কুমিল্লায় গোমতীর চরে আলু তোলার ধুম

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় গোমতী নদীর চর ও আশপাশের পতিত জমিতে আলু তোলার ধুম পড়েছে। কিষান-কিষানিরা এখন আলু তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আলু বীজ বপণের শুরুর দিকে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলেও এ বছর আলুর ফলন ভালো হওয়ায় খুশি তারা। তবে ন্যায্য দাম পাবে কি না এ নিয়ে শঙ্কায় তারা। এদিকে ব্যাপারীরাও দাঁড়িপাল্লা ও বস্তা নিয়ে ঘোরাঘুরি করছেন ক্ষেত থেকেই আলু কিনতে। দরদামে বনে গেলেই তারা কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করবেন নতুন আলু। উপজলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, গত মৌসুমে এই উপজেলায় ১০৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল। এবার গত বছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ১১৫ হেক্টর জমিতে আলুর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। তবে এ বছর আলু চাষ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে আলু চাষ হলেও মালাপাড়া ইউনিয়নের গোমতী নদীর চর ও এর আশপাশের পতিত জমিতে সবচেয়ে বেশি আলু আবাদ করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজলার মালাপাড়া ইউনিয়নের গোমতী নদীসংলগ্ন পতিত জমি ও চরে কিষান-কিষানিরা জমি থেকে আলু তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আলু তুলে জমির এক জায়গায় এসব আলু জমা করছেন। আলুর ভালো ফলনে খুশি তারা। এ সময় তাদের কথা বলার ফুরসত নেই যেন।

তারা জানান, এ বছর তারা বিভিন্ন জাতের উচ্চফলনশীল আলু চাষ করেছেন। বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগেই আলু সংগ্রহ করতে পরিবারের সবাই মিলে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এদিকে বস্তা ও দাঁড়িপাল্লা নিয়ে জমি জমি ঘুরছেন পাইকাররাও।

কথা হয় গোমতী নদীর পাড় সংলগ্ন মনোহরপুর এলাকার আলুচাষি মহসিন সরকারের সঙ্গে। তিনি কালবেলাকে বলেন, এ বছর আমি গোমতীর চর ও এর পাশের মোট ৪৩ শতক জমিতে ডায়মন্ড জাতের আলুর আবাদ করেছি। এ বছর আলুর ফলন ভালো হয়েছে। জমি থেকে আলু তোলার কাজে শ্রমিক লাগিয়েছি, আমি নিজেও তাদের সঙ্গে কাজ করছি। আলু তাড়াতাড়ি না তুললে যদি বৃষ্টি হয় তাহলে শ্রম আরও বেড়ে যাবে। তবে আলুর ফলন ভালো হলেও কাঙ্ক্ষিত দাম পাব কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আমাদের মতো কৃষকরা সবসময়ই ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হই।

একই এলাকার আরেক আলুচাষি মুরাদ হোসেন বলেন, ‘আলু বীজ বপনের শুরুতে আবহাওয়া অনুকূলে ছিল না। তবু এ বছর আলুর ফলন তুলনামূলক ভালো হয়েছে। এখন আমরা জমিতে উৎপাদিত আলু ঘরে তুলতে পরিবারের সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করছি। এসব আলু এখনই বিক্রি করব না। পাইকারি বাজারে আলুর দাম আরও বাড়লে তারপর বিক্রি করব।’

মালাপাড়া এলাকার আলু চাষি গিয়াসউদ্দিন বলেন, আলু সংগ্রহে এখন আমরা জমিতে ব্যস্ত সময় পার করছি। এবার আলুর ফলন ভালো হয়েছে। আলু চাষে যা ব্যয় হয়েছে যদি সঠিক দাম পাই তবে লাভবান হব। ক্ষেত থেকে যারা আলু বিক্রি করছেন তারা দাম কিছুটা ভালো পাচ্ছেন। আবার অনেকেই এখন বিক্রি না করে এসব আলু ঘরে তুলে দাম আরও বাড়লে তারপর বিক্রি করেন, এতে অবশ্য অনেক সময় লোকসানও গুনতে হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাসুদ রানা বলেন, এই উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১২০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলুর চাষ হয়েছে। আলু গাছে এ বছর রোগবালাই কম হওয়ায় ফলন ভালো হয়েছে। অনেক জমিতে কৃষক ইতিমধ্যে আলু তুলতে শুরু করে দিয়েছেন। আশা করছি কৃষকরা আলুর আশানুরূপ মূল্য পাবে।

চাঁদপুর টাইমস ডেস্ক/ ২৪ মার্চ ২০২৪

Share