সারাদেশ

কুমিল্লায় গ্রেনেড বিস্ফোরণের শব্দে অর্ধশতাধিক ছাত্রী আহত

কুমিল্লায় গ্রেনেড বিস্ফোরণের বিকট শব্দে স্কুলের অর্ধশতাধিক ছাত্রী আহত হয়েছে। হয়। এদের মধ্যে গুরুতর আহত ২৯ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জেলার হোমনা উপজেলা সদরে এ ঘটনা ঘটেছে।

হোমনা থানা পুলিশের উদ্ধার করা ৭টি গ্রেনেড সেনাবাহিনীর বোমা বিশেষজ্ঞ দল নিস্ক্রীয় করার সময় বিকট শব্দে আশপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং এ দুর্ঘটনা ঘটে।

হোমনা থানা পুলিশ ও কফিল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সূত্র জানায়, গত বছরের ১২ জানুয়ারী হোমনা উপজেলার রামকৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণকালে মাটির নিচ থেকে সাতটি অব্যবহৃত তাজা গ্রেনেড উদ্ধার করে হোমনা থানা পুলিশ।

উদ্ধারকৃত এসব গ্রেনেড বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেনাবাহিনীর বোমা বিশেষজ্ঞ দল থানার পাশে তিতাস নদীর পাড়ে নিস্ক্রীয় করার সময় বিকট শব্দ হয়। এতে নদী পাড়ের প্রায় ৩শ’গজ দক্ষিণে অবস্থিত কফিল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনটি কেপে উঠে। এতে স্কুলের ছাত্রীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কিত শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষ থেকে দ্রুত বের হওয়ার চেষ্টা করে। হুড়োহুড়ি করে স্কুলভবন থেকে বের হওয়ার সময় কিছু ছাত্রী লাফিয়ে পড়ে আহত হয়, বিকট শব্দে অনেকে কানে সমস্যা দেখা দেয়।

এদের মধ্যে গুরুতর আহত ২৯ জনকে হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী রিমা আক্তার জানান, ‘ক্লাশ করার সময় হঠাৎ বিকট শব্দে আমাদের স্কুল ভবন কেপে উঠলে ভূমিকম্প হয়েছে মনে করে আমরা দ্রুত বের হতে গিয়ে লাফিয়ে পড়ে আহত হই। আমি এখনো কানে শুনতে পাচ্ছি না।’

স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুল মালেক জানান, দুপুরে ক্লাশ চলাকালে হঠাৎ বিকট শব্দে ভবন কেপে উঠলে ছাত্রীরা আতংকিত হয়ে রুম থেকে বের হওয়ার সময় অনেকেই আহত হয়েছে। এদের মধ্যে ২৯ জনকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
হোমনা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল ফয়সল জানান, গত বছর হোমনা থানার পাশে তিতাস নদীর তীরে বালির নিচ থেকে ৭টি গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়। গ্রেনেডগুলি নিস্ক্রীয় করার জন্যে নিয়ম অনুযায়ী কুমিল্লা সেনানীবাস থেকে দশজনের একটি বিশেষজ্ঞদল বুধবার সকালে হোমনা থানায় আসেন। বিশেষজ্ঞদলের নেতত্বে ছিলেন সেনা কর্মকর্তা মেজর মিশকাত বেগম তানিয়া।

বিশেষজ্ঞদল বেলা সাড়ে বারোটার দিকে গ্রেনড গুলো নিস্ক্রীয় করার সময় বিকট শব্দ হয়। এতে পার্শ্ববর্তী কফিল উদ্দিন স্কুলের ছাত্রীরা আতংকিত হয়ে কিছু ছাত্রী আহত হয়।

এধরনের গ্রেনড নিস্ক্রীয় করার আগে আসপাশে লোকজন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আগে থেকে শতর্ক করার প্রয়োজন ছিলো কি না এমন প্রশ্নে ওসি আবুল ফয়সল বলেন, আসলে কাউকে আহত করা আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো না। নিস্ক্রীয় করার সময় গ্রেনেডগুলি এতো শব্দ হবে এটা আমাদের ধারণার বাইরে ছিলো। তবে শব্দের চেয়ে ভূমিকম্প আতংকটাই ছাত্রীদের মাঝে বেশি কাজ করেছে বলে মনে হচ্ছে।

এ ব্যপারে কুমিল্লার পুলিশ সুপার শাহ মো. আবিদুর রহমান জানান, গ্রেনড গুলো বালিতে নিস্ক্রীয় করার জন্যে আমাদের পুলিশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছিলো। তবে, সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞদলের মতামতের ভিত্তিতে এগুলোকে পানিতে নিস্ক্রীয় করা হয়। এতে বিকট শব্দ হয়েছে, ফলে শিক্ষার্থীরা আতংকিত হয়ে পড়ে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. হাসান মিয়া জানান, গ্রেনেড বিস্ফোরণের শব্দে আতঙ্কিত হয়ে অনেক ছাত্রী আহত হয়েছেন।এদের মধ্যে ২৯ জন ছাত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী শহীদুল ইসলাম জানান, স্কুলের পাশে গ্রেনেড নিস্ক্রীয় সময় শব্দে আতংকিত হয়ে নামতে গিয়ে ছাত্রী আহত হয়েছেন এখবর শুনে হাসপাতালে দেখতে এসেছি।

খবর শুনে ছাত্রীদের অভিভাবক, হোমনা উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাড. আজিজুর রহমান মোল্লা, ইউএনও কাজী শহিদুল ইসলাম, পৌর মেয়র এ্যাড. নজরুল ইসলাম, স্কুল গভর্ণিং বডির সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জহিরুল হক, সদ্য সভাপতি মো আনোয়ার হোসেন বাবুল, থানা অফিসার ইনচার্জ আবুল ফয়সলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ছাত্রীদের দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান।

কুমিল্লা করেসপন্ডেন্ট : আপডেট ১১:৫৫ পিএম, ২৭ এপ্রিল  ২০১৬, বুধবার

ডিএইচ

Share