Home / সারাদেশ / কুমিল্লাসহ পুনঃনিরীক্ষণে ফেল থেকে জিপিএ-৫ পেল ৯৩১ শিক্ষার্থী
SSC Pass
ফাইল ছবি

কুমিল্লাসহ পুনঃনিরীক্ষণে ফেল থেকে জিপিএ-৫ পেল ৯৩১ শিক্ষার্থী

সারা দেশের ১০টি শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষারখাতা পুনঃনিরীক্ষণে এবারও সকল বোর্ডেই অসংখ্য ভুল ধরা পড়েছে। পুনঃনিরীক্ষণে পরিবর্তন হয়েছে অনেক পরীক্ষার্থীর ফল। এতে বেড়েছে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা। পাশাপাশি ফেল থেকে পাসের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ফেল থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীও রয়েছে।

১০টি শিক্ষাবোর্ডে ৪ হাজার ৮৯৭ জন শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৩১ জন, ফেল করার পর খাতা চ্যালেঞ্জ করে পাস করেছে ৭৪১ জন। বাকিদের বিভিন্ন গ্রেডে ফল পরিবর্তন হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ফল পরিবর্তন হয়েছে ঢাকা বোর্ডে।

চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার খাতা পুনঃনিরীক্ষণের আবেদনের পর বৃহস্পতিবার পৃথক পৃথকভাবে শিক্ষা বোর্ডগুলো নিজেদের ফল জানানো শুরু করেছেন। যেখানে ফলাফলের ব্যাপক পরিবর্তনের চিত্রই ধরা পড়েছে। শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিসে আলাদা আলাদাভাবে টেলিফোনে যোগাযোগ করে ফল পরিবর্তনের তথ্য পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও স্ব স্ব বোর্ডে গিয়ে নিজেদের ফল জানতে পারছেন।

কিন্তু কেন ফলাফলে বিশাল এই সংখ্যা পরিবর্তন? এই প্রশ্নের উত্তরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সকলেই বলছেন, দ্রুত ফল প্রকাশের কারণে তাড়াহুড়াই এই অবস্থার কারণ। মূলত তিন ধরনের ভুল ধরা পড়েছে। এক, কিছু খাতায় নম্বরের যোগ ফল ঠিক ছিল না। দুই, কিছু উত্তরের নম্বর যোগ করা হয়নি। আর তিন, ওএমআর ফরমে বৃত্ত ভরাটেও বেশ বিছু ভুল পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড: মোট ১৯৯০ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। এরমধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ১৯২জন, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৯৫ জন। বাকিরা বিভিন্ন গ্রেডে ফল পরিবর্তন হয়েছে।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড: মোট ৫২৯ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে এর মধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ৫১জন, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৮ জন।

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড: মোট ৪৭৩ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে এর মধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ৭২জন, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২০৬ জন।

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড: মোট ৪৪২ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে এর মধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ৮৮ জন, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮৮ জন।

সিলেট শিক্ষা বোর্ড: মোট ২৬০ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে এর মধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ৪১জন, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮০জন।

বরিশাল শিক্ষা বোর্ড: মোট ১৪০ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে এর মধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ১৭ জন, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১জন।

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড: মোট ৩১৬ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে এর মধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ৬৩জন, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৯জন।

যশোর শিক্ষা বোর্ড: মোট ২০৫ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে এর মধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ৭১ জন, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮৭ জন।

মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড: মোট ২৪৮ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে এর মধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ১০১ জন, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩২ জন। আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে মোট ২৯৪ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে এর মধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ৪৫ জন, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৫ জন।

যাদের ফলাফল পরিবর্তন হয়েছে তারা রেজাল্ট বাড়ার কারণে পুনরায় আবেদন করা দরকার নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক হারুন-অর-রশিদ বলেন, যাদের রেজাল্ট পরিবর্তন হয়েছে তাদের প্রাপ্ত ফল অনুযায়ী কলেজের ভর্তির মেধা তালিকা প্রকাশ করা হবে। তবে আগের রেজাল্টের কারণে কোন শিক্ষার্থী যদি কোন কলেজে আবেদন করতে না পারেন তিনি ইচ্ছে করলে নতুন রেজাল্ট দিয়ে নতুন করে আবেদন করতে পারবেন।

এজন্য ৫ ও ৬ই জুন আবেদন থেকে নতুন করে কোনো কলেজ যোগ করতে চাইলে সেটি করতে পারবে। বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, পুনঃনিরীক্ষণে সাধারণত মোট ৪টি দিক দেখা হয়। এগুলো হলো উত্তরপত্রে সব প্রশ্নের সঠিকভাবে নম্বর দেয়া হয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক রয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে উঠানো হয়েছে কী না, এবং প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটে বৃত্ত ভরাট ঠিক আছে কিনা।

এসব বিষয় পরীক্ষা করেই পুনঃনিরীক্ষার ফল দেয়া হয়েছে বলে বোর্ড কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তার মানে কোনো শিক্ষার্থীর খাতা পুনরায় মূল্যায়ণ হয় না। এতেই এত শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে।

এটি রীতিমত তুঘলগি কাণ্ড আখ্যায়িত করে শিক্ষাবিদরা বলছেন, বোর্ডের প্রশ্ন পদ্ধতি ও খাতা দেখার নানা ত্রুটির কারণে দিন দিন ফল চ্যালেঞ্জ করার সংখ্যা বাড়ছে। এতে প্রতি বছর জনগণের টাকা গচ্চা যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খাতা দেখায় শিক্ষকদের অনীহা, অবহেলা বাড়ার কারণে প্রতি বছর খাতা চ্যালেঞ্জ করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় খাতা চ্যালেঞ্জ করার পরিমাণ বাড়লেও এবার ফল পরিবর্তনের সংখ্যা কমেছে। এবার মডেল পদ্ধতিতে খাতা দেখায় ভুলের পরিমাণ কমেছে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মু. জিয়াউল হক বলেন, পরীক্ষকদের মধ্যে খাতা দেখার আগ্রহ ও পদ্ধতি দুটি পরিবর্তন হয়েছে। গত দুই বছর ধরে মডেল পদ্ধতিতে খাতা দেখা এবং পরীক্ষকদের খাতা প্রধান পরীক্ষকরা পুনরায় দেখার বাধ্যবাধকতার কারণে খাতায় ভুলের পরিমাণ কমেছে।

তিনি বলেন, খাতায় যে চারটি ভুলের কারণে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতো এবার সেই জায়গায় হাত দেয়া হয়েছে। আস্তে আস্তে খাতা দেখায় শৃঙ্খলা ফিরবে বলে মনে করেন তিনি। বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইটে এসএসসি ও সমমানের পুনঃনিরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে।

Leave a Reply