Home / জাতীয় / কুমিল্লার জুম্মনের আবিষ্কার : দুর্বৃত্ত সহজেই ধরা পড়বে
কুমিল্লার জুম্মনের আবিষ্কার : দুর্বৃত্ত সহজেই ধরা পড়বে

কুমিল্লার জুম্মনের আবিষ্কার : দুর্বৃত্ত সহজেই ধরা পড়বে

কুমিল্লায় কাজী এমরান হোসেন জুম্মন নামের এক যুবক চারটি ডিভাইসের মাধ্যমে ছয় ধরনের সিকিউরিটি সিস্টেম আবিষ্কারের মাধ্যমে সবাইকে চমকে দিয়েছেন। পেশায় ইলেক্ট্রিশিয়ান ও লেখাপড়ায় এসএসসির গণ্ডি না পেরুলেও তার এ গবেষণার পরিধি এবং এ ধরনের সিকিউরিটি সিস্টেম আবিষ্কার বাংলাদেশে এই প্রথম বলে তিনি দাবি করেন।

এ আবিষ্কারের পেছনে টানা দুই বছর দিন-রাত অবিরাম পরিশ্রম করে তিনি সফল হন। গত অক্টোবরের শেষ নাগাদ তিনি আবিষ্কার করেছেন বহুতল আবাসিক/বাণিজ্যিক ভবন-শিল্পকারখানা ও যেকোনো প্রতিষ্ঠানে ফায়ার সার্ভিস, ফ্ল্যাট সিকিউরিটি, ব্যাংক সিকিউরিটি সিস্টেম। জুম্মন তার এই আবিষ্কারের নাম দিয়েছেন ‘জি.এম (জুম্মন-মারিয়া) হাইভোল্টেজ সিকিউরিটি সিস্টেম’।

জানা যায়, কাজী এমরান হোসেন জুম্মনের বাড়ি কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার চাঁপাপুর গ্রামে।তিনি ওই গ্রামের কাজী ফরিদ উদ্দিনের ছেলে। জুম্মন বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. (বিজিডিসিএল) কুমিল্লার কার্যালয়ে মাস্টার রুলে ইলেক্ট্রিশিয়ান পদে চাকরি করতেন।

দেশব্যাপী আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পর কীভাবে বহুতল বিশিষ্ট ভবন-ফ্ল্যাট বা অভিজাত মার্কেট, ব্যাংক, স্বর্ণ দোকান, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান-কারখানা ও বাসা-বাড়িতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায় এ নিয়ে তার ভাবনা এবং কাজ শুরু হয়। এতে তিনি সফলও হন।

জুম্মন জানান, বহুতল বিশিষ্ট ভবনে অনেক আবাসিক ও বাণিজ্যিক ফ্ল্যাট থাকে। এসব ফ্ল্যাটের কোনটিতে চুরি-ডাকাতি-দস্যুতা বা খুনের মতো ঘটনা ঘটলেও পাশের ফ্ল্যাটের কেউ খবর পান না বা খবর রাখেন না। যেমনটি ঘটেছে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনীর বেলায়। তার আবিষ্কৃত এই হাইভোল্টেজ সিকিউরিটি পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে এ ধরনের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ ছাড়াও ব্যাংক, ফ্ল্যাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যেকোনো দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সহজে নিশ্চিত করা সম্ভব।

দুর্ঘটনা আঁচ করার সঙ্গে সঙ্গে সুইচ টিপে মুহূর্তে থানা, ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে অঘটনের বার্তা পৌঁছে দেয়ার জন্য এসএমএস ও উচ্চ শব্দের অ্যালার্ম বেজে যাওয়ার পদ্ধতি আবিষ্কার করা হয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বন্ধ করা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যালার্ম বাজতে থাকবে। একইসঙ্গে সিসি ক্যামেরায় দুর্ঘটনার দৃশ্য ধারণসহ ভবন বা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ ও বের হওয়ার ফটক স্বয়ংক্রিয়ভাবে লক হয়ে যাবে, যা পরে প্রয়োজনীয় সময়ে পাঞ্চ কার্ড বা পাসওয়ার্ড ব্যবহারে খোলা যাবে। তাতে যেকোনো দুর্ঘটনা প্রতিরোধসহ অপরাধী ধরতে বা ফ্ল্যাটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ আবিষ্কার অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে তিনি জানান।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে বা যেকোনোভাবে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়ে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এক্ষেত্রে তার আবিষ্কৃত সিকিউরিটি সিস্টেম ব্যবহার করে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধসহ সম্পদ রক্ষা করা যাবে।

তিনি জানান, ভবনের নিচতলায় একটি কন্ট্রোল রুম থেকে পুরো ভবনের সবগুলো ফ্ল্যাটের সব ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধের পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ভবনে যতগুলো ফ্ল্যাট থাকুক না কেন দুর্ঘটনা কবলিত ফ্ল্যাট ছাড়া অন্য কোনো ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাশ লাইট জ্বলবে না, অ্যালার্মও বাজবে না, এভাবে সংশ্লিষ্ট ফ্ল্যাটটি শনাক্ত করা একেবারে সহজ হয়ে যাবে এবং দুর্বৃত্ত পালাবার পথ পাবে না।

জুম্মন জানান, সুড়ঙ্গ পথ তৈরি করে রাতে বা দিনের বেলায় দুর্বৃত্তরা হানা দিয়ে ব্যাংকের টাকা লুটে নেয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। এ পদ্ধতি ব্যবহারে ব্যাংকের লকারে রক্ষিত টাকা নিরাপদ রাখা সম্ভব। কোনো দুর্বৃত্তের শরীরের রক্তের তাপ পেলে বা লকার স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে সিসি ক্যামেরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে দৃশ্য রেকর্ড হতে থাকবে এবং বার্তা চলে যাবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ, থানা বা পুলিশ ফাঁড়িতে এবং অতিকম সময়ে দুর্বৃত্তকে ধরা যাবে। এছাড়া সড়ক বাতির আলো এবং বাড়িতে পানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে আবিষ্কার করা হয়েছে সিকিউরিটি ডিভাইস।

আগুনে ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে একইভাবে রক্ষা করা যাবে বিভিন্ন কল-কারখানাও। আর এজন্য তিনি সরবরাহ করবেন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ও দীর্ঘস্থায়ী লক, স্পেশাল সিকিউরিটি ডোর (দরজা), অ্যালার্ম সিস্টেম মেশিন, টাচ মেশিন, আইপিএস, সিসি ক্যামেরা, পাঞ্চ মেশিন, স্বয়ংক্রিয় বিভিন্ন ডিভাইস ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ বা মেশিনারিজ। এসব আবিষ্কার কোনো সিনেমা বা মাসুদ রানার গোয়েন্দা সিরিজের কোনো গল্প নয়, একেবারে বাস্তব বলে দাবি করেন জুম্মন।

৩০ বছর বয়সী কাজী এমরান হোসেন জুম্মন তার আবিষ্কৃত চারটি ডিভাইসের মাধ্যমে ৬ ধরনের সিকিউরিটি সিস্টেমের বর্ণনা এভাবেই তুলে ধরেন। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া জানা জুম্মন টানা দুই বছর চেষ্টা চালিয়ে গত অক্টোবরে তার এসব আবিষ্কার সম্পন্ন করলেও তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি।

জুম্মন তার এসব আবিষ্কারের বিষয় তুলে ধরে আরও জানান, পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তার এ চমকপ্রদ আবিষ্কার জনকল্যাণে বাজারজাত করা যেত এবং এজন্য তিনি সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা কামনা করেছেন।

নিউজ ডেস্ক ||আপডেট: ০৪:২২ পিএম, ১৬ নভেম্বর ২০১৫, সোমবার

এমআরআর