিব, আদালত সহকারী ও গ্রাম পুলিশদের গ্রাম আদালত আইন ও বিধিমালার উপর দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম শেষে চাঁদপুরে ‘গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ প্রকল্প’ ২০১৭ থেকে শুরু হয়। ওই বছরের জুলাই যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় আদালতে বিচারিক কার্যক্রম চালু হয়।
জেলার শাহরাস্তি উপজেলার খুর্শীদা বেগম, ফরিদগঞ্জের আঁখি আক্তার ও খোরশেদ আলম এবং মতলব-দক্ষিণ উপজেলার মোসাম্মদ আরিফা আক্তারের মতো বহু মানুষ গ্রাম আদালতে মামলা দায়ের করে অতি স্বল্প সময়ে ন্যায়-বিচার পেয়েছেন।
এ আদালতের ঘোষিত রায়ও যথাসময়ে বাস্তবায়িত হয় এবং ক্ষতিপূরণের অর্থ ও উদ্ধারকৃত জমি-জমা নিয়মতান্ত্রিকভাবে মামলার আবেদনকারীদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এ আদালতের অধিকাংশ বিচারপ্রার্থী হলেন গ্রামের দরিদ্র ও অসহায় নারী-পুরুষ। কমে যাচ্ছে অনেক মামলাজট।
স্থানীয় সরকার বিভাগ, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি’র (ইউএনডিপি) অর্থায়নে ও কারিগরি সহায়তায় প্রকল্পটি চাঁদপুরসহ দেশের ২৭ জেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। চাঁদপুরে প্রকল্পের সহযোগী সংস্থা হিসেবে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সাভিসেস ট্রাস্ট।
চাঁদপুর জেলা প্রশাসক -এর কার্যালয়ের গ্রাম আদালত বিষয়ক ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর (ডিএফ) নিকোলাস বিশ্বাসের জানায় জেলার কচুয়া, মতলব উত্তর ও দক্ষিণ, ফরিদগঞ্জ ও শাহরাস্তি উপজেলায় নির্ধারিত মোট ৪৪ ইউনিয়নে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। ভবিষ্যতে হয়তো জেলার অবশিষ্ট ইউনিয়নগুলোতে ‘গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ প্রকল্পটি’ কাজ করবে। তবে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রণীত গ্রাম আদালত আইন ২০০৬ অনুযায়ী দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম আদালত চালু থাকার কথা।
উচ্চ আদালতে মামলার জট কমাতে গ্রাম আদালত বর্তমানে চাঁদপুরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সক্রিয়করণ প্রকল্পের আওতাধীন গ্রাম আদালতগুলোর মামলা-নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, জুলাই-২০১৭ হতে ডিসেম্বর-২০১৮ পর্যন্ত দেড় বছরে ২ হাজার ৬ শ’ ৭৮টি মামলা গ্রাম আদালতে দায়ের হয়েছে এবং এ সময়ে মোট ২ হাজার ৫শ’ ৫৮টি মামলা নিস্পত্তি হয়েছে। এখানে মামলা নিস্পত্তির হার শতকরা ৯৫.৫৬ ভাগ।
উপজেলাভিত্তিক তথ্যে কচুয়ার ১২ ইউনিয়নে ৫১০টি মামলা, মতলব-উত্তরের ৮ ইউনিয়নে ৬৫৩টি মামলা, মতলব-দক্ষিণের ৪ ইউনিয়নে ২১৩টি মামলা, ফরিদগন্জের ১০ ইউনিয়নে ৬০০টি মামলা এবং শাহরাস্তি উপজেলার ১০ ইউনিয়নে ৭০২টি মামলা গ্রাম আদালতে দায়ের হয়।
এ মামলাগুলো গ্রাম আদালতে দায়ের হওয়ার পর খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে নিস্পত্তি হয়। এখানে অহেতুক অর্থ ও সময় অপচয় করার কোন সুযোগ নেই। সাক্ষ্য-প্রমাণের নৈকট্য ও পর্যাপ্ততা থাকায় গ্রাম আদালতে কেউ অসত্য কথা ও তথ্য উপস্থাপন করতে পারে না। এজন্য বিচারিক কাজে বিশেষ কোন জটিলতা দেখা দেয় না।
এদিকে নিষ্পত্তিকৃত এসব মামলার বিপরীতে ১ কোটি ১ লাখ ৪১ হাজার ৭শ’ ৭৭ টাকা ও টাকার সম্পদ ক্ষতিপূরণ হিসেবে আদায় হয়েছে। এসব ক্ষতিপূরণ আবেদনকারীদের মাঝে আদালতের নিময় মেনে রশিদমূলে যথাসময়ে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। মামলার ক্ষতিপূরণ পেয়ে বিচার-প্রার্থীগণ উপকৃত হয়েছেন এবং অনেকেই জীবনে নতুন আশা খুঁজে পেয়েছেন। গ্রাম আদালত অনেক ক্ষেত্রে সমাজের দরিদ্র ও অসহায়ের সহায় হয়ে উঠেছে।
প্রসঙ্গত, গ্রাম আদালত অনধিক ৭৫ হাজার টাকা মূল্যমানের দেওয়ানী ও ফৌজদারী সংক্রান্ত মামলা নিস্পত্তি করে থাকে। এ আদালতে ফৌজদারী মামলার ফি ১০ (দশ) টাকা ও দেওয়ানী মামলার ফি ২০ (বিশ) টাকা মাত্র। এর বাইরে এখানে আর কোন খরচ নেই। এই আদালতে পক্ষগণ নিজের কথা নিজেই বলতে পারেন। এখানে কোন আইনজীবী কিংবা কৌসুলী দরকার হয় না। গ্রাম আদালত নারী-পুরুষ সবার জন্য নিরাপদ ও ভয়মুক্ত। সাধারণ জনগণের বিচার ব্যবস্থায় প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণে গ্রাম আদালত প্রতিটি ইউনিয়নে কাজ করছে।
চাঁদপুর টাইমস রিপোর্ট
২৫ জানুয়ারি, ২০১৯