কুমিল্লার মুরাদনগরে বাখরাবাদের গ্যাসের অবৈধ পাইপলাইন উচ্ছেদে চতুর্থবারের মতো অভিযান পরিচালনা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। কুমিল্লা জেলা প্রশাসক হাসানুজ্জামান কল্লোল এর নির্দেশে মঙ্গলবার দিনভর মুরাদনগরের মধ্যনগর থেকে কামাল্লা পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করা হয়।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন, কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফিরোজ আল মামুন। অভিযান চলাকালে উপস্থিত ছিলেন বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির উপ-ব্যবস্থাপক ও দেবীদ্বার অফিসের ইনচার্জ মো: বাপ্পী শাহরিয়ার, সহকারী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন আহাম্মদ, সহকারী প্রকৌশলী অতুল কুমার নাগ, মুরাদনগর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
এসময় ছয় হাজার ফুট অবৈধ পাইপ লাইন উত্তোলণ করা হয়। বাখরাবাদের গ্যাস কয়েকটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও দালাল চক্র একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার কামাল্লাসহ বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে গ্যাসের আবাসিক সংযোগ দেয়ার কাজে লিপ্ত রয়েছে।এর মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
এর আগে, গত বছর ১৩ অক্টোবর জেলার চান্দিনায় চার হাজার ফুট অবৈধ পাইপ লাইন বিচ্ছিন্ন করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এছাড়া ২০১৫ সালের ১৯ অক্টোবর ও ০৫ নভেম্বর মুরাদনগরে দ্বিতীয় বারের মতো ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অবৈধ গ্যাস লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়।জেলা প্রশাসক মো: হাসানুজ্জামান কল্লোলের নির্দেশে মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনসুর উদ্দিনের নেতৃত্বে উপজেলার করিমপুর থেকে কামাল্লা বাজার পর্যন্ত দুই হাজার দুই শত ফুট লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়।
এ সময় ১১০টি দুই ইঞ্চি পাইপ জব্দ করা হয়।তবে রহস্যজনক কারণে রাত সাড়ে ৯টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ওই অবৈধ গ্যাস লাইন নির্মাণে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ নিয়ে এলাকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
এ নিয়ে মোট চার দফা অভিযানে বারো হাজার ফুট অবৈধ পাইপ লাইন উত্তোলন করা হয়।
গত ১৯ অক্টোবর মুরাদনগরের কামাল্লায় গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। ওইদিন উপজেলা সদর থেকে কামাল্লা গ্রাম পর্যন্ত ১২ হাজার ফুট অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
দ্বিতীয় দফা অভিযানে দুই হাজার দুই শত ফুট লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়। অভিযান চলাকালে উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) আলী আজগর, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির উপ-ব্যবস্থাপক বাপ্পী শাহরিয়ার, ব্যবস্থাপক (বিক্রয়-উপজেলা) জিয়াউল হক চৌধুরী, সহকারী প্রকৌশলী অতুল কুমার নাগ, জসিম উদ্দিন আহাম্মদ, মনতুজ মধু, পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন, এএসআই মাহফুজ প্রমুখ।
এ সময় স্থানীয় জনগণ কাঙ্ক্ষিত এ অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে মুরাদনগর উপজেলার সকল স্থানে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে দাবি করেন।
ওই সময় মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মনসুর উদ্দিন জানান, এক ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ থেকে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণভাবে দুই ইঞ্চি ব্যাসের পাইপের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করায় গ্যাসের প্রেসার কমে যাবে। এর ফলে বৈধ-অবৈধ গ্রাহক সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ছাড়াও মাটি থেকে সাড়ে ৩ফুট গভীরে গ্যাস লাইন স্থাপনের নিয়ম থাকলেও অনেক স্থানে সরাসরি রাস্তার উপর এবং রাস্তার সর্বোচ্চ ৬ ইঞ্চির ভেতরে গ্যাস লাইনের পাইপ স্থাপন করায় যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
বিচ্ছিন্ন করা গ্যাস লাইনের অবশিষ্ট পাইপগুলো অপসারণ ও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ডিজিএমকে পত্র দেয়া হয়েছে বলেও সেসময় জানিয়েছিলেন ইউএনও মনসুর উদ্দিন।
সূত্রমতে, কয়েকটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও দালাল চক্র বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন দেবিদ্বার জোনাল অফিস, কুমিল্লার বাখরাবাদ গ্যাস অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা, কতিপয় নামধারী সাংবাদিক ও পুলিশ কর্মকর্তার যোগসাজসে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে গ্যাসের আবাসিক সংযোগ দেয়ার কাজে লিপ্ত রয়েছে।এর মাধ্যমে সাধারণ ও নিরীহ গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের মুরাদনগর-রামচন্দ্রপুর সড়কের প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের সামনে থেকে সড়ক কেটে এক ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ থেকে দুই ইঞ্চি পাইপের মাধ্যমে কামাল্লা গ্রাম পর্যন্ত সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে টানা হচ্ছে প্রায় ২০ হাজার ফুট লম্বা পাইপ লাইন। যেখানে দুই ইঞ্চি পাইপের মাধ্যমে গ্যাস সংযোগের কোনো প্রকার বৈধতা
না থাকলেও বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশনের কুমিল্লা অফিস ও দেবিদ্বার জোনাল অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এসব লাইন নির্মাণে সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া ও সড়ক ও জনপথ বিভাগের সড়ক কেটে অবৈধ ভাবে পাইপ লাইন নেয়া হলেও দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিয়ে এ বিষয়ে চুপ থাকায় জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগ আছে, একে তো ভাঙা সড়ক, তার ওপর আবার সড়ক কেটে পাইপ লাইন নেয়ায় জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। উপজেলার আলোচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্স মালিক মজিবুর রহমান খোকন এর আগে রাতের অন্ধকারে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলেও কোনো অলৌকিক ক্ষমতাবলে এখন দিনের বেলাতে চালাচ্ছেন অবৈধ এ লাইন নির্মাণ ও সংযোগ কাজ।
এ অবৈধ গ্যাস সংযোগের মহোৎসবের বিষয়ে আগেও বেশ কিছু পত্রিকায় ফলাও করে সংবাদ প্রচার হলেও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের।
কুমিল্লা করেসপন্ডেন্ট : আপডেট ৩:১৭ এএম, ২০ এপ্রিল ২০১৬, বুধবার
ডিএইচ